ঢাকা, বুধবার, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ২৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

রাজনীতি

বিদ্রোহীদের ব্যাপারে কঠোর অবস্থানে যাবে না আ’লীগ

শামীম খান, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০১০৬ ঘণ্টা, মার্চ ৫, ২০১৬
বিদ্রোহীদের ব্যাপারে কঠোর অবস্থানে যাবে না আ’লীগ

ঢাকা: ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনে বিদ্রোহী প্রার্থীদের ব্যাপারে খুব বেশি কঠোর অবস্থানে যাবে না ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ। বিদ্রোহী প্রার্থীদের বিষয়ে নমনীয় অবস্থানে থেকেই অগ্রসর হতে চায় দলটি।

মূলত প্রধান রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ শক্ত অবস্থানে না থাকায় এই কৌশল অবলম্বন। আওয়ামী লীগের নেতাদের সঙ্গে কথা বলে এ বিষয়ে জানা যায়।

নেতারা জানান, তারা মনে করছেন যে— এই নির্বাচনে প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপি তেমন শক্ত অবস্থানে নেই। ইউপি নির্বাচনকে ঘিরে ইতোমধ্যে এই দলটি রাজনৈতিক প্রভাব তেমন একটা বিস্তার করতে পারেনি। বিএনপির অবস্থা অনেকটাই- ‘নির্বাচন করার দরকার তাই করছে,’ মত আওয়ামী লীগ নেতাদের।

নির্বাচন না করলে তৃণমূলের কর্মীদের মনবল ভেঙে পড়তে পারে, এমনকি গণহারে কর্মীরা দল ছুট হতে পারে এই অবস্থা যাতে তৈরি না হয় সে কারণেই বিএনপি নির্বাচনে অংশ নিয়েছে। নির্বাচনী সাংগঠনিক শক্তি দেখানোর ক্ষমতা এই দলটির নেই। বলতে গেলে কর্মী ধরে রাখতেই বিএনপি নির্বাচন করছে বলেও আওয়ামী লীগ নেতারা মনে করছেন।

বিএনপির এই দুর্বলতার কারণেই আওয়ামী লীগ তুলনামূলকভাবে স্থবির অবস্থায় রয়েছে বলে মনে করছেন অনেক সিনিয়র নেতাই। তাছাড়া সব সময়ই তৃণমূলে বিএনপির চেয়ে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক কাঠামো শক্তিশালী। ফলে আওয়ামী লীগ স্বাভাবিকভাবেই সুবিধাজনক অবস্থায় রয়েছে। সে হিসেবে নির্বাচনে দলীয় প্রার্থী নিয়ে খুব বেশি চিন্তার কিছু নেই বলেও আওয়ামী লীগ নেতারা মন্তব্য করেন।

এদিকে বিদ্রোহী প্রার্থীদের ব্যাপারে আওয়ামী লীগ কড়া হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করলেও তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া কঠিন হয়ে পড়বে বলে দলের নেতারা মনে করছেন। আওয়ামী লীগের কেন্দ্র থেকে বলা হয়েছে যারা দলের সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে দলীয় প্রার্থীকে মেনে না নিয়ে বিদ্রোহী প্রার্থী হবে তাদের দল থেকে বহিষ্কার করা হবে। তবে কঠোর হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করা হলেও সঙ্গত কারণে অনেকটাই নমনীয় কৌশলে রয়েছে দল।

আওয়ামী লীগের একাধিক নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, যারা বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছেন তাদের বুঝিয়ে-কৌশলে বসিয়ে দেওয়ার চেষ্টা হচ্ছে। এভাবে যতজনকে বসানো সম্ভব হয় সেই চেষ্টাই করা হবে।

আওয়ামী লীগের ওই নেতারা জানান, ইউনিয়ন পরিষদে যারা নির্বাচন করছেন বা বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছেন তারাই মূলত দলের তৃণমূলের শক্তি। অনেকে দলের তৃণমূলের নেতৃত্ব পর্যায়েও রয়েছেন। এভাবে প্রত্যেকটি ইউনিয়ন থেকে বিদ্রোহীরা দল থেকে যদি বহিষ্কৃত হন তাহলে দলের মধ্যে মারাত্মক নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। তৃণমূল পর্যায়ে ভেতরে-ভেতরে কোন্দল আরও বাড়বে। ফলে দল সাংগঠনিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এই পরিস্থিতিতে দল খুব বেশি কড়াকড়ি অবস্থানে যেতে চাচ্ছে না বলে আওয়ামী লীগের ওই নেতাদের সঙ্গে কথা বলে আরও জানা যায়।

তারা জানান, যেহেতু বিএনপির অবস্থা অনেকটাই দুর্বল, তাই এই পরিস্থিতিতে দলের বিদ্রোহী প্রার্থীদের ব্যাপারে কঠোর অবস্থানে যাওয়ার প্রয়োজন নেই বলে দলের নীতি-নির্ধারকরা মনে করছেন। বিদ্রোহী প্রার্থীদের ঢালাওভাবে দল থেকে বহিষ্কার বা সাংগঠনিকভাবে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিলে তৃণমূল পর্যায়ে দলের বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মীকে হারাতে হবে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আওয়ামী লীগের স্থানীয় সরকার/ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন বোর্ডের এক সদস্য বাংলানিউজকে বলেন, প্রার্থীকে বিজয়ী করতে হবে, দলও তো ঠিক রাখতে হবে। বিদ্রোহী প্রার্থী হওয়ার দায়ে একের পর এক বহিষ্কার করা হলে দল চলবে কীভাবে! এটি জাতীয় সংসদ নির্বাচনের বিদ্রোহী প্রার্থী নয়, যে একজনকে বহিষ্কার করলেই হয়ে গেলো।

আগামী ২২ মার্চ প্রথম ধাপে ও ৩১ মার্চ দ্বিতীয় ধাপে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। প্রথম ধাপে অনুষ্ঠিত হবে ৭৩৮টি ইউনিয়নে এবং দ্বিতীয় ধাপে ৬৮৫টিতে। দুই ধাপে মোট ১ হাজার ৪শ’ ২৩টি ইউনিয়নে নির্বাচন হবে। এই দুই ধাপের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের দলীয় প্রার্থীকে চ্যালেঞ্জ করে প্রায় ৬শ’ বিদ্রোহী প্রার্থী রয়েছেন। প্রায় অর্ধেকের মতো ইউনিয়নেই বিদ্রোহী প্রার্থী বিদ্যমান। এর মধ্যে কোথাও কোথাও দুই তিনজন করে বিদ্রোহী প্রার্থী আছেন।

বাংলাদেশ সময়: ০১০৮ ঘণ্টা, মার্চ ০৫, ২০১৬
এসকে/আইএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।