ঢাকা: নির্বাচন কমিশনকে (ইসি) আজ্ঞাবহ অভিহিত করে বিএনপির যুগ্ম-মহাসচিব রুহুল কবীর রিজভী বলেছেন, এরা নিজেদের স্বাধীন সত্ত্বাকে ভুলে নির্বাহী বিভাগের ইচ্ছা পালন করছে।
ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনকে সামনে রেখে রোববার (২৮ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে বিভিন্ন অভিযোগ জমা দেওয়ার পর তিনি ইসি সচিবালয়ে সাংবাদিকদের এ কথা বলেন।
বিএনপির এ নেতা বলেন, নির্বাচন কমিশনের একটি স্বাধীন সত্ত্বা আছে, সাংবিধানিক আলাদা একটি কর্তৃত্ব আছে। সে কর্তৃত্ব তারা না মেনে, নিজেদের বিলীন করে দিয়েছে। ইসি এখন নির্বাহী বিভাগের ইচ্ছা পালনের জন্য কাজ করছে।
নির্বাচন কমিশন আসলে আজ্ঞাবহ মন্তব্য করে রিজভী বলেন, এর কোনো মেরুদণ্ড নেই। সরকারের বেআইনি ইচ্ছা ও একচেটিয়া সবকিছু দখল করে নেওয়ার ইচ্ছায় সিল মোহর দেওয়া জন্য কাজ করছে ইসি।
তিনি বলেন, তফসিল ঘোষণার পর থেকে যা কিছু ঘটছে তার একটি সংক্ষিপ্ত চিত্র চিঠি আকারে ইসিতে জমা দিয়ে গেলাম। এ নিয়ে ইসির কোনো কার্যক্রম না থাকলেও দলিল রাখার জন্য এই অভিযোগ।
চিঠিতে অনিয়ম, বিধি লঙ্ঘন, নির্বাচনী কর্মকর্তাদের বেআইনি কার্যকলাপ ও সংঘাত-সংঘর্ষ তুলে ধরেছে বিএনপি।
আগামী ২২ মার্চ প্রথম ধাপের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। আসন্ন এ ইউপি নির্বাচন সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ হবে না বলে বিএনপি বারংবার আশঙ্কা প্রকাশ করছে।
রিজভী বলেন, নির্বাচনী প্রক্রিয়া শুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই বিএনপির প্রার্থীদের প্রার্থিতা প্রত্যাহারে বাধ্য করা, মনোনয়নপত্র জমা না দেওয়ার জন্য হুমকি-ধামকি দেওয়া, বাসা-বাড়িতে, পথে-ঘাটে এবং নির্বাচনী কার্যালয়েও সন্ত্রাসী কায়দায় হামলা করছে শাসক দলের ক্যাডাররা।
তিনি অভিযোগ করেন, বিএনপির প্রার্থীরা মনোনয়নপত্র দাখিল করলে তাদের মনোনয়নপত্র প্রাপ্তি স্বীকারপত্র দেওয়া হচ্ছে না। প্রার্থী ও সমর্থকদের বাড়িতে-বাড়িতে হামলা চালিয়ে ব্যাপক ভাঙচুর-লুটপাট করা হচ্ছে, এমনকি বিএনপির প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র জমা নেওয়ার কারণে নির্বাচনী কার্যালয়েও হামলা করেছে শাসক দলের বাহিনী। পাশাপাশি স্থানীয় নির্বাচন কর্তৃপক্ষ ঠুনকো অভিযোগে বিএনপির বেশ কিছু প্রার্থীর মনোনয়নপত্র বাতিল করেছেন।
পরবর্তী ধাপে অনুষ্ঠেয় ইউপি নির্বাচনে এই অবস্থার আরও অবনতি হবে বলে আশঙ্কা করেন রিজভী। তিনি বলেন, প্রথম ধাপের ৭৩৮ ইউপির মধ্যে ১১৪টিতে বিএনপির প্রার্থীরা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারছে না। অথচ আওয়ামী লীগ মনোনীত ৫১ জন প্রার্থী ইতোমধ্যেই বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন। অবস্থাদৃষ্টে মনে হয়, আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থীদের বিজয়ী ঘোষণা করার মুখ্য লক্ষ্য নিয়েই নির্বাচনী কর্মকর্তা, জনপ্রশাসন এবং সন্ত্রাসী ক্যাডারদের যৌথ উদ্যোগে মহাপরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে।
বিএনপির এ নেতা বলেন, ভোটারবিহীন এক তরফা নির্বাচন করে শাসক দলের চেয়ারম্যান প্রার্থীদের একচেটিয়া বিজয়ী ঘোষণা করার জন্য একদিকে প্রকাশ্য হুমকি-আতঙ্ক সৃষ্টি করে সন্ত্রাসের বিস্তার করা হচ্ছে। অন্যদিকে শাসক দলের ইচ্ছা পূরণের জন্য নির্বাচনের দায়িত্বরত কর্মকর্তাদেরও আঁকাবাঁকা কর্মকাণ্ড অব্যাহত রয়েছে।
নির্বাচন নিয়ে একটি অভিনব ঘটনা ঘটেছে অভিযোগ করে রিজভী বলেন, ভোলায় বিএনপির একজন প্রার্থীকে তার ভোটার এলাকার পরিবর্তে অন্য এলাকায় স্থানান্তর করে দেওয়া হয়েছে। নির্বাচন কমিশন সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের লক্ষ্যে অভিভাবকের ভূমিকা পালন করার কথা। সেখানে কমিশনের কর্মকর্তাদের আচরণ পক্ষপাতদুষ্ট এবং নিঃসন্দেহে দূরভীসন্ধীমূলক।
এসময় রিজভীর সঙ্গে ছিলেন বিএনপির অর্থ বিষয়ক সম্পাদক আব্দুস সালাম ও সহ-দফতর সম্পাদক তায়েবুল ইসলাম।
বাংলাদেশ সময়: ১৪০৬ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৮, ২০১৬
ইইউডি/এইচএ