ঢাকা: তদন্তকারী কর্মকর্তা নিয়োগের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলা বাতিল চেয়ে হাইকোর্টে আবেদন জানিয়েছেন প্রধান আসামি বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া।
বুধবার (০৯ মার্চ) হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় আবেদনটি দাখিল করা হয়েছে বলে জানান খালেদা জিয়ার আইনজীবী অ্যাডভোকেট মাহবুব উদ্দিন খোকন।
রাষ্ট্র ও দুর্নীতি দমন কমিশনকে আবেদনে বিবাদী করা হয়েছে।
বিচারপতি রুহুল কুদ্দুস ও বিচারপতি মাহমুদুল হকের হাইকোর্ট বেঞ্চে আবেদন উপস্থাপনের পর ১৪ মার্চ শুনানির দিন ধার্য করেছেন আদালত।
আবেদনে বলা হয়, দুদকের উপ-পরিচালক হারুন-অর রশিদকে ২০১১ সালের ১৮ আগস্ট মাসে এ মামলার তদন্ত কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। গেজেট ছাড়া এ নিয়োগ দুর্নীতি দমন কমিশন আইন ২০০৪ এর ২০ (২) ধারার পরিপন্থী।
আইনের ২০ (১) ধারায় বলা হয়, ‘ফৌজদারি কার্যবিধিতে যাহা কিছুই থাকুক না কেন, এই আইনের অধীন ও উহার তফসিলে বর্ণিত অপরাধসমূহ কেবলমাত্র কমিশন কর্তৃক তদন্তযোগ্য হইবে’৷
(২) উপ-ধারায় বলা আছে, ‘ (১) এ উল্লিখিত অপরাধসমূহ তদন্তের জন্য কমিশন, সরকারি গেজেটে প্রজ্ঞাপন দ্বারা, উহার অধঃস্তন কোনো কর্মকর্তাকে ক্ষমতা প্রদান করিতে পারিবে’।
মাহবুব উদ্দিন খোকন জানান, জেরায় হারুন-অর রশিদ বলেছেন- আমাকে তদন্তকারী কর্মকর্তা নিয়োগপত্রের কোনো অনুলিপি কমিশনারকে দেওয়া হয়নি। আমাকে এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা নিয়োগ সংক্রান্ত কোনো প্রজ্ঞাপন সরকারি গেজেটে প্রকাশিত হয়েছে কি-না তা আমি বলতে পারি না। তবে মনে হয় করা হয়নি।
এ কারণে হারুনুর রশীদ নিয়োগ অবৈধ দাবি করে এ মামলা বাতিলে রুল জারি নির্দেশনা চাওয়া হয়েছে। পাশাপাশি মামলার কার্যক্রম স্থগিতেরও আবেদন জানানো হয়েছে।
জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট ছাড়াও জিয়া অরফানেজ ট্রাস্টের অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) দায়ের করা দুই মামলার বিচারিক কার্যক্রম চলছে রাজধানীর বকশিবাজারে কারা অধিদফতরের প্যারেড মাঠে স্থাপিত তৃতীয় বিশেষ জজ আবু আহমেদ জমাদারের অস্থায়ী আদালতে। দুই মামলারই বাদী ও তদন্তকারী কর্মকর্তা হলেন দুর্নীতি দমন কমিশনের উপ-পরিচালক হারুন-অর রশিদ খান।
এর মধ্যে জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলার সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ পর্যায়ে রয়েছে। এ মামলার ৩২তম ও শেষ সাক্ষী হারুন অর রশিদের সাক্ষ্যগ্রহণ শেষে তাকে আসামিপক্ষের জেরা চলছে। অসমাপ্ত জেরার দিন ধার্য রয়েছে বৃহস্পতিবার (১০ মার্চ)। অন্যদিকে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় প্রথম সাক্ষী হিসেবেও সাক্ষ্য দিয়েছেন হারুন অর রশিদ। তাকে আসামিপক্ষের জেরা ও নতুন সাক্ষীদের সাক্ষ্যগ্রহণের দিন ধার্য রয়েছে আগামী ২৪ মার্চ।
২০১০ সালের ৮ আগস্ট তেজগাঁও থানায় জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলা দায়ের করা হয়। জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্টের নামে অবৈধভাবে ৩ কোটি ১৫ লাখ ৪৩ হাজার টাকা লেনদেনের অভিযোগ এনে এ মামলা দায়ের করা হয়।
অন্যদিকে ২০০৮ সালের ৩ জুলাই রমনা থানায় জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলা দায়ের করে দুদক। এতিমদের সহায়তা করার উদ্দেশ্যে একটি বিদেশি ব্যাংক থেকে আসা ২ কোটি ১০ লাখ ৭১ হাজার ৬৭১ টাকা আত্মসাৎ করার অভিযোগ এনে এ মামলা দায়ের করা হয়।
জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলার অভিযোগে বলা হয়, ২০০৫ সালে কাকরাইলে সুরাইয়া খানমের কাছ থেকে ‘শহীদ জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট’-এর নামে ৪২ কাঠা জমি কেনা হয়। কিন্তু জমির দামের চেয়ে অতিরিক্ত ১ কোটি ২৪ লাখ ৯৩ হাজার টাকা জমির মালিককে দেওয়া হয়েছে বলে কাগজপত্রে দেখানো হয়, যার কোনো বৈধ উৎস ট্রাস্ট দেখাতে পারেনি।
জমির মালিককে দেওয়া ওই অর্থ ছাড়াও ট্রাস্টের নামে মোট ৩ কোটি ১৫ লাখ ৪৩ হাজার টাকা অবৈধ লেনদেনের তথ্য পাওয়া গেছে।
২০১২ সালের ১৬ জানুয়ারি এ মামলায় আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা হারুন অর রশিদ খান।
২০১৪ সালের ১৯ মার্চ এ দুই দুর্নীতি মামলায় খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে অভিযোগ (চার্জ) গঠন করেন ঢাকা তৃতীয় ও বিশেষ জজ আদালতের আগের বিচারক বাসুদেব রায়।
খালেদা জিয়ার উপস্থিতিতে চার্জ গঠন করা হয় খালেদা জিয়ার বড় ছেলে ও বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ অপর আট আসামির বিরুদ্ধেও।
২০১৪ সালের ৭ মে আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয় ঢাকার ৩ নম্বর বিশেষ জজ আদালতে বিচারাধীন মামলা দু’টির বিচারিক কার্যক্রম ঢাকার মেট্রোপলিটন দায়রা জজ আদালত ভবনের পরিবর্তে ঢাকা মহানগরের বকশীবাজার এলাকার কারা অধিদফতরের প্যারেড মাঠে নির্মিত অস্থায়ী আদালত ভবনে চালানোর আদেশ জারি করে।
বাংলাদেশ সময়: ১৪২২ ঘণ্টা, মার্চ ০৯, ২০১৬
ইএস/এএসআর