ঢাকা, বুধবার, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ২৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

রাজনীতি

নাশকতার তিন মামলা

ফখরুলকে ১৫ দিনের মধ্যে আত্মসমর্পণের নির্দেশ

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২০৩ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৯, ২০১৬
ফখরুলকে ১৫ দিনের মধ্যে আত্মসমর্পণের নির্দেশ মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর

ঢাকা: পল্টন থানার নাশকতার তিন মামলায় বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে ১৫ দিনের মধ্যে বিচারিক আদালতে আত্মসমর্পণের নির্দেশ দিয়েছেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ।

সোমবার (২৯ ফেব্রুয়ারি) এ আদেশ দেন প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নেতৃত্বে ৫ সদস্যের আপিল বেঞ্চ।



আদালতে মির্জা ফখরুলের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী জয়নুল আবেদীন। সঙ্গে ছিলেন আইনজীবী সগীর হোসেন লিওন। রাষ্ট্রপক্ষে শুনানিতে অংশ নেন অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল মুরাদ রেজা।  

শুনানিতে জয়নুল আবেদীন বলেন, হাইকোর্ট লিমিটেড পিরিয়ডের জন্য বেল দিয়েছেন। রুল নিষ্পত্তি করে তিনমাসের জন্য জামিন দেওয়া হয়। আমি (ফখরুল) জামিনের অপব্যবহার করিনি।

আদালত বলেন, আপনি ২১ ডিসেম্বর হাইকোর্টের আদেশের অনুলিপি পেয়েছেন দেখা যাচ্ছে। এতদিন কি করলেন? তখন জয়নুল আবেদীন বলেন, লিমিটেড পিরিয়ডের জন্য বেল দেখিনি।

আবেদনের বিরোধিতা করে অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল মুরাদ বলেন, হাইকোর্টে আবেদন নিয়ে যেতে পারেন, আপিলে নয়।

উভয়পক্ষের শুনানি শেষে আদালত আবেদনের নিষ্পত্তি করে আদেশ দেন।

২০১৫ সালের ৫ জানুয়ারিকে ঘিরে ২০ দলীয় জোটের আন্দোলনের সময় পল্টন থানার নাশকতার তিন মামলায় মির্জা ফখরুলকে হাইকোর্ট অন্তর্বর্তীকালীন জামিন দিয়ে রুল জারি করেন। এর বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষ্ আপিলে গেলে আপিল বিভাগ রুল নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত জামিন দেন। এবং জামিনের মেয়াদ শেষে আত্মসমর্পণ করতে নির্দেশ দেন। এছাড়াও হাইকোর্টের রুল নিষ্পত্তি করতে বলেন।
 
হাইকোর্ট গত বছরের ২৪ নভেম্বর রুল নিষ্পত্তি করে ওই তিন মামলায় মির্জা ফখরুলকে তিনমাসের জামিন দেন।
 
ফখরুলের আইনজীবীদের দাবি, রুল নিষ্পত্তির মাধ্যমে সাধারণত মামলার বিচার শেষ না হওয়া পর্যন্ত জামিন হয়। কিন্তু এখানে মাত্র তিনমাসের জামিন দেওয়া হয়েছে। এ কারণে হাইকোর্টের  আদেশ চ্যালেঞ্জ করে মির্জা ফখরুল গত ০৭ জানুয়ারি লিভ টু আপিল (আপিলের অনুমতি চেয়ে আবেদন) করেন।

গত ১৫ ফেব্রুয়ারি এ আবেদনের শুনানি শেষে চেম্বার বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী আবেদনটি ১৮ ফেব্রুয়ারি আপিল বিভাগের নিয়মিত বেঞ্চে শুনানির জন্য পাঠিয়ে দেন।

গত ১৮ ফেব্রুয়ারি এ আবেদনের শুনানি চলাকালে সিলেটে বিচার বিভাগ নিয়ে মির্জা ফখরুল মন্তব্য করেছেন বলে নজরে এলে তার কাছে ব্যাখ্যা চান পূর্ণাঙ্গ আপিল বেঞ্চ।

গত ০৭ ফেব্রুয়ারি সিলেট জেলা ও মহানগর বিএনপির দ্বিবার্ষিক সম্মেলনে বিচার বিভাগ নিয়ে এ মন্তব্য করেছিলেন ফখরুল। সরকার বিচার বিভাগকে নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করছে বলে অভিযোগ করে তিনি বলেছিলেন, ‘গণতন্ত্রের সব প্রতিষ্ঠানকে সুপরিকল্পিতভাবে ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছে। দেশে গণতন্ত্র নেই, বিচার বিভাগেরও স্বাধীনতা নেই’।

ফখরুলকে এ বক্তব্যের বিষয়ে ২২ ফেব্রুয়ারির মধ্যে লিখিতভাবে ব্যাখ্যা দাখিল করতে বলেছিলেন সর্বোচ্চ আদালত। কিন্তু ২২ ফেব্রুয়ারি আইনজীবীরা ব্যাখ্যা দাখিল করতে গেলে আদালত মির্জা ফখরুলের স্বাক্ষরিত হলফনামা চান। ওইদিন বিকাল তিনটার দিকে মির্জা ফখরুল সুপ্রিম কোর্টে উপস্থিত হয়ে হলফনামা করেন।

২৫ ফেব্রুয়ারি এ হলফনামা দাখিলের সময় আদালত মির্জা ফখরুলের বিভিন্ন পত্রিকায় বিভিন্ন ধরনের বক্তব্য দেখতে পান। এরপর এ বিষয়ে ফখরুলের কাছে হলফনামা আকারে ফের ব্যাখ্যা চান আপিল বিভাগ।

সোমবারের শুনানিতে ফখরুলের আইনজীবী জয়নুল আবেদীন নতুন করে ব্যাখ্যা দাখিল করেন। এ সময় প্রধান বিচারপতি বলেন,  ‘দশম প্যারায় আছে, বিচার বিভাগ স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারছে না’।

জবাবে জয়নুল আবেদীন বলেন, ‘আমি (ফখরুল) এ কথা বলিনি। সিডি রয়েছে, এর বাইরে কিছু বলিনি’। পরে আদালত আইনজীবীকে সপ্তম প্যারা দেখতে বলেন।

তখন জয়নুল আবেদীন বলেন, ‘পত্রিকায় আসা ওই বক্তব্য আমার (ফখরুল) নয়। এ বিষয়ে রিজয়েন্ডার (প্রতিবাদলিপি) দেওয়া হয়েছে, ইতোমধ্যে তা ছাপাও হয়েছে’।

আদালত বলেন, ‘এটি দিয়েছেন ২৭ ফেব্রুয়ারি, আদালতে আসার পরে’। জয়নুল আবেদীন বলেন, ‘আমাদের নলেজে আসার পর পরই দিয়েছি’।

সবশেষে ফখরুলের আইনজীবীকে উদ্দেশ্য করে প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহা বলেন, ‘আপনারা রাজনীতিবিদেরা বিচার বিভাগকে সরকারের অংশ বলে থাকেন, এটি ঠিক না। বিচার বিভাগ রাষ্ট্রের একটি অঙ্গ। সংবিধান মানতে হলে বিচার বিভাগকে মানতে হবে। বিচার বিভাগের ওপর আস্থা হারায় এমন কিছু করবেন না। আইনজীবীরা বলেন, সরকারের মন্ত্রীও বলেন, আপনারা বলেন, তাহলে বিচার বিভাগ যাবেন কোথায় ?’

বাংলাদেশ সময়: ১২০০ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৯, ২০১৬
ইএস/এএসআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।