কুমিল্লা থেকে: আওয়ামী লীগের জাতীয় কাউন্সিলের আগে সকল পর্যায়ে সম্মেলন করার নিয়ম থাকলেও কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগে তার কোনো প্রতিফলন নেই।
কর্মী সভার নামে জেলা কাউন্সিল হলেও এক মাস পার হয়ে গেছে পূর্ণাঙ্গ কমিটি হয়নি।
গত ৬ ফেব্রুয়ারি কর্মীসভার মাধ্যমে জেলা আওয়ামী লীগের কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হয়। এর আগে দীর্ঘ ২২ বছর ধরে কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলন হয়নি। দীর্ঘদিন পর কাউন্সিল আকারে সম্মেলন অনুষ্ঠিত হলেও আগে থেকে এর কোনো ঘোষণা ছিলো না। কর্মীসভা হিসেবে প্রচার চালানোর পর শেষ মুহূর্তে সেটাকে কাউন্সিল হিসেবে চালিয়ে দেয়া হয়।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম এ কাউন্সিলে পরিকল্পনা মন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালকে (লোটাস কামাল) সভাপতি ও রেলমন্ত্রী মুজিবুল হককে সাধারণ সম্পাদক ঘোষণা দিয়ে যান। সেই সঙ্গে ১৫ দিনের মধ্যে জেলার পূর্ণাঙ্গ কমিটি করে দলের কেন্দ্র থেকে এর অনুমোদন আনার নির্দেশ দিয়ে যান তিনি। এরপর এক মাসের বেশি সময় অতিবাহিত হলেও এখন পর্যন্ত পূর্ণাঙ্গ কমিটি হয়নি।
এছাড়া দলের জাতীয় সম্মেলনের আগে দলের সকল পর্যায়ে সম্মেলন করার কথা থাকলে আগামী ২৮ মার্চ জাতীয় সম্মেলনকে সামনে রেখে কুমিল্লা দক্ষিণ সাংগঠনিক জেলার কোনো উপজেলাতেই সম্মেলন হয়নি। বছরের পর বছর ধরে পুরোনো কমিটি দিয়েই চলছে কুমিল্লা দক্ষিণ জেলার ৯টি উপজেলা আওয়ামী লীগ।
তবে জেলা আওয়ামী লীগের নতুন সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের নাম ঘোষণা হওয়ার পরই সদর উপজেলা কমিটি ভেঙে দিয়ে আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হয়েছে। এই আহ্বায়ক কমিটি গঠনের প্রক্রিয়া নিয়েও দলের মধ্যে চলছে চাপা বিতর্ক। বিষয়টি নিয়ে প্রকাশ্যে কেউ কিছু বলতে পারছেন না।
নেতাকর্মীদের অভিযোগ জেলার পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন এবং সেই কমিটি কেন্দ্র থেকে অনুমোদন নেয়ার আগেই সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক ক্ষমতা বলে সদর উপজেলা কমিটি ভেঙে দিয়ে আহ্বায়ক কমিটি করেছেন।
আবার এই কমিটি নিয়েও দলের মধ্যে সমালোচনা রয়েছে। আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা জানান, এই কমিটির আহ্বায়ক কাজী বাশার যিনি সদর উপজেলার ভোটার নন। এর আগে তিনি আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে তেমন একটা পরিচিত মুখ ছিলেন না। দলে সক্রিয়ও ছিলেন না।
কুমিল্লা সদর আসনের সংসদ সদস্য (এমপি) আ ক ম বাহাউদ্দিন বাহারের পছন্দের লোক হওয়ায় তাকে আহ্বায়ক করা হয়েছে বলে ওই নেতাকর্মীরা অভিযোগ করেন। তাই কাজী বাশারকে আহ্বায়ক করায় দলের অনেকেই ক্ষুব্ধ। তবে এমপির লোক হওয়ায় কেউ মুখ খুলছেন না। কারণ স্থানীয় এমপিই আওয়ামী লীগে সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী। এমপির মতের বাইরে গিয়ে দলে টিকে থাকা কঠিন হয়ে পড়তে পারে এই ভয়ে কেউ কথা বলেন না। এই পরিস্থিতিতে নেতাকর্মীদের মধ্যে এক ধরণের হতাশা কাজ করছে।
আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, কুমিল্লায় দলের সাংগঠনিক কার্যক্রম চলছে গতানুগতিক ধারায়। দিবস ভিত্তিক কর্মসূচি ছাড়া দলের অন্য কোনো সাংগঠনিক কোনো কর্মসূচি নেই। দিবস ভিত্তিক কর্মসূচিগুলোও হয় গতানুগতিক। দলের সর্বস্তরের নেতাকর্মীর অংশ গ্রহণ নেই দলীয় কর্মসূচিতে।
নেতাকর্মীরা আরও জানান, এখানকার আওয়ামী লীগের রাজনীতি নিয়ন্ত্রণ করে থাকেন সদর আসনের সংসদ সদস্য বাহাউদ্দিন বাহার। আওয়ামী লীগের সব কিছুতেই রয়েছে তার হস্তক্ষেপ। তার পছন্দের লোকজনই আওয়ামী লীগের সব কিছু। এমন কি সভাপতি আ হ ম মুস্তাফা কামাল এবং সাধারণ সম্পাদক মুজিবুল হকও সদর এমপির কথার বাইরে কোন কাজ করতে পারেন না বলে তারা অভিযোগ করেন।
এই বিষয়গুলো অনেকেই মেনে নিতে পারছেন না। কারণ বাহাউদ্দিন বাহার আওয়ামী লীগের কোনো পদে নেই, কোনো কমিটিতে নেই। বর্তমানে তিনি আওয়ামী লীগের সদস্যও নন। ১৩ বছর আগে তিনি দল থেকে বহিষ্কার হন।
সার্বিক পরিস্থিতিতে আওয়ামী লীগের ত্যাগী নেতাকর্মীদের মধ্যে এক ধরণের হতাশা বিরাজ করছে। নেতাকর্মীদের এই হতাশার প্রভাব পড়ছে দলে। দিন দিন দল সাংগঠনিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়ছে বলে নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্থানীয় আওয়ামী লীগের একাধিক নেতা বাংলানিউজকে জানান।
এই বিষয়গুলো নিয়ে কথা বলার জন্য পরিকল্পনামন্ত্রী ও জেলা সভাপতি মুস্তফা কামাল, রেলমন্ত্রী ও জেলা সাধারণ সম্পাদক মুজিবুল হক এবং সংসদ সদস্য বাহাউদ্দিন বাহারের সঙ্গে ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করেও পাওয়া যায়নি।
বাংলাদেশ সময়: ০৩০২ ঘণ্টা, মার্চ ১০, ২০১৬
এসকে/আরআই
** কোনো সম্মেলনই করতে পারেনি জেলা বিএনপি