ঢাকা: বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর দলের মহাসচিব হচ্ছেন-এটা পূর্ব নির্ধারিতই ছিল। আসন্ন জাতীয় কাউন্সিলে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা শুধু বাকি।
তার পরও বিএনপির বড় একটি অংশ অন্য কাউকে মহাসচিব হিসেবে দেখতে চেয়েছিল। আপাতত সেটি হচ্ছে না। এতেই আশাহত হয়েছেন ফখরুল বিরোধীরা।
বিএনপির বিভিন্ন পর্যায়ের বেশ কয়েকজন নেতা ও আসন্ন জাতীয় কাউন্সিলের জন গঠিত উপ কমিটির দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতাদের সঙ্গে কথা বলে এ তথ্য জানা গেছে।
সূত্রমতে, ফখরুলকে মহাসচিব হিসেবে মানতে নারাজ- দলের এমন একটি অংশ বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য তরিকুল ইসলামকে মহাসচিব বানানোর জন্য দৌড়-ঝাঁপ শুরু করেন কাউন্সিলের তারিখ ঘোষণার পর পরই।
বয়সের ভাড়ে ন্যুজ, প্রচণ্ড অসুস্থ তরিকুল ইসলাম প্রথম দিকে তাদের কোনো পাত্তা দেননি। কিন্তু উপযাচক হয়ে ক্রমাগত দেন-দরবার, কাকুতি-মিনতি, অনুরোধ-উপরোধের এক পর্যায় তরিকুল ইসলাম তাদের জানিয়ে দেন, মহাসচিব হিসেবে কাউকে পাওয়া না গেলে এবং খালেদা জিয়া তাকে দায়িত্ব দিলে তিনি মহাসচিব হতে রাজি।
তরিকুল ইসলামের এই মনোভাব জানার পর দলের বর্ষীয়ান এই নেতাকে খালেদা জিয়া বিনয়ের সঙ্গে জানিয়ে দেন, দলের মহসাচিব হিসেবে দায়িত্ব পালনের জন্য প্রস্তুত মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমীর।
গত প্রায় ৫ বছর ধরে ভারপ্রাপ্ত মহাসচিবের দায়িত্ব পালন করে আসা ফখরুলকেই তিনি দিতে চান মহাসচিবের দায়িত্ব।
সূত্রমতে, দলের চেয়ারপারসনের এই অবস্থান জানার পর তরিকুল ইসলাম ফখরুল বিরোধীদের সাফ জানিয়ে দেন, মহাসচিব পদ গ্রহণের ব্যাপারে তার কাছে কেউ যেন ঘোরাঘুরি না করেন। খালেদা জিয়ার সিদ্ধান্তই বিএনপির জন্য সময়োপযোগী ও যথার্থ।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তরিকুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, যখন মহাসচিব হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের জন্য শারিরীকভাবে সক্ষম ছিলাম, তখন দায়িত্ব নিইনি। এখন তো আমি অসুস্থ।
তারপরও ভেবেছিলাম, দায়িত্ব নেওয়ার মত কেউ না থাকলে এবং ম্যাডাম দায়িত্ব দিলে সেটা পালন করব। কিন্তু এই ঝামেলা এখন আর নেই বোধ হয়-বলেন তরিকুল।
২০১১ সালের ১৬ মার্চ তৎকালীন মহাসচিব খোন্দকার দেলোয়ার হোসেনের মৃত্যুর পর সে সময়ের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে ভারপ্রাপ্ত মহাসচিবের দায়িত্ব দেন বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া।
ওই সময় দলের শীর্ষ নেতাদের একটি বড় একটি অংশ দলের চেয়ারপারসনের এ সিদ্ধান্তের সমালোচনা করেন। ক্ষেত্র বিশেষে বিরোধিতাও করেন তারা।
কেউ কেউ আবার প্রকাশ্যে কথা বলেন মিডিয়াতে। এদের মধ্যে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আ স ম হান্নান শাহ ছিলেন অন্যতম।
তবে প্রকাশ্যে কথা না বলেও তলে তলে ফখরুলের ঘোর বিরোধিতা করে গেছেন বিএনপির অনেক প্রভাবশালী নেতা। বিশেষ করে ঢাকা মহানগর বিএনপির সাবেক আহ্বায়ক সাদেক হোসেন খোকা মির্জা ফখরুলকে সমর্থন দেওয়ায় খোকা বিরোধীরা ফখরুলের পেছনে উঠে-পড়ে লাগেন।
ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব হিসেবে প্রায় ৫ বছর দায়িত্ব পালনকালে এই অংশটির সহযোগিতা কখনো পাননি ফখরুল। তারা ক্রমাগত ফখরুলের সমালোচনা ও ভুল ধরার কাজে ব্যাস্ত থেকেছেন।
সূত্রমতে, এই অংশটিই ফখরুলের জায়গায় তরিকুল ইসলাম বা ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেনকে বসানোর চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তাদের সেই চেষ্টা ব্যর্থ হওয়ার পথে।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বিএনপির প্রচার সম্পাদক ও বিরোধী দলের সাবেক চিফ হুইপ জয়নুল আবদিন ফারুক বাংলানিউজকে বলেন, খোন্দকার দেলোয়ার হোসেনের মৃত্যুর পর অনেক হিসাব-নিকাশ করে সুদূর প্রসারী চিন্তা-ভাবনা থেকে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব করেছিলেন ম্যাডাম (খালেদা জিয়া)। এ পাঁচ বছর দায়িত্ব পালন করে তিনি নিজেকে আরো শানিত করেছেন। এখন তাকে মহাসচিবের দায়িত্ব দেওয়া হলে দল উপকৃত হবে- এ চিন্তা ম্যাডামের মাথায় আছে।
অন্য যাদের কথা পত্র-পত্রিকায় আসছে, সেটা হয়তো আমাদের মধ্য থেকেই কেউ করাচ্ছে। কিন্তু সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে ম্যাডাম ভুল করবেন না-বলেন ফারুক।
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বাংলানিউজকে বলেন, দলের কোনো অংশ আমার বিরোধিতা করছে বলে আমি মনে করি না। তার পরও যদি কেউ করে থাকে, দায়িত্ব পেলে সবাইকে সঙ্গে নিয়ে কাজ করব।
তাছাড়া পদের জন্য রাজনীতি করি না। যে পদেই থাকি, দেশের মানুষ ও দলের জন্য কাজ করে যাব-বলেন ফখরুল।
বাংলাদেশ সময়: ১৬৫১ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৬, ২০১৭
এজেড/আরআই