ঢাকা: প্রথমবারের মতো দলীয় প্রতীকে হতে যাওয়া ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনে অংশ নেওয়ার ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএনপি। ৬টি ধাপে ৪ হাজার ২৭৯ ইউনিয়নে এ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।
শুক্রবার (১২ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে এক সংবাদ সম্মেলনে দলটির যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির আহমেদ রিজভী এ সিদ্ধান্তের কথা জানান।
তিনি বলেন, ভয়াবহ দমন-পীড়ন ও ভোটারদের ভোট দেওয়ার অধিকার কেড়ে নেওয়ার সম্ভাবনা থাকলেও সেই ক্ষুদ্র পরিসর সম্প্রসারিত করার আন্দোলন হিসেবে বিএনপি আসন্ন ইউপি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে।
এর আগে শুক্রবার পৃথক দুটি অনুষ্ঠানে বিএনপির দু’জন শীর্ষ নেতা ইউপি নির্বাচনে যাওয়ার ইঙ্গিত দেওয়ার পর দলের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে এ ধরনের ঘোষণা এলো।
মোট ছয় ধাপে ৪ হাজার ২৭৯ ইউনিয়নে স্থানীয় সরকারের এ নির্বাচনের আয়োজন হবে এবার। প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী রকিবউদ্দীন আহমদ নেতৃত্বাধীন নির্বাচন কমিশন বৃহস্পতিবার এই ছয়টি ধাপের ভোটের তারিখ চূড়ান্ত করে স্থানীয় রিটার্নিং কর্মকর্তাদের বিস্তারিত তফসিল ঘোষণার দায়িত্ব দিয়েছে।
প্রথম ধাপে ৭৫২ ইউপির ভোট হবে ২২ মার্চ। এরপর ৩১ মার্চ ৭১০টি ইউপি, ২৩ এপ্রিল ৭১১টি ইউপি, ৭ মে ৭২৮টি ইউপি, ২৮ মে ৭১৪টি ইউপি এবং ৪ জুন ৬৬০টি ইউপিতে ভোট হবে।
রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে ওই সংবাদ সম্মেলনে রুহুল কবির রিজভী ইউপি নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী কারা চূড়ান্ত করবেন তারও ব্যাখ্যা দেন।
‘বিএনপি সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে যে, ইউপি নির্বাচনে দলের পক্ষ থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার জন্য চেয়ারম্যান মনোনয়নের ক্ষেত্রে ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক ও সাংগঠনিক সম্পাদক এবং উপজেলা বিএনপির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক এই মোট পাঁচজন একজন চেয়ারম্যান প্রার্থীর নাম অনুমোদন করার জন্য সুপারিশ করবেন। ’
তবে ইউপি নির্বাচনকে বিএনপির প্রার্থী অনুমোদন দেবেন তা চূড়ান্ত হয়নি জানিয়ে রিজভী বলেন, ‘কমিশন থেকে চিঠি পেয়েছি। চিঠির যে ভাষা তাতে পৌরসভায় যেমন নিয়ম নির্ধারণ করা হয়েছিলো, অনেকটা তাই। এ নিয়ে দলের সিনিয়র নেতাদের সঙ্গে আলোচনা করে তারপর জানাবো। ’
‘চিঠিটি আরেকটু বিশ্লেষণ করে দলের পক্ষে যে অনুমোদনকারী হবেন তিনিই প্রার্থীতা অনুমোদন দেবেন। এক্ষেত্রে চেয়ারপারসন অথবা চেয়ারপারসনের পক্ষে কেউ একজন অথরাইজড পারসন হবেন। ’
বিএনপির ষষ্ঠ কাউন্সিল বাধাগ্রস্থ করতে এর পরের দিন পৌরসভা এবং দু’দিন পর ইউপি নির্বাচনের তারিখ স্থির করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেন রিজভী।
তিনি বলেন, ‘একটি বৃহত্তম রাজনৈতিক দলের জাতীয় কাউন্সিল অনুষ্ঠিত করা এক ব্যাপক কর্মযজ্ঞের বিষয়। নির্বাচন পরিচালনাও এক ব্যাপক কর্মকাণ্ড। উভয় বিষয়ে দলের নেতাকর্মীরা ব্যাপকভাবে ব্যস্ত থাকেন। কিন্তু ২০ মার্চ ১০ পৌরসভায় ও ২২ মার্চ ৭৫২ ইউপি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।
‘বিএনপির কাউন্সিলের পরপরই হীন রাজনৈতিক উদ্দেশ্য প্রণোদিত এই নির্বাচনের তারিখ চূড়ান্ত করা হয়েছে। বিএনপির জাতীয় কাউন্সিলকে জনমনে বিভ্রান্ত করার জন্যই অশুভ উদ্দেশ্য নিয়েই নির্বাচন কমিশন তফসিল ঘোষণা করেছে। ’
বাংলাদেশের সামাজিক প্রেক্ষাপটে দলীয় প্রতীকে যেকোন স্থানীয় সরকার নির্বাচন তৃণমুলে সামাজিক বন্ধন বিনষ্ট করবে দাবি করে রিজভী বলেন, ‘বিএনপি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করে দলীয় প্রতীকে ইউনিয়ন পরিষদসহ পরিবার, গ্রাম, পাড়া-মহল্লায় সর্বত্র দলীয় রাজনীতির সংঘাত ছড়িয়ে পড়বে। গণতন্ত্রের পথ চলাকে বিপথে চালিত করার জন্যই সরকারের মদদে নির্বাচন কমিশন এই অযৌক্তিক ও অসময়োচিত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে। ’
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের সামাজিক প্রেক্ষাপটে দলীয় প্রতীকে স্থানীয় সরকার নির্বাচন জনজীবনে বিপর্যস্ত পরিস্থিতির সম্ভাবনা থাকলেও সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ, বিশ্বাসযোগ্য ইনক্লুসিভ নির্বাচন চিরায়ত গণতন্ত্রের অঙ্গ। যদিও এখন এদেশে শান্তিপূর্ণ নির্বাচন নির্বাসনে, ভোটারদের ভোটধিকার নিরুদ্দেশ, তথাপিও গণতন্ত্রের এ দুঃসময়ে সরকারের নানামুখী জুলুম, ভোট জালিয়াতির সম্ভাবনার মধ্যেও এই ইউপি নির্বাচনে অংশ নিয়ে গণতন্ত্রের সংকুচিত পরিসরকে সম্প্রসারিত করার লক্ষ্য নির্ধারণ করতে হবে। ’
সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি নেতাদের মধ্যে নাজিমউদ্দিন আলম, অ্যডিভোকেট মাসুদ আহমেদ তালুকদার, সানা উল্লাহ মিয়া প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
বাংলাদেশ সময়: ১৬৫৮ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১২, ২০১৬/আপডেটেড ১৭৫৭ ঘণ্টা
টিআই/এসএইচ