ঢাকা: দেশের ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনের এলাকাগুলোতে জনগণের অংশগ্রহণকে পদদলিত করে বিজয় ছিনতাই করা হচ্ছে, আর সেটাকে নির্বাচন কমিশন বৈধতার সনদ দিচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপির দফতরের দায়িত্বপ্রাপ্ত যুগ্ম-মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী আহমেদ।
বুধবার (৯ মার্চ) দলের নয়াপল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ অভিযোগ করেন।
রিজভী বলেন, দেশের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে বাক-স্বাধীনতা মানেই রাষ্ট্রদ্রোহিতা, চিন্তা ও মত প্রকাশের স্বাধীনতা সম্পূর্ণভাবে বে-আইনি। কারণ রাষ্ট্রের অধিকারীরা তাদের বিরোধীদের আসামি মনে করেন। এখানে সজ্জন গুণী ব্যক্তিরা সরকারের প্রধানের দ্বারা ধিকৃত হন।
বিএনপির এ যুগ্ম-মহাসচিব বলেন, এ দেশে সম্মানিত বিচারকরা জুডিসিয়াস মাইন্ড নিয়ে রায় লিখতে পারবেন না। আইন ও তথ্য প্রমাণের ভিত্তিতে নয়, ক্ষমতাসীনদের ইচ্ছানুযায়ী রায় লিখতে হবে। ক্ষমতাসীনরা এটাই চায়। ক্ষমতাসীন মন্ত্রীরা নিজেরাই বলেছেন, তারা তাদের প্রত্যাশা অনুযায়ী রায় চায়। আর তাদের প্রত্যাশা পূরণ না হলে প্রয়োজনে আদালত অবমাননা করে সর্বোচ্চ আদালতের প্রধান বিচারপতির বিরুদ্ধেও বিষোদগার করতে ছাড়েন না। তাদের ক্ষমতা মনে হয় রাষ্ট্রের সব অঙ্গের ঊর্ধ্বে।
দেশের নিয়ন্ত্রণ এখন অপরাধীদের হাতে মন্তব্য করে রিজভী বলেন, গণতন্ত্রের অস্তিত্ব, আইনের শাসন এবং মানুষের নিরাপত্তা এখন বেআইনি কর্মকাণ্ডে লিপ্ত বেপরোয়া ব্যক্তিদের হাতে। উদগ্র ক্ষমতালোভ, জনগণের প্রতি অমানবিক অবজ্ঞা আর রক্তাক্ত সন্ত্রাসের পথই হচ্ছে বর্তমান অবৈধ শাসকগোষ্ঠীর রাষ্ট্র পরিচালনার অনুসৃত পথ। যার কারণে গণতন্ত্র এখন পালিয়ে বেড়াচ্ছে এবং আইন-শৃঙ্খলার পরিস্থিতি এক বর্বর হিংসাযুদ্ধে লিপ্ত।
তিনি বলেন, অপরাধীদের সহযোগীরাও অপরাধী। নির্বাচন কমিশন সরকারের অপরাধের সহযোগী। দেশজুড়ে ইউপি নির্বাচনী এলাকাগুলোতে জনগণের অংশগ্রহণকে পদদলিত করে যারা সব আত্মসাৎ করে নিচ্ছে তাদের ছিনতাই করা বিজয়কে বৈধতার সনদ দিচ্ছে নির্বাচন কমিশন।
রিজভী আরও বলেন, ভোটারবিহীন সরকারের মদতে গোটা নির্বাচনী ব্যবস্থা সন্ত্রাসী দুঃশাসনের ছায়ায় গ্রাস হয়ে আছে। আর নির্বাচন কমিশন এই অনাচারকে সর্বনাশা আশকারা দিয়ে যাচ্ছে। সরকারের গণতন্ত্র হত্যার উদ্দেশ্য চরিতার্থ করার জন্যই এই নির্বাচন কমিশন তার হীন কর্মকাণ্ডের মধ্য দিয়ে গণতন্ত্রকে আগেই শয্যাশায়ী ও মরণাপন্ন করেছে।
তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সমালোচনা করে বলেন, প্রধানমন্ত্রী কখনোই পরিশীলিত রাষ্ট্রনেতার মতো কথা বলেননি। তিনি সম্প্রতি নবনির্বাচিত বিএনপি চেয়ারপারসন এবং সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান সম্পর্কে যে মন্তব্য করেছেন তা যেন শ্বাপদের মতো জিঘাংসার বহিঃপ্রকাশ। এটি গর্হিত, অনভিপ্রেত, সভ্য রাজনীতি চর্চার ক্ষেত্রে চরম লজ্জার। এটি পাগলের প্রলাপ।
কটূক্তি, পেশী প্রদর্শন আর উগ্রচন্ডা আওয়ামী লীগের সংস্কৃতিরই অংশ মন্তব্য করে রিজভী বলেন, প্রধানমন্ত্রী তার ৭ মার্চের ভাষণে সেটিই প্রমাণ করেছেন। তার কথা শুনে মনে হয়, তিনি একটি কারাগার এবং বধ্যভূমির একচ্ছত্র অধিপতি।
বিএনপির এ নেতা বলেন, বেশি দিন লাগবে না যেদিন মানুষের জানমালের বিপন্নতা, সামাজিক অস্থিরতা সৃষ্টি, ক্ষমতার আড়ালে দুর্নীতিকে প্রশ্রয় দেওয়া, বিরোধী সমালোচনার কারণে নির্বিচারে গুম, খুন, ক্ষমতার আড়ালে সীমাহীন দুর্নীতিকে প্রশ্রয় দেওয়া, সর্বোপরি গণতন্ত্রকে হত্যার জন্য বর্তমান প্রধানমন্ত্রীকেই জনতার আদালতে প্রধান আসামি হিসেবে দাঁড়াতে হবে। আর তার সহযোগী হিসেবে নির্বাচন কমিশন হবে কালো তালিকাভূক্ত দ্বিতীয় প্রধান আসামি।
রিজভী অভিযোগ করেন, ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগ পৈশাচিকতা ও বর্বরোচিত কর্মকাণ্ড আরও বেশি মাত্রায় বৃদ্ধি পেয়েছে।
তিনি এ সময় পিরোজপুর, পটুয়াখালী, খুলনা, ভোলা, ব্রাহ্মণাবাড়িয়াসহ বিভিন্ন স্থানে প্রার্থীদের মারধর, প্রচারণায় বাধা, নেতাকর্মীদের ওপর হামলা-গ্রেফতারের বিস্তর অভিযোগ করেন।
বাংলাদেশ সময়: ১৭৪২ ঘণ্টা, মার্চ ০৯, ২০১৬
এইচএ/