ঢাকা, মঙ্গলবার, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

রাজনীতি

এরশাদকে জবাব দেবেন রওশন

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০০২৫ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৫, ২০১৬
এরশাদকে জবাব দেবেন রওশন হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ ও রওশন এরশাদ

ঢাকা: কয়েক দিনের বিরতি দিয়ে আবারো নাটকীয়তা শুরু হয়েছে জাতীয় পার্টিতে (জাপা)। দলের চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ ও সংসদে বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদের মধ্যে সমঝোতার কথা শোনা গেলেও, ফের দু’জন পরস্পর বিপরীতে চলতে শুরু করেছেন।



রোববার (২৪ জানুয়ারি) দুপুরে রওশনকে চিঠিতে এরশাদ বলেছেন, জিএম কাদেরকে জাপার কো-চেয়ারম্যান করার সিদ্ধান্ত বদল হবে না।

এদিকে, বিকেলে জাতীয় সংসদে বিরোধীদলীয় নেতার কার্যালয়ে জাপার সংসদীয় দলের সভায় সিদ্ধান্ত হয়, এরশাদের চিঠির জবাব দেবেন রওশন। জাপায় এরশাদের স্বেচ্ছাচারিতা চলবে না। মন্ত্রিসভাও ছাড়বে না জাপা।

গত ১৭ জানুয়ারি থেকে জাপায় চলছে একের পর এক নাটক। গত শনিবার রওশন এক বিবৃতিতে এরশাদের প্রতি কো-চেয়ারম্যান নিয়োগ ও মহাসচিব পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার অনুরোধ জানান। ২৪ ঘণ্টা পার না হতেই এরশাদ চিঠি দিয়ে বিরোধীদলীয় নেতাকে জানান, সিদ্ধান্ত পরিবর্তনের কোনো সুযোগ নেই।

এর পরপরই রোববার দুই দফায় বৈঠক করে জাপার সংসদীয় দল। তবে এ সময় সংসদে থাকলেও রওশনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত বৈঠকে যোগ দেননি এরশাদ।

জাপার সংসদীয় দলের বৈঠকের পর রওশনের রাজনৈতিক সচিব ফখরুল ইমাম সাংবাদিকদের জানান, জাপা চেয়ারম্যানের চিঠি এখনও হাতে পাননি বিরোধীদলীয় নেতা। চিঠি পড়ার পর জবাব দেবেন।

এদিকে, জাপার চেয়ারম্যান এরশাদ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে দেখা করতে পারেন এমন গুঞ্জন শোনা গেলেও তাদের দেখা হয়নি।
 
গত ১৭ জানুয়ারি ছোট ভাই জিএম কাদেরকে দলের কো-চেয়ারম্যান ঘোষণা করেন এরশাদ।   তিনি ঘোষণা দেন, তার অবর্তমানে কাদেরই হবেন দলের নেতা। দলে রওশনপন্থিরা এ সিদ্ধান্তে  নারাজ জন। পরদিন রওশনকে জাপার ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ঘোষণা করেন তারা। ১৯ জানুয়ারি জাপার সংসদীয় দল এরশাদের সিদ্ধান্ত প্রত্যাখ্যান করে।

ক্ষুব্ধ এরশাদ ওইদিনই বনানীতে তার রাজনৈতিক কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে মহাসচিব পদ থেকে জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলুকে অব্যাহতি দিয়ে এবিএম রুহুল আমীন হাওলাদারকে ওই পদে ফিরিয়ে আনার ঘোষণা দেন।
 
অপরদিকে, জিএম কাদেরকে কো-চেয়ারম্যান করার বিরোধিতা করলেও গত শনিবার রওশন জানান, তিনি জাপার ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান নন। তবে তিনি জিএম কাদেরের নিয়োগ বাতিল চান।

দলীয় সূত্র জানিয়েছে, দলে রওশন-কাদের বিরোধ অনেক পুরানো। তাদের মধ্যে দেবর-ভাবীর সম্পর্ক রাজনীতিতে আসার পর থেকেই তিক্ত।
 
সূত্র জানিয়েছে, এরশাদ তার স্ত্রীকে ‘প্রিয় সহকর্মী’ সম্বোধন করে চিঠি পাঠান। এতে লেখেন, সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করতে না পারায় তিনি দুঃখিত। গঠনতান্ত্রিকভাবেই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।  

রওশনের উদ্দেশে এরশাদ লেখেন, একজন শীর্ষ নেতা এবং সিনিয়র প্রেসিডিয়াম সদস্য হিসেবে পার্টির চেয়ারম্যানের কাছে যেকোনো বিষয়ে বিবেচনার অনুরোধ জানাতে পারেন। তবে পার্টির স্বার্থে আপনার অনুরোধ বিবেচনা করতে না পারায় আমি দুঃখিত। তিনি রওশনকে পরিস্থিতি অনুধাবনের অনুরোধ করেন।

চিঠিতে জাপার সংসদীয় দলের অনধিকার চর্চায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন এরশাদ। তিনি বলেন, সংসদীয় দল জাপার নীতি-নির্ধারণী ফোরাম নয়। একমাত্র প্রেসিডিয়াম সভার দলের নীতি-নির্ধারণের এখতিয়ার রয়েছে।
 
যেসব এমপি প্রেসিডিয়ামেরও সদস্য তাদের ভূমিকার সমালোচনা করে চিঠিতে এরশাদ বলেন,  যে কয়জন প্রেসিডিয়াম সদস্য ৩৯ ধারা নিয়ে বিতর্ক করছেন তারাও ৩৯ ধারায় প্রেসিডিয়াম সদস্য হয়েছেন।
 
মহাসচিব পরিবর্তনের সিদ্ধান্তও পুনর্বিবেচনা করা সম্ভব নয় বলে রওশনকে জানিয়েছেন এরশাদ। তিনি বলেন, জিয়াউদ্দিন বাবলুকে শৃঙ্খলা ভঙ্গের দায়ে মহাসচিবের দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।   তিনি দলকে বিভক্ত করার ঘৃণ্য ষড়যন্ত্রে লিপ্ত ছিলেন।

জাপার ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান নিয়ে বিভ্রান্তি দূর করায় রওশনকে চিঠিতে ধন্যবাদ জানান এরশাদ। তিনি জানান,  জিএম কাদেরকে কো-চেয়ারম্যান করতে রওশনের সম্মতি ছিল। যদিও রওশনপন্থিদের দাবি, এরশাদ একক সিদ্ধান্তেই জিএম কাদেরকে কো-চেয়ারম্যান করেছেন।

চিঠির সত্যতা স্বীকার করে এরশাদের প্রেস সচিব সুনীল শুভরায় বাংলানিউজকে জানান, জাপা চেয়ারম্যানের চিঠি বিরোধীদলীয় নেতার গুলশানের বাসভবনের ঠিকানায় পাঠানো হয়েছে।
 
রোববারের সংসদীয় দলের সভা শেষে জাপার একাধিক সংসদ সদস্য জানান, রওশনের অবস্থানকে সমর্থন করেছেন বৈঠকে উপস্থিত জাপার সংসদ সদস্যরা।

তারা জানান, ভবিষ্যতে দলে কোনো সিদ্ধান্ত নিতে হলে এরশাদকে সংসদীয় দল ও প্রেসিডিয়ামের সঙ্গে আলোচনা করতে হবে।

বিরোধী দলের চিফ হুইপ তাজুল ইসলাম চৌধুরী জানান, বৈঠকে রাষ্ট্রপতির ভাষণের ওপর জাপার এমপিরা কে কতক্ষণ বক্তব্য দেবেন তা নিয়েও আলোচনা হয়েছে। দলে চলমান অস্থিরতা নিয়েও আলোচনাও হয়েছে।
 
এদিকে, জিএম কাদের রোববার এক দলীয় অনুষ্ঠানে বলেছেন, সত্যিকারের বিরোধী দল হতে হলে জাপাকে সরকার ছাড়তে হবে।

এ বক্তব্যের  পরিপ্রেক্ষিতে সংসদীয় দলের সভায় পানি সম্পদমন্ত্রী আনিসুল ইসলাম মাহমুদ বলেন, সরকার ছাড়লেই জাপা বিরোধী দল হয়ে যাবে না, বরং দলের ক্ষতি হবে।

সভায় উপস্থিত এমপিরা আনিসুল ইসলামের এই বক্তব্য সমর্থন করেন। রওশন কো-চেয়ারম্যান হবেন কী না তা নিয়েও আলোচনা হয়।
 
তবে জিএম কাদেরের সঙ্গে যৌথভাবে কো-চেয়ারম্যান হতে রাজি নন রওশন। দলের এমপিরা রওশনের এই অবস্থানকে সমর্থন করেছেন।
 
অপরদিকে, এরশাদপন্থি হিসেবে পরিচিত রহুল আমীন হাওলাদার, জিয়াউল হক মৃধা, নাসরিন হাওলাদার, সালমা ইসলামসহ আরো কয়েক এমপি সংসদে থাকলেও দলের বৈঠকে যোগ দেননি।
 
সংসদীয় দলের বৈঠকের বিষয়ে রুহুল আমীন হাওলাদার বলেন, সংসদীয় দলের সভার বিষয়ে তিনি কিছু জানেন না। দলের চেয়ারম্যান যে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, তা সবাইকে মানতে হবে।
 
বাংলাদেশ সময়: ০০২৫ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৫, ২০১৬
এসএম/এসআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।