ফেনী থেকে: বিএনপির দূর্গ বলে খ্যাত ফেনীতে এখন আওয়ামী লীগের জমজমাট অবস্থা। রাজনৈতিক ও সাংগঠনিকভাবে শক্ত অবস্থান তৈরি করে নিয়েছে ক্ষমতাসীন এ দলটি।
আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতাকর্মীর সঙ্গে কথা বলে এবং খোঁজখবর নিয়ে জানা গেছে, দলের জেলা উপজেলা পৌরসভাসহ সব পর্যায়েই সচল কমিটি রয়েছে। দল ও সংঠনের উপর নেতিবাচক প্রভাব পড়ার মত আভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব নেই বললেই চলে।
২০১২ সালের ২৬ ডিসেম্বর জেলা সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এর পরেই অনুষ্ঠিত হয় ৬টি উপজেলা সম্মেলন। সবগুলোতেই কমিটি রয়েছে। জেলার ৫টি পৌরসভাতেও আওয়ামী লীগের কমিটি রয়েছে। দলের সব কার্যক্রম চলছে পূর্ণ উদ্যোমে। যে কোনো কর্মসূচি জাঁকজমকভাবে পালন করা হয় বলে জানা গেছে। প্রতিটি কর্মসূচিতেই নেতাকর্মীদের অংশগ্রহণে রয়েছে স্বতঃস্ফূর্ততা।
এদিকে আগে দলের মধ্যে প্রুপিং ও আভ্যন্তরীণ কোন্দল থাকলেও বর্তমানে সেটা নেই বলে জানা গেছে। ফেনীর এক সময়কার প্রভাবশালী নেতা জয়নাল হাজারী এবং ফেনী সদরের বতর্মান এমপি নিজাম হাজারীর মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে চলে আসা দ্বন্দ্বের বলতে গেলে অবসান ঘটেছে। তবে এ অবসান কোনো সমঝোতার অবসান নয়। দীর্ঘদিন ধরে জয়নাল হাজারী ফেনীতে ঢুকতে পারছেননা। ফলে জয়নাল হাজারীর কিছু সমর্থক যারা আছেন তারা আর গ্রুপিং বা কোনো কোন্দলে জড়াচ্ছেন না।
অনেকেই ভয়ে কথা বলেন না। বিশেষ করে ২ বছর আগে ফুলগাজী উপজেলা চেয়ারম্যান একরামুল হক একরাম হত্যার পর জয়নাল হাজারীর সমর্থকরা গ্রুপিং থেকে আরো দূরে সরে গেছেন। কথিত আছে একরামুল হক একরাম জয়নাল হাজারীর সমর্থক ছিলেন। জয়নাল হাজারীর গ্রুপ দূর্বল হয়ে পড়ায় ফেনী আওয়ামী লীগকে এখন আর কোন দ্বন্দ্ব বা গ্রুপিংয়ে পড়তে হচ্ছেনা।
এদিকে দলে আভ্যন্তরীণ কোন্দল বা গ্রুপিং না থাকার কারণে এক সময়ের প্রধান রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ বিএনপির দূর্গ বলে খ্যাত ফেনীর সার্বিক রাজনীতি এখন আওয়ামী লীগের অনুকূলে। জেলা, উপজেলাসহ প্রতিটি পর্যায়েই রয়েছে আওয়ামী লীগের শক্ত সাংগঠনিক ও রাজনৈতিক অবস্থান।
গত উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে ফেনীর ছয় উপজেলার প্রতিটিতেই আওয়ামী লীগের চেয়্যারম্যান প্রার্থীরা বিপুল ভোটে জয় লাভ করে। জেলার ৫টি পৌরসভার মধ্যে গত ডিসেম্বরে অনুষ্ঠিত তিনটি পৌরসভা নির্বাচনেই আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থীরা জয় লাভ করেছে, বাকি ২টি পৌরসভায় ২য় ও ৩য় ধাপে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এ ২টি পৌরসভায়ও আওয়ামী লীগের অবস্থা ভাল বলে জানা গেছে।
বিএনপির অবস্থান দিন দিন দূর্বল হয়ে পড়ায় এ জেলার রাজনীতিতে শক্ত কোন রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের মুখোমুখি হতে হচ্ছেনা আওয়ামী লীগকে।
জেলা জাতীয় পার্টির একমাত্র শক্তি, জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব হাজী আলাউদ্দিন গত বছরের নভেম্বরে জেলার ১৫১ সদস্য কমিটির সবাইকে নিয়ে আওয়ামী লীগে যোগ দেন। এক সময় তিনি ফেনীতে টাইগার বাহিনী নামে বিশাল ক্যাডার বাহিনী পরিচালনা করতেন। তার এ যোগদানের মধ্য দিয়ে ফেনীতে জাতীয় পার্টির অস্তিত্ব বিলীন হয়ে যায়। যোগদানের পরেই আওয়ামী লীগ তাকে পৌরসভার মেয়র পদে মনোনয়ন দেন এবং তিনি নির্বাচিত হন।
এছাড়া বিএনপি থেকেও বেশ কিছু নেতাকর্মী সম্প্রতি আওয়ামী লীগে যোগদান করেছেন। এর মধ্যে খালেদা জিয়ার চাচা ফুলগাজীর সামু চেয়ারম্যান অন্যতম। আরো কিছু নেতা-কর্মী আসার জন্য নানা ভাবে তৎপরতা চালাচ্ছেন বলে জানা গেছে।
এদিকে যুবলীগ, ছাত্রলীগসহ দলের সহযোগী সংগঠনগুলোও ফেনীতে শক্ত অবস্থানে আছে। এসব সংগঠনের জেলা উপজেলাসহ সব পর্যায়েই কমিটি রয়েছে। এ সংগঠনগুলো নিয়মিত ভাবেই নিজস্ব কর্মসূচি যথাযথ ভাবে পালন করছে বলে জানা গেছে।
তবে সাংগঠনকি অবস্থা গতিশীল থাকলেও কমিটির মেয়াদ শেষ হওয়ার পরপরই সম্মেলন করার যে নিয়ম রয়েছে তা বাস্তবায়ন হয়নি। তিন বছর মেয়াদোর্ত্তীর্ণ হওয়ার পরপরই আগামী ২৮ মার্চ আওয়ামী লীগের জাতীয় সম্মেলন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। এ সম্মেলনের আগে সারাদেশে জেলা উপজেলা পর্যায়ে সম্মেলনের নির্দেশ দেওয়া হয়। সে অনুযায়ী সম্মেলন অনুষ্ঠানের কথা থাকলেও ফেনী জেলা উপজেলা কোনটিতেই সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়নি। নেতারা বলছেন ফেনী জেলা, উপজেলার সবগুলো কমিটির মেয়াদই সবে মাত্র পার হলো তাই এখনও সম্মেলন করা হয়নি।
এ বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে ফেনী জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবদুর রহমান বিকম বাংলানিউজকে বলেন, এত তাড়াহুড়ার কিছু নেই, আমরাতো সম্মেলন করেছি। সবে মাত্র গত ডিসেম্বরের ২৬ তারিখ আমাদের তিন বছর মেয়াদ পূর্ণ হয়েছে। কত জেলায়তো ১০/১২ বছর ধরে সম্মেলন হচ্ছেনা। তারপরও আমরা প্রস্তুত আছি কেন্দ্র থেকে নির্দেশ পেলেই সম্মেলন করে ফেলবো।
বাংলাদেশ সময় ০০৩২ ঘন্টা, মার্চ ১২, ২০১৬
এসকে/আরএ