ঢাকা: দুই বছর আগে ঢাকা মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব ষাটোর্ধ্ব আবদুস সালামকে সরিয়ে ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি তরুণ রাজনীতিক হাবীব উন নবী খান সোহেলকে ওই পদে বসিয়ে ‘চমক’ সৃষ্টি করেন খালেদা জিয়া।
দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ঢাকা মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক মির্জা আব্বাসের রানিংমেট হিসেবে হাবিব উন নবী খান সোহেলকে দেখে অবাক হন অনেকেই।
আসন্ন জাতীয় কাউন্সিলে বিএনপির ‘ভাইস চেয়ারম্যান’ পদে এক ঝাঁক তরুণ নেতাকে বসিয়ে আরো ‘চমক’ সৃষ্টি করতে যাচ্ছেন দলটির চেয়ারপারসন।
ভাইস চেয়ারম্যানের ১৬টি পদের মধ্যে অন্তত ৮টিতে দেখা যেতে পারে দলে সক্রিয় তরুণ নেতাদের।
সূত্রমতে, বিএনপির বর্তমান কমিটির ভাইস চেয়ারম্যান প্রবীণ রাজনীতিক টিএইচ খান, বেগম রাবেয়া চৌধুরী, অ্যাডভোকেট হারুন আল রশিদ, কাজী শাহ মোফাজ্জল হোসেন ও কারাবন্দি আব্দুস সালাম পিন্টু শারীরিকভাবে অসুস্থ থাকায় বর্তমান পদে তাদের আর রাখার কথা ভাবছেন না খালেদা জিয়া।
এই পাঁচ জনের মধ্যে অন্তত তিন জনকে বিএনপির উপদেষ্টা পরিষদে দেখা যেতে পারে। বাকি ২ জনের ব্যাপারে কোনো সিদ্ধান্ত এখনো চূড়ান্ত হয়নি।
দল থেকে স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করায় ব্যারিস্টার নাজমুল হুদা ও শমসের মবিন চৌধুরীর ভাইস চেয়ারম্যান পদ শূন্য হয়েছে। আসন্ন কাউন্সিলে এ দু’টি পদে দেখা যাবে নতুন মুখ।
রাজিয়া ফয়েজের মৃত্যুতে শূন্য হয়ে আছে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যানের আরেকটি পদ। কাউন্সিলের মাধ্যমে এ পদটিও পূর্ণ করতে হবে খালেদা জিয়াকে।
এ ছাড়া প্রবীণ নেতা শাহ মোয়াজ্জেম হোসেন, সেলিমা রহমান, মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমেদ বীর বিক্রম, আব্দুল্লাহ আল নোমান ও সাদেক হোসেন খোকার সমুহ সম্ভাবনা রয়েছে স্থায়ী কমিটিতে ঢুকে পড়ার।
এই পাঁচ নেতার স্থায়ী কমিটিতে ঠাঁই হলে ভাইস চেয়ারম্যানের আরো ৫টি পদ শূন্য হবে। এগুলোতে বসাতে হবে নতুন মুখ।
মোট কথা, ভাইস চেয়ারম্যানের ১৬টি পদের মধ্যে এম মোর্শেদ খান, এয়ার ভাইস মার্শাল (অব.) আলতাফ হোসেন চৌধুরী ও চৌধুরী কামাল ইবনে ইউছুফ ছাড়া বাকি ১৩টি পদেই নতুন মুখ আনতে হবে বিএনপি প্রধানকে।
সূত্রমতে, এই ১৩টি পদের মধ্যে অন্তত ৮টি পদে দেখা যেতে পারে তরুণ রাজনীতিকদের।
এদের মধ্যে সবচেয়ে বড় ‘চমক’ হতে পারেন যুবদল সভাপতি সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল।
জানা গেছে, তরুণ এই নেতাকে দলের যুব বিষয়ক সম্পাদক থেকে এক টানে ভাইস চেয়ারম্যান করতে যাচ্ছেন খালেদা জিয়া। বক্তৃতাদানে পটু এবং লেখা-পড়ায় অভ্যস্ত মোয়াজ্জেম হোসেন আলালের ভাইস চেয়ারম্যান হওয়া এখন সময়ের ব্যাপার বলে জানা গেছে।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল বাংলানিউজকে বলেন, আমার পূর্বসূরিরা যুবদলের সভাপতি থাকা অবস্থায় স্থায়ী কমিটির সদস্য হয়েছেন। এখন যদি আমাকে ৭ নম্বর যুগ্ম মহাসচিব বানায়, সেটা কি আমি গ্রহণ করব? সেক্ষেত্রে আরো একটু বড় পদ আমি আশা করতেই পারি। তবে দলের চেয়ারপারসন যে সিদ্ধান্ত নেবেন, সেটি মাথা পেতে নিতে প্রস্তুত আছি। তিনি যেখানেই রাখেন, সেখান থেকেই কাজ করে যাবো।
সূত্রমতে, বর্তমান কমিটির যুগ্ম মহাসচিব আমান উল্লাহ আমান, মো. শাহজাহান ও রুহুল কবির রিজভীকে দলের ভাইস চেয়ারম্যান হিসেবে নিয়োগ দেওয়ার ব্যাপারে নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়ে রেখেছেন খালেদা জিয়া। এই তিন নেতা বর্তমান কমিটির যে কোনো ভাইস চেয়ারম্যানের চেয়ে বয়সে তরুণ। তবে বিএনপির রাজনীতিতে এদের সক্রিয় ভূমিকা নিয়ে কোনো পক্ষের কোনো আপত্তি নেই বলে জানা গেছে।
ছাত্র রাজনীতি থেকে উঠে আসা আমান উল্লাহ আমানের জন্য ভাইস চেয়ারম্যানের পদটি যথার্থ বলেই মনে করেন দলটির বেশির ভাগ নেতা।
অন্যদিকে দপ্তরে বসে দলের দু:সময়ে ঝুঁকি নিয়ে দায়িত্ব পালন করে খালেদা জিয়ার আস্থাভাজন হয়ে ওঠা রুহুল কবির রিজভীর ভাইস চেয়ারম্যান পদটি নিয়েও কোনো বিতর্কে পড়তে হবে না বিএনপির হাইকমান্ডকে।
আর সম্প্রতিকালে খালেদা জিয়া অর্পিত দলের সাংগঠনিক দায়িত্ব পালন করে নিজের যোগ্যতার প্রমাণ দিয়েছেন মো. শাহজাহান। তরুণ এই নেতার জন্য দলের ভাইস চেয়ারম্যান পদটি বেশি উপযোগী মনে করছেন বিএনপির শীর্ষ নেতৃত্ব।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে মো. শাহজাহান বাংলানিউজকে বলেন, কাকে কোন পদ দেবেন, সেটা একমাত্র ম্যাডামই ভাল জানেন। আমরা কেউ কিছু জানি না। তবে আপনাদের যে হিসাব নিকাষ, তার বাইরে হয়তো কিছু যাবে না।
সূত্রমতে, বর্তমান কমিটির আরেক যুগ্ম মহাসচিব সালাহ উদ্দিন আহমেদকেও ভাইস চেয়ারম্যান করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন খালেদা জিয়া। অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার শিকার হয়ে এই মুহূর্তে ভারতের মেঘালয় রাজ্যের রাজধানী শিলংয়ে অবস্থানরত সালাহ উদ্দিন আহমেদকে ভাইস চেয়ারম্যান পদে বসিয়ে ঋণ শোধ করতে চান বিএনপি প্রধান।
এ ছাড়াও ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা শামসুজ্জামান দুদু, আহমেদ আযম খান, যুগ্ম মহাসচিব বরকত উল্লাহ বুলু, ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দীন খোকনের মত তরুণ নেতারাও পেয়ে যেতে পারেন বিএনপির এলিট পোস্ট ভাইস চেয়ারম্যান পদ।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বাংলানিউজকে বলেন, বাইরে থেকে তো কাউকে আনা হবে না। বিএনপি নেতাদের দিয়েই তো কমিটি গঠন করা হবে। সেক্ষেত্রে যে নামগুলো আপনি বলছেন, এদের ভেতর থেকেই তো নেতৃত্ব নির্বাচন করা হবে। এখন কে কোন পদ পাবেন, তা দেখার জন্য কাউন্সিল পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে।
বাংলাদেশ সময়: ০৮২৫ ঘণ্টা, মার্চ ১১, ২০১৬
এজেড/জেডএম