বগুড়া থেকে: বিজয় ছিনিয়ে আনতে মাঠে নেমেছেন বগুড়ার সারিয়াকান্দি উপজেলার সরকার দলীয় ইউপি চেয়ারম্যান প্রার্থীরা। বিজয়ী হতে বসে নেই বিএনপির চেয়ারম্যান প্রার্থীরাও।
সবকিছু মিলিয়ে জমে উঠেছে নির্বাচনী প্রচারণা। পোস্টারে পোস্টারে ছেয়ে গেছে সবগুলো নির্বাচনী এলাকা।
প্রথম ধাপে আগামী ২২ মার্চ বগুড়ার সারিয়াকান্দি উপজেলার ১২টি ও দুপচাঁচিয়া উপজেলার ১টি ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।
মঙ্গলবার (০৮ মার্চ) পর্যন্ত সারিয়াকান্দি উপজেলার ১২টি ইউনিয়নের কোথাও কোনো অপ্রীতিকর কোনো ঘটনা ঘটেনি। তবে সরকার দলীয় স্থানীয় সংসদ সদস্য ও চেয়ারম্যান প্রার্থীদের বিরুদ্ধে প্রভাব বিস্তার করে বিজয় ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছেন বলে অভিযোগ তুলেছে বিএনপি। ভোটার ও জনগণের ওপর ভরসা রেখে প্রশাসন ঠিক থাকলে নিরঙ্কুশ বিজয়ের আশা করছে দলটি। পক্ষান্তরে আওয়ামী লীগ বলছে, জনসমর্থনহীন বিএনপি মিথ্যা অভিযোগ তুলে ফাঁয়দা লুটতে চাইছে। আগে থেকেই জনগণ তাদের সঙ্গে আছে এবং এবারের নির্বাচনেও তার প্রতিফলন ঘটবে বলেও দাবি সরকারি দলের। জাতীয় পার্টিও মনে করছে, যে যাই বলুক, জনগণের তৎপরতায় নির্বাচন সুষ্ঠু হবে।
উপজেলা বিএনপির সভাপতি ও দলের নির্বাচন পরিচালনা কমিটির চেয়ারম্যান সুজাউদ্দৌলা সুনজু’র অভিযোগ, সোমবার (০৭ মার্চ) উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সাহাদারা মান্নান দলীয় ইউপি চেয়ারম্যান প্রার্থীদের ডেকে বলেছেন, যেকোনো মূল্যে উপজেলার ১২টি ইউপির চেয়ারম্যান পদে বিজয় ছিনিয়ে আনতে হবে। এ জন্য দলের নেতাকর্মীদের ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার কড়া নির্দেশ দেন তিনি।
গত সপ্তাহে এলাকায় গিয়ে স্থানীয় এমপি আব্দুল মান্নান উপজেলার আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী ও প্রার্থীদের ডেকে একই নির্দেশ দিয়েছেন বলেও অভিযোগ সুনজু’র।
‘স্থানীয় এমপির এমন নির্দেশনার খবর এলাকায় ছড়িয়ে পড়লে বিএনপি ও অন্য দলের ইউপি চেয়ারম্যান প্রার্থীসহ সাধারণ ভোটারদের মাঝে নানামুখী আলোচনা-সমালোচনার ঝড় বইছে। এমপির এ ধরনের নির্দেশনা ভালোভাবে নেননি বিএনপিসহ অন্যদলের ইউপি চেয়ারম্যান প্রার্থীরা। ভোটারদের মাঝেও একটা ভীতিকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে’- বলেন তিনি।
উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ও ভেলাবাড়ী ইউপির চেয়ারম্যান প্রার্থী লুৎফুল হায়দার রুমিকে ভয়-ভীতি দেখানো হচ্ছে। তার ওপর হামলার পরিকল্পনা হচ্ছে- এমন অভিযোগও করেন বিএনপির এই নেতা।
আওয়ামী লীগের ইউপি চেয়ারম্যান প্রার্থীদের সমর্থকরা ইতোমধ্যেই এলাকায় ঘোষণা দিয়েছেন- প্রশাসন দিয়ে তারা প্রত্যেক ভোটকেন্দ্র দখলে নেবেন। এমন ঘোষণায় সাধারণ ভোটারদের মধ্যে ক্ষোভের সঞ্চার হয়েছে বলেও দাবি তার।
তিনি বলেন, জনগণের ভোট যদি কেউ কেড়ে নেওয়ার চেষ্টা করেন, তাহলে জনগণই তা সর্বশক্তি দিয়ে প্রতিহত করবে।
বিএনপি এখানে শক্ত অবস্থানে আছে এবং উপজেলার ১২টি ইউপিতেই বিএনপির চেয়ারম্যান প্রার্থীরা বিজয়ী হবেন-এমন আশাবাদ ব্যক্ত করে সুনজু বলেন, ‘প্রশাসন যদি নিরপেক্ষ থাকে জনগণের এ বিজয় কেউই ছিনিয়ে নিতে পারবে না’।
তিনি আশা করেন, আওয়ামী লীগের চেয়ারম্যান প্রার্থীরা যতই হুমকি-ধামকি দিক না কেন, প্রশাসন যদি নিরপেক্ষ থাকে তাহলে তাদের সব প্রার্থী বিএনপির প্রার্থীদের কাছে হেরে যাবেন।
সারিয়াকান্দি ও সোনাতলা আসনের সরকার দলীয় সংসদ সদস্য আব্দুল মান্নান ইউপি নির্বাচন নিয়ে সারিয়াকান্দি উপজেলার বিএনপি সভাপতির অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, বিএনপি বলতে কিছু নেই। গতবারই এ উপজেলার ১০টি ইউপির চেয়ারম্যান ছিলেন আওয়ামী লীগের।
‘যেকোনো মূল্যে দলীয় প্রার্থীদের পাস করাতে হবে, এমন কথা আমি কেন বলবো? পাসতো এমনিতেই করবেন’- বলেন তিনি।
ওখানে আওয়ামী লীগের প্রার্থীদের সঙ্গে স্বতন্ত্র বা আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থীদের প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে বলেও দাবি করেন আব্দুল মান্নান।
তার দাবি, ‘বিএনপির সঙ্গে কোনো ভোটার নেই। বিএনপি এখন শুধু আছে নামে। আমি কাকে হুমকি দেবো বলেন? ওরা কি কইলো না কইলো এগুলো নিয়ে জনগণ বা ভোটাররা কিছু ভাবছেন না। তারা জানেন, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায়। আওয়ামী লীগ প্রার্থীদের ভোট দিলে এলাকায় উন্নয়ন হবে। গত কয়েক বছর ধরে এলাকায় অনেক উন্নয়নের কাজ করছি। সব কিছু চিন্তা করেই ভোটারেরা আওয়ামী লীগ প্রার্থীদের ভোট দেবেন’।
সারিয়াকান্দি উপজেলা জাতীয় পার্টির সভাপতি মোখছেদুল আলম বলেন, যেকোনো মূল্যে দলীয় চেয়ারম্যান প্রার্থীদের বিজয় ছিনিয়ে আনতে হবে- এমপি আব্দুল মান্নানের এমন বক্তব্যে জনগণের মধ্যে একটা আশঙ্কা হতেই পারে। তবে এখনও এ উপজেলায় আসন্ন ইউপি নির্বাচন নিয়ে তেমন কোনো ঘটনা ঘটেনি।
জনগণ নির্বাচনের সময় কোনো অঘটন ঘটতে দেবে না বলে বিশ্বাস করেন এই নেতা। যে যাই বলুক না কেন, এ উপজেলায় সুষ্ঠু নির্বাচন হবে বলেও মনে করেন তিনি।
বাংলাদেশ সময়: ১১৩৩ ঘণ্টা, মার্চ ০৯, ২০১৬
এমএম/এএসআর
** ‘আহমেদ কামালের দল গঠন অপ্রত্যাশিত’