ঢাকা: আসন্ন জাতীয় কাউন্সিলের আগে দলের শীর্ষনেতাদের মুক্তিতে স্বস্তি ফিরে এসেছে বিএনপিতে। দীর্ঘ ৬ বছর পর দলের ষষ্ঠ কাউন্সিল জাকজমকভাবেই করতে চায় দলটি।
বিএনপির বিভিন্ন পর্যয়ের নেতা ও কাউন্সিলের জন্য গঠিত উপ-কমিটির নেতাদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।
দলটির যুগ্ম মহাসচিব মো. শাহজাহান এ প্রসঙ্গে রোববার (২৮ ফেব্রুয়ারি) বাংলানিউজকে বলেন, গত বছর আন্দোলনের পর থেকে দলের অসংখ্য নেতাকর্মী কারাবন্দি হয়েছিলেন। তাদের মধ্যে শীর্ষনেতারাও ছিলেন। সম্প্রতি বেশিরভাগ নেতাই ছাড়া পেয়েছেন। বিষয়টি দলের জন্য স্বস্তিদায়ক। কিন্তু এখন পর্যন্ত কাউন্সিলের জায়গা না পাওয়ায় কিছুটা শঙ্কা তো রয়েই গেছে।
সূত্র মতে, কাউন্সিলের তারিখ নির্ধারণের আগে বিএনপির মধ্যে বেশি আলোচনা হয়েছে দলের কারাবন্দি নেতাদের নিয়ে। বিশেষ করে স্থায়ী কমিটির প্রবীণ সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন ও এমকে আনোয়ার কারাবন্দি থাকায় গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে পরামর্শ করার মতো লোক পাচ্ছিলেন না খালেদা জিয়া।
সম্প্রতি এই দুই শীর্ষনেতা জামিনে মুক্ত হয়ে দলের কাজে অংশ নিচ্ছেন। খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেখা-সাক্ষাৎ হয়েছে তাদের। রাজধানীর সভা-সেমিনারগুলোতেও যাওয়ার সুযোগ পাচ্ছেন তারা।
২০১৪ সালের মার্চে দুদকের করা একটি দুর্নীতির মামলায় গ্রেফতার হওয়ার পর টানা প্রায় দুই বছর কারাবন্দি ছিলেন ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন। একই সময় আরো অনেক নেতা গ্রেফতার হলেও ছাড়া পেয়ে যান তারা। কিন্তু মোশাররফ হোসেন ছাড়া পাচ্ছিলেন না কিছুতেই।
বিএনপি নেতারা ধরেই নিয়েছিলেন, দলের শীর্ষ এই নেতাকে কারাগারে রেখেই এবারের কাউন্সিল করতে হবে তাদেরকে।
কিন্তু কাউন্সিলের তারিখ ঘোষণার ১০ দিন আগে ১৩ জানুয়ারি কাশিমপুর কারাগার থেকে জামিনে মুক্ত পান দলের এই বর্ষীয়াণ নেতা। তার মুক্তির পরই মূলত ২৩ জানুয়ারি স্থায়ী কমিটির বৈঠক ডেকে জাতীয় কাউন্সিলের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেন খালেদা জিয়া।
গত বছর গাড়ি ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগের একটি মামলায় হাজিরা দিতে গিয়ে কারাবন্দি হন এম কে আনোয়ার। কয়েকদফা জামিন মঞ্জুরের পরও নানা জটিলতার কারণে মুক্তি পাচ্ছিলেন না তিনি।
দলের গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে প্রবীণ এই নেতাকে বরাবরই মূল্যায়ন করেন খালেদা জিয়া। সুতরাং তিনি কারাগারে থাকায় কিছুটা অস্বস্তিতে ছিলেন বিএনপির চেয়ারপারসন।
জাতীয় কাউন্সিলের সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও তারিখ ঘোষণার ২৭ দিন পর গত ১৯ ফেব্রুয়ারি জামিনে মুক্তি পান এম কে আনোয়ার।
সূত্র মতে, দলের আরেক স্থায়ী কমিটির সদস্য ও ঢাকা মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক কারাবন্দি মির্জা আব্বাসও খুব শিগগিরই জামিনে মুক্তি পাচ্ছেন।
এ ছাড়া কারাগারে আসা-যাওয়ার মধ্যে থাকা দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা শামসুজ্জামান দুদু, যুগ্ম মহাসচিব আমান উল্লাহ আমান, যুব বিষয়ক সম্পাদক সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল জামিনে মুক্ত হয়ে দলীয় কর্মকাণ্ডে অংশ নিচ্ছেন।
আর আগে থেকেই জামিনে মুক্ত হয়ে দলের সাংগঠনিক কর্মকাণ্ডে গতি ফিরিয়েছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও দফতরের দায়িত্বপ্রাপ্ত যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।
বস্তুত এই দুই নেতা বারবার কারাবন্দি হওয়ায় দলের ষষ্ঠ জাতীয় কাউন্সিল আয়োজন বার বার বাধাগ্রস্থ হয়ে বলে মনে করেন বিএনপির শীর্ষ নেতৃত্ব।
জাতীয় কাউন্সিলের আগে বেশিরভাগ শীর্ষনেতার জামিনে মুক্তি পাওয়ার বিষয়টিকে সরকারের ইতিবাচক অবস্থান হিসেবেও দেখছেন বিএনপির কেউ কেউ।
তারা মনে করছেন, জাতীয় কাউন্সিল করার সুযোগ দিতেই ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, এমকে আনোয়ারসহ শীর্ষনেতাদের মুক্তিতে কোনো বাধা দেয়নি সরকার। এরই ধারাবাহিকতায় কাউন্সিলের জন্য জায়গা ব্যবহারের অনুমতিও পাবে বিএনপি।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিএনপির এক শীর্ষনেতা বাংলানিউজকে বলেন, প্রশাসন আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু না বললেও কাউন্সিলের জন্য রমনার ইনস্টিটিউট অব ইঞ্জিনিয়ার্স বাংলাদেশের মিলনায়তন ও চত্বর ব্যবহারের অনুমতির বিষয়টি ঠিক হয়ে আছে। সময়মতো তারা আমাদের জানিয়ে দেবে। এ ব্যাপারে সরকারও ইতিবাচক অবস্থানে রয়েছে।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মাহবুবুর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, কাউন্সিলের আগে দলের শীর্ষনেতাদের মুক্তি ইতিবাচক হিসেবেই দেখছি আমরা। আশা করি, সবাইকে সঙ্গে নিয়ে কাউন্সিল করার পরিবেশ তৈরি করে দেবে সরকার। কাউন্সিলের ভেন্যু ব্যবহারের অনুমতিও দ্রুত পেয়ে যাবো আমরা।
বাংলাদেশ সময়: ১৬৫৫ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৮, ২০১৬
এজেড/এএসআর