ঢাকা, সোমবার, ৮ পৌষ ১৪৩১, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

রাজনীতি

দলের অস্তিত্ব ফিরিয়ে আনতে দিবস ভিত্তিক কর্মসূচির চিন্তা আওয়ামী লীগের

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭০৫ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৬, ২০২৪
দলের অস্তিত্ব ফিরিয়ে আনতে দিবস ভিত্তিক কর্মসূচির চিন্তা আওয়ামী লীগের

ঢাকা: আগামীতেও দিবস ভিত্তিক আরও কিছু কর্মসূচি দিয়ে দলের অস্তিত্ব ফিরিয়ে আনতে চায় আওয়ামী লীগ। ভবিষ্যতে দলকে দৃশ্যমান রাজনৈতিক শক্তি হিসেবে অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে এই মুহূর্তে এর কোনো বিকল্প দেখছে না দলটি।

গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত হয় আওয়ামী লীগ। দলের সভাপতি শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করে ওই দিনই দেশ ছাড়েন। বর্তমানে তিনি ভারতে অবস্থান করছেন। শেখ হাসিনা দেশ ছাড়ার সঙ্গে সঙ্গে আওয়ামী লীগের সব পর্যায়ের নেতাকর্মীরা আত্মগোপনে চলে যান। এর মধ্যে শীর্ষ পর্যায়ের নেতাদের কেউ কেউ দেশ ছেড়েছেন।

এ ছাড়া বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীদের মধ্যেও অনেকে দেশের বাইরে চলে গেছেন। দলের শীর্ষ পর্যায়ের নেতা, সাবেক মন্ত্রী ও এমপিদের অনেকেই গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে। কর্মী পর্যায়েও অনেকে গ্রেপ্তার হয়েছেন। গত ৫ আগস্টের পর দুই-একটি জায়গায় দুই-একটি মিছিল ছাড়া কোথাও রাজনৈতিকভাবে আওয়ামী লীগের অস্তিত্ব দেখা যায়নি। এখন পর্যন্ত সেই পরিস্থিতি অব্যাহত রয়েছে।

আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীর সঙ্গে যোগাযোগ ও খোঁজ নিয়ে জানা যায়, এখনও আত্মগোপনেই রয়েছেন আওয়ামী লীগের প্রায় সব নেতাকর্মী। এই অবস্থায় আর কত দিন থাকতে হবে, তা এখনও তারা বুঝে উঠতে পারছেন না। সহসা পরিস্থিতি অনুকূলে আসবে, এমনটা তারা ভাবতে পারছেন না বলে দলটির কয়েকজন নেতাকর্মীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়।

আওয়ামী লীগের নেতারা বলছেন, দলের নেতাকর্মীদের বাধ্য হয়ে আত্মগোপনে যেতে হয়েছে। গত ৫ আগস্টের পর নেতাকর্মীদের ওপর যেভাবে হামলা হয়েছে, বাড়িঘর ভাঙচুর, আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়েছে, ওই অবস্থায় পালিয়ে না থাকলে অনেকেরই জীবন রক্ষা হতো না। জীবন বাঁচাতে পালিয়ে থাকা ছাড়া বিকল্প কোনো পথও ছিল না। এভাবেই বিপর্যস্ত পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে দলের নেতাকর্মীরা ১০০ দিন পার করেছেন।  

আওয়ামী লীগের নেতারা জানান, এখনও পরিস্থিতি ওই অবস্থায়ই রয়েছে। হামলা, ভাঙচুরের ঘটনা এখনও ঘটছে। রয়েছে গ্রেপ্তারের ঝুঁকি, অধিকাংশের নামেই একাধিক মামলা হয়েছে। শুধু তাই নয়, এখন পর্যন্ত জীবনের ঝুঁকিও রয়ে গেছে। বিভিন্ন দলের পক্ষ থেকে নির্বাচনের দাবি সামনে নিয়ে আসা হলেও এই মুহূর্তে আওয়ামী লীগ এ ধরনের কিছু ভাবছে না। বিপর্যস্ত দল নিয়ে নির্বাচনে যাওয়ার পরিস্থিতি নেই। সংগত কারণেই সহসাই নির্বাচনের কথা ভাববে না দলটি। তবে দিবস ভিত্তিক কিছু কর্মসূচির মাধ্যমে দলকে সচল করা ও নেতাকর্মীদের মনোবল ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করা হবে বলে আওয়ামী লীগের একাধিক সূত্র থেকে জানা গেছে।

আওয়ামী লীগের কয়েকজন নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এখনও অধিকাংশ নেতাকর্মীর নিজেদের মধ্যে যোগাযোগ তৈরি হয়নি। নেতাকর্মীদের কে কোথায়, কীভাবে আছেন তাও অনেকেই জানেন না। তবে বিদেশে থাকা কিছু নেতা সেখান থেকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেশে আত্মগোপনে থাকা দলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীর সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করছেন। অনেকের সঙ্গেই তারা কথা বলছেন, খোঁজখবর নিচ্ছেন। দলের সভাপতি শেখ হাসিনাও কারো কারো সঙ্গে মাঝে মধ্যে কথা বলছেন বলেও ওই নেতারা জানান।

দেশে পালিয়ে থাকা কর্মীদের সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ বা কথা বলার ক্ষেত্রেও ঝুঁকি রয়েছে বলে জানিয়েছেন নেতাকর্মীরা। যাদের সঙ্গে নেতারা বিদেশ থেকে কথা বলবেন সেই কলরেকর্ড ফাঁস হওয়ার পর ওই নেতাকর্মীরা যাতে বিপদে না পড়ে সে বিষয়টিও বিবেচনায় নেওয়া হচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে দলের অফিসিয়াল ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজ, হোয়াটসঅ্যাপ, এক্স (টুইটার), ইমেইলের মাধ্যমে যোগাযোগকে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। এই মাধ্যমগুলোয় দেওয়া নির্দেশনাকে নেতাকর্মীদের ফলো করা এবং এর মাধ্যমে নিয়মিত যোগাযোগ তৈরি করতে বলা হচ্ছে।

এদিকে গত ১০ নভেম্বর নূর হোসেন দিবস উপলক্ষে গুলিস্তানের জিরো পয়েন্টে দলের নেতাকর্মীদের সমবেত হওয়ার ডাক দেয় আওয়ামী লীগ। গত ৫ আগস্ট ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর দলের পক্ষ থেকে এটা ছিল দ্বিতীয় আহ্বান। এর আগে গত ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুর প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে ঢাকায় ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধু ভবনে আসার আহ্বান জানানো হয়েছিল। তখন কিছু কর্মী ৩২ নম্বরে যাওয়ার চেষ্টা করে বাধা ও হামলার শিকার হন। দীর্ঘদিন পর আবার নূর হোসেন দিবসে সমবেত হওয়ার আহ্বান জানানো হয়।
  
আওয়ামী লীগের সূত্রগুলো জানায়, সহসা ঘুরে দাঁড়াতে পারবে বা রাজনৈতিকভাবে সক্রিয় অবস্থানে যেতে পারবে, এই মুহূর্তে এমনটা তারা মনে করছে না। এর বড় কারণ হিসেবে দেখা হচ্ছে কর্মসূচিতে বাধা আসা। তাছাড়া কর্মীদের মনোবলও ভেঙে গেছে। এই প্রেক্ষাপটে পরিস্থিতি বোঝার জন্যই ১০ নভেম্বরের এ আহ্বান জানানো হয়েছিল। এ আহ্বানে নেতাকর্মীদের ভেতর থেকে তেমন কোনো সাড়া আসেনি।  

তবে এটাকে নেতিবাচক হিসেবে দেখছে না আওয়ামী লীগ। কারণ হিসেবে নেতারা বলছেন, নূর হোসেনের প্রতি শ্রদ্ধা জানানোর জন্য এ আহ্বান জানানো হলেও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের ঠেকাতে সরকারের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাবাহিনীর আগে থেকেই ব্যাপক প্রস্তুতি ছিল। জিরো পয়েন্টে বৈষম্যবিরোধী ছাত্ররা অবস্থান নেন। বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের কার্যালয়ের সামনে বিএনপির কর্মীরা অবস্থান নিয়ে সারা দিন মিছিল সমাবেশ করেন। সেখানে বিভিন্ন সময় আওয়ামী লীগের কিছু কর্মী আসার চেষ্টা করলে তাদের ওপর হামলা হয় এবং মারধর করে পুলিশে দেওয়া হয়। এ ছাড়া বিচ্ছিন্নভাবে দুই-একটি জায়গায় আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের কিছু কর্মী মিছিল করে জিরো পয়েন্টে আসার চেষ্টা করে বাধার মুখোমুখি হয়েছেন। এই অবস্থায় কর্মীদের কাছ বেশি কিছু প্রত্যাশা ছিল না। তবে এর ভেতর দিয়ে মাঠের পরিস্থিতি সম্পর্কে নেতাদের একটা ধারণা তৈরি হয়েছে বলে ওই সূত্রগুলো জানায়।

আওয়ামী লীগের ওই সূত্রগুলো আরও জানায়, আগামীতেও বিভিন্ন দিবসে এ ধরনের কর্মসূচির কথা চিন্তা ভাবনা করা হয়েছে। তবে সেটা হবে শান্তিপূর্ণ, কোনো ধরনের সংঘাতের নয়। এ ধরনের কর্মসূচির মূল উদ্দেশ্য হবে দলের সব পর্যায়ের নেতাকর্মীদের মনোবল চাঙা করা। দলের অস্তিত্ব ফিরিয়ে আনতে এর মধ্য দিয়ে দলকে সক্রিয় করার চেষ্টা করা।

বাংলাদেশ সময়: ১৯০৫ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৬, ২০২৪
এসকে/এমএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।