ঢাকা, বুধবার, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ২৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

রাজনীতি

সিরাজগঞ্জ থেকে মান্নান মারুফ

বিদ্রোহী প্রার্থীরাই মূল ফ্যাক্টর

মান্নান মারুফ ও স্বপন চন্দ্র দাস | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০১১ ঘণ্টা, মার্চ ১১, ২০১৬
বিদ্রোহী প্রার্থীরাই মূল ফ্যাক্টর ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

সিরাজগঞ্জ থেকে:  আওয়ামী লীগ ও বিএনপির বিদ্রোহী প্রার্থীরাই মূল ফ্যাক্টর হয়ে দাঁড়িয়েছে। সিরাজগঞ্জ জেলার রায়গঞ্জ উপজেলার ৯টি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান প্রার্থীদের মধ্যে প্রচার প্রচারণায় এমনটাই মনে করছেন সাধারণ ভোটাররা।


 
বৃহস্পতিবার (১০ মার্চ) উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে সরেজমিনে ঘুরে নির্বাচনী এলাকায় সাধারণ ভোটারদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এলাকায় নৌকা ও ধানের শীষের তুলনায় স্বতন্ত্র প্রার্থীরাই প্রচারণায় এগিয়ে রয়েছেন। তবে আওয়ামী লীগ মনোনীতরা নিজেদের বিজয় অনেকটা নিশ্চিত মনে করে ফুরফুরে মেজাজে রয়েছেন।

অপরদিকে, বিজয় ছিনিয়ে নেওয়ার আশঙ্কায় বিএনপি মনোনীতরা ঢিমেতালে প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন। তাদের মধ্যে মামলা এবং গ্রেফতারের ভয় কাজ করছে বলেও জানান স্থানীয় বাসিন্দা।

ধামাইনগর
এ ইউনিয়নে রাইসুল হাসান সুমন (আ. লীগ প্রার্থী), গোলাম রব্বানী (আ. লীগ বিদ্রোহী প্রার্থী), ইমতিয়াজ মাহমুদ খোকন (বিএনপি প্রার্থী) ও মোখলেছার রহমান (ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ প্রার্থী)।

এর মধ্যে সদ্য পদত্যাগী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি গোলাম রব্বানী গত ২০১১ সালের নির্বাচনে মাত্র ২১০ ভোটে বিএনপি প্রার্থীর কাছে পরাজিত হন। এ নির্বাচনে তিনি দলীয় মনোনয়ন চেয়ে ব্যর্থ হয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে আনারস প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করছেন। তবে এখানে বিএনপির একক প্রার্থী মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন। একক প্রার্থী হওয়ার কারণে তিনি খোস মেজাজে আছেন। তবে ভোটারদের মধ্যে রয়েছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া। কেউ মনে করছেন বিদ্রোহী প্রার্থীর অবস্থা ভালো, আবার কউ মনে করছেন বিএনপি প্রার্থীর অবস্থা ভালো।

কোনো কোনো ভোটার মনে করছেন আওয়ামী লীগ এখন ক্ষমতায়, তাই আওয়ামী লীগ প্রার্থীকে নির্বাচিত করলে এলাকায় উন্নয়ন হবে। তিন প্রার্থীর অবস্থাই ভালো, লড়াই হবে হাড্ডাহাড্ডি।

সোনাখাড়া
আবু হেনা মোহাম্মাদ মোস্তফা কামাল (আ. লীগ প্রার্থী), শহিদুল ইসলাম সরকার (আ. লীগ বিদ্রোহী), রণজিত কুমার মাহাতো (আ. লীগ বিদ্রোহী) টি এম আব্দুল মজিদ (আ. লীগ বিদ্রোহী), আব্দুল কুদ্দুস মন্ডল (বিএনপি প্রার্থী) ও আব্দুল কুদ্দুস শেখ (স্বতন্ত্র)।

এ ইউনিয়নের টানা দুবার নির্বাচিত বর্তমান চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি আমজাদ হোসেন ছানা দলীয় মনোনয়ন না পাওয়ায় চারজন বিদ্রোহী প্রার্থী মাঠে রয়েছেন। সেক্ষেত্রে একক প্রার্থী থাকায় অনেকটা নিশ্চিন্তে রয়েছে বিএনপি।
 
ধুবিল
আব্দুল করিম সরকার ভোলা (আ. লীগ প্রার্থী), হাসান ইমাম তালুকদার (বিএনপি প্রার্থী), আব্দুল করিম রেজা (আ. লীগ বিদ্রোহী) ও আবুল হাশেম (বিএনপি বিদ্রোহী)। এখানে দু’দলেরই বিদ্রোহী প্রার্থীরাই প্রচারণায় এগিয়ে রয়েছেন।  

ঘুড়কা
জিলুর রহমান সরকার (আ. লীগ প্রার্থী), আবু সাইদ ভুঁইয়া (বিএনপি প্রার্থী), মো. ওসমান গণি (স্বতন্ত্র প্রার্থী), শহীদ হাসান ভুঁইয়া (বিএনপি বিদ্রোহী) ও সিরাজুল ইসলাম তালুকদার (আ. লীগ বিদ্রোহী প্রার্থী)।
 
চান্দাইকোনা
আলহাজ আব্দুল হান্নান খান (আ. লীগ প্রার্থী), খন্দকার শামিমুল হাসান (বিএনপি প্রার্থী) ও আবু হানিফ খান (আ. লীগ বিদ্রোহী)।
 
ধানগড়া
মীর ওবায়দুল ইসলাম মাসুম (আ. লীগ প্রার্থী), মো. শামছুল ইসলাম (বিএনপি প্রার্থী), এস এম সরওয়ার্দী (জাতীয় পার্টি প্রার্থী), রুহুল আমিন জিহাদী (জামায়াত সমর্থিত স্বতন্ত্র প্রার্থী)।
 
নলকা
বতর্মমান চেয়ারম্যান আবু বকর সিদ্দিক (আ. লীগ), আব্দুল গফুর (বিএনপি), মোহাম্মাদ আব্দুল জাব্বার (স্বতন্ত্র), তারিকুল ইসলাম (জামায়াত সমর্থিত স্বতন্ত্র) ও আজাদুর রহমান তালুকদার (বিএনপি বিদ্রোহী)। এ ইউনিয়ন বিএনপির একাধিক বিদ্রোহী প্রার্থীর পাশাপাশি জামায়াত প্রার্থী দেয়ায় অনেকটা নিশ্চিন্তেই রয়েছেন আওয়ামী লীগের একক প্রার্থী আবু বক্কার সিদ্দিক।
 
পাঙ্গাসী
বর্তমান চেয়ারম্যান আব্দুস সালাম (আ. লীগ প্রার্থী), মজিবর রহমান মল্লিক, আলমগীর কবির খান (আ. লীগ বিদ্রোহী) ও সালাউদ্দিন সেখ (জামায়াত সমর্থিত স্বতন্ত্র প্রার্থী)।
 
ব্রহ্মগাছা
গোলাম ছরওয়ার লিটন (আ. লীগ প্রার্থী), আবুল কালাম (বিএনপি প্রার্থী), বর্তমান চেয়ারম্যান নাসির উদ্দিন মাহমুদ নাজির (আ. লীগ বিদ্রোহী), আনিছুর রহমান (বিএনপি বিদ্রোহী) ও  মফিজুর  রহমান শামিম (জামায়াত সমর্থিত স্বতন্ত্র)।
 
ব্রহ্মগাছা ইউনিয়নের ৬নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্দুল মান্নান, ৭নং ওয়ার্ডের সভাপতি সোহরাব আলী, ওয়ার্ড যুবলীগের সভাপতি সৈয়দ হাসান ফাত্তাহ, সোনাখাড়া ইউনিয়নের শ্রী রামপুর গ্রামের হায়দার আলী, আওয়ামী লীগ কর্মী শ্যামল কুমার মাহাতো, গোপালপুরের আওয়ামী লীগ কর্মী আয়নাল, দোস্তপাড়ার আব্দুল মালেক, রুপাখাড়া গ্রামের মিলন হোসেন, শ্রীরামপুর গ্রামের আব্দুস সাত্তারসহ অসংখ্য নেতাকর্মী ও ভোটারদের সঙ্গে কথা হয়।

তারা বলেন, প্রতীক নয়, মানুষ চিনে ভোট দেব। নৌকা-ধানের শীষ যদি অযোগ্য মানুষের কাছে তুলে দেওয়া হয়, আমরা তো তাদের ভোট দিতে পারি না।

ঘুড়কা ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আইয়ূব আলী মাস্টার বাংলানিউজকে বলেন, তৃণমূলের মতামত না নিয়ে দলীয় প্রার্থী মনোনয়ন দেওয়ায় নেতাকর্মীদের মধ্যে চরম অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। নির্বাচনের ফলাফলে এর বিরুপ প্রভাব পড়তে পারে।
 
নলকা ইউনিয়নের বিএনপির বিদ্রোহী চেয়ারম্যান প্রার্থী আজাদুর রহমান তালুকদার বলেন, গত নির্বাচনে সামান্য ভোটে পরাজিত হয়েছি। তারপরও দল আমাকে মনোনয়ন দেয়নি। তৃণমূলের নেতাকর্মীরা আমার পক্ষে রয়েছে।
 
ব্রহ্মগাছা ইউনিয়নের বর্তমান চেয়ারম্যান নাসির উদ্দিন মাহমুদ নাজির বাংলানিউজকে বলেন, তৃণমূলের সর্বোচ্চ ভোট পেলেও উপজেলা আওয়ামী লীগের কারসাজির কারণে মনোনয়ন পাইনি। আগামী নির্বাচনে আমার এলাকার জনগণ ভোটের মাধ্যমে এর জবাব দেবে।
 
সোনাখাড়া ইউনিয়নের আওয়ামী লীগ বিদ্রোহী চেয়ারম্যান প্রার্থী আব্দুল মজিদ তালুকদার বলেন, এ ইউনিয়নে এমন একজনকে দলীয় প্রার্থী করা হয়েছে, যিনি ভোট চাইতেও এলাকায় আসতে পারছেন না। দলীয় সিদ্ধান্তের দিকে না তাকিয়ে এলাকার মানুষের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে আমি প্রার্থী হয়েছি। সুষ্ঠু নির্বাচন হলে আমার বিজয় শতভাগ সুনিশ্চিত।
 
পাঙ্গাসী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী আব্দুস সালাম বলেন, সততার সঙ্গে কাজ করেছি। এলাকার মানুষের পাশে থেকেছি। এ জন্য দল আমাকে মনোনয়ন দিয়েছে।
 
‘দীর্ঘদিন পর জনগণ ধানের শীষ মার্কায় ভোট দেওয়ার সুযোগ পেয়েছে। অন্য কোনো প্রতীক নয়, বিএনপি সমর্থকরা ধানের শীষেই ভোট দেবে’- বলেন ঘুড়কা ইউনিয়নের বিএনপি প্রার্থী আবু সাঈদ।
 
ধামাইনগর ইউনিয়নের আওয়ামী লীগ প্রার্থী রাইসুল হাসান সুমন বলেন, জননেত্রী শেখ হাসিনার প্রতীক নৌকা, উন্নয়নের প্রতীত নৌকা। তাই নৌকার বিজয়ই সুনিশ্চিত।  

রায়গঞ্জ উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ও ধানগড়া ইউপি চেয়ারম্যান প্রার্থী শামছুল ইসলাম বলেন, ‘এ নির্বাচনে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার প্রতীক ধানের শীষের জোয়ার এসেছে। সুষ্ঠু নির্বাচন হলে আমাদের প্রার্থীরা বিজয়ী হবে। তবে সরকার দলীয়দের বিরুদ্ধে মামলা, হামলা ও ভয়ভীতি প্রদর্শনের অভিযোগ এনে তিনি বলেন, নির্বাচন আদৌ সুষ্ঠু হবে, না ভোট জালিয়াতি হবে তা নিয়ে আশঙ্কায় রয়েছি আমরা। ’

যারা দলের সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে নির্বাচন করছেন। তাদের ইতোমধ্যে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। আর যে সব নেতাকর্মীরা তাদের পক্ষে কাজ করছে তাদের বিরুদ্ধেও সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানান উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শরীফুল ইসলাম শরীফ।

আগামী ২২ মার্চ ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচনের প্রথম ধাপে রায়গঞ্জ উপজেলার ৯টি ইউনিয়ন পরিষদে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এতে চেয়ারম্যান, সাধারণ সদস্য ও সংরক্ষিত মহিলা সদস্য পদে মোট ১১৭টি পদের বিপরীতে ৫০৯ জন প্রার্থী ভোট যুদ্ধে নেমেছেন। এদের মধ্যে চেয়ারম্যান পদে ৪০, সংরক্ষিত মহিলা সদস্য পদে ১০৪ এবং ৩৬৫ জন সাধারণ সদস্য প্রার্থী রয়েছেন।

বাংলাদেশ সময়: ১০১২ ঘণ্টা, মার্চ ১১, ২০১৬
এমএম/টিআই

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।