ঢাকা, বুধবার, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ২৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

রাজনীতি

রাজশাহীর ৭১ ইউনিয়নে জয়ী হতে চায় আ’লীগ

মান্নান মারুফ ও শরীফ সুমন | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১১৪ ঘণ্টা, মার্চ ১২, ২০১৬
রাজশাহীর ৭১ ইউনিয়নে জয়ী হতে চায় আ’লীগ

রাজশাহী: আসন্ন ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনকে সামনে রেখে রাজশাহী জেলার ৯ উপজেলার ৭১ ইউনিয়নেই এবার জয়ী হতে চায় ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ।

বর্তমানে জেলার অধিকাংশ ইউনিয়ন দখলে রয়েছে বিএনপি-জামায়াত সমর্থিতদের।

আর গুটি কয়েক ইউনিয়ন দখলে রয়েছে আওয়ামী লীগের।

এ জন্য বিগত ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে তৃণমূলকে প্রাধান্য না দিয়ে অর্থের বিনিময়ে প্রার্থী মনোনয়ন দেওয়াটাকেই দায়ী করেছেন আওয়ামী লীগের একাধিক সিনিয়র নেতা।

সিনিয়র নেতাদের দাবি, এবার তৃণমূলের মতামত নিয়ে প্রার্থী মনোনয়ন দেওয়া হলে সব ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের দখলে আসবে। রাজশাহীতে দ্বিতীয় দফায় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাওয়ায় দলীয় পরিচয় ও প্রতীকের নির্বাচনে মনোনয়ন পেতে জোর লবিং শুরু করেছেন প্রার্থীরা।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রাজশাহী জেলার ৯টি উপজেলায় মোট ইউনিয়নের সংখ্য ৭১টি। এ ৭১টি ইউনিয়নের মধ্যে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের দখলে রয়েছে মাত্র ২১টি ইউনিয়ন। আর বিএনপির দখলে রয়েছে ৪৫টি ইউনিয়ন। এছাড়া বিএনপি জোটের শরিক জামায়াতের দখলে রয়েছে ৫টি ইউনিয়ন।

এর মধ্যে বাগমারা উপজেলায় ১৬টি ইউনিয়নের মধ্যে ক্ষমতাসীন আ’ লীগের দখলে রয়েছে মাত্র ৬টি ইউনিয়ন। ৯টি বিএনপি ও ১টি জামায়াতের দখলে রয়েছে। এ উপজেলায় এবার সবগুলো ইউনিয়ন দখলে নিতে আটঘাট বেধে মাঠে নেমেছেন আ’লীগের নেতাকর্মীরা।

স্থানীয় সংসদ সদস্য (এমপি) ইঞ্জিনিয়ার এনামুল হক, উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা আ’লীগের সাধারণ সম্পাদক জাকিরুল ইসলাম সান্টু এবং তাহেরপুর পৌরসভার মেয়র আবুল কালাম আজাদ ইতোমধ্যে ইউনিয়ন পর্যায়ের নেতাদের দিক নির্দেশনা দেওয়া শুরু করেছেন বলে জানা গেছে।

গত রোববার বাগমারা উপজেলা নারী উন্নয়ন ফোরাম ও সংরিক্ষত নারী সদস্যদের সঙ্গে মতবিনিময় অনুষ্ঠানেও একই বক্তব্য দিয়েছেন আ’লীগের ওই তিন সিনিয়র নেতা।

মোহনপুর উপজেলার ৬টি ইউনিয়নের মধ্যে আ’লীগের দখলে রয়েছে মাত্র ১টি ইউনিয়ন। ৪টি বিএনপি ও ১টি জামায়াতের দখলে রয়েছে।

গোদাগাড়ী উপজেলায় ৯টি ইউনিয়নের মধ্যে ৩টি আ’লীগের, ৫টি বিএনপি ও ১টি ইউনিয়ন জামায়াতের দখলে রয়েছে। এ উপজেলার মোহনপুর ইউনিয়ন থেকে খায়রুল ইসলাম স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচিত হলেও পরবর্তিতে তিনি আ’লীগে যোগ দেওয়ার ফলে আ’লীগের দখলে আসে ৩টি ইউনিয়ন।

তানোর উপজেলায় মোট ইউনিয়নের সংখ্যা ৭টি। এর মধ্যে আ’লীগের দখলে রয়েছে ৪টি ও বিএনপির দখলে রয়েছে ৩টি ইউনিয়ন।

চারঘাট উপজেলার ৬টি ইউনিয়নের মধ্যে আ’লীগের ৩টি ও বিএনপির ৩টি ইউনিয়ন দখলে রয়েছে। দলীয় পরিচয় ও প্রতীকে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলেও এ উপজেলার শলুয়া ইউনিয়নটি এবার বিএনপির দখলে চলে যেতে পারে। কেননা এ ইউনিয়নে বিগত নির্বাচনে জামায়াত বিএনপিকে ছাড় না দিলেও এবার বিএনপির একক প্রার্থী এ ইউনিয়নে দেওয়া হবে বলে ইতোমধ্যে নিশ্চিত করেছে দলটি।

বাঘা উপজেলার ৬টি ইউনিয়নের মধ্যে গত ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে বাজু বাঘা ইউনিয়ন ছাড়া সবগুলো ইউনিয়ন দখলে নেয় বিএনপি। নির্বাচনের কিছুদিন পর বাজু বাঘা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ফারুক হোসেন মারা গেলে বিএনপি সমর্থিত ইউপি সদস্য তোফাজ্জল হোসেন জান্নাতকে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের দায়িত্ব দেওয়া হয়। ফলে সব গুলো ইউনিয়নই বিএনপির দখলে চলে যায়।

পবা উপজেলার ৮টি ইউনিয়নের মধ্যে ২টি আ’লীগ, ৫টি বিএনপি ও ১টি ইউনিয়ন জামায়াতের দখলে রয়েছে। দলীয় পরিচয় ও প্রতীকে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলেও নির্বাচন যদি প্রভাব মুক্ত হয় তাহলে চিত্রটা একই রকম থাকতে পারে বলে জানা গেছে।

পুঠিয়া উপজেলায় ৬টি ইউনিয়নের মধ্যে বিগত নির্বাচনে ১টিতে আ’লীগ, ৩টিতে বিএনপি ও ১টি জামায়াত সমর্থিত প্রার্থী বিজয়ী হয়। পরে ভালুকগাছী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ওয়ায়েজুল ইসলাম বাচ্চুর সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যু হলে সেখানে আ’লীগ সমর্থিত ইউপি সদস্য আব্দুল করিমকে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান করা হয়। ফলে এ উপজেলায় ৬টি ইউনিয়নের মধ্যে শিলমাড়িয়া ও ভালুকগাছী ছাড়া বাকি ইউনিয়ন গুলো বিএনপি-জামায়াতের দখলে রয়েছে।

দুর্গাপুর উপজেলায় মোট ইউনিয়নের সংখ্যা ৭টি। এ উপজেলায় বিগত ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে সবগুলো ইউনিয়নেই বিএনপি সমর্থিত প্রার্থী জয়ী হয়। ফলে প্রশ্নের মুখে পড়ে এখানকার আ’লীগের ভাবমূর্তি। এ উপজেলা আ’লীগের ভোট ব্যাংক হিসেবে পরিচিত হলেও কেন ৭টি ইউনিয়নেই দলীয় প্রার্থীদের পরাজয় ঘটেছে তার উত্তর খুঁজতে গিয়ে দেখা গেছে তৃণমূলের মতামত উপেক্ষা করে টাকার বিনিময়ে অযোগ্য ব্যক্তিদের মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। যার ফলে দলীয় মনোনীত প্রার্থীর কাছ থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয় তৃণমূলের সাধারণ ভোটাররা। আবার কোনো কোনো ইউনিয়নে একাধিক বিদ্রোহী প্রার্থী থাকার কারণেও পরাজিত হতে হয়েছে দলীয় প্রার্থীদের।

আ’লীগের সিনিয়র নেতাদের অভিমত, যেহেতু আসন্ন নির্বাচন দলীয় পরিচয় ও প্রতীকেই অনুষ্ঠিত হবে সে কারণে সাধারণ ভোটাররা এলাকার উন্নয়নের জন্য বর্তমান ক্ষমতাসীন আ’লীগের প্রার্থীকেই ভোট দেবেন। কেননা এবারের নির্বাচনে দলীয় প্রার্থীরা নির্বাচিত হতে না পারলে এলাকার উন্নয়ন কর্মকাণ্ড অনেকটাই বাধাগ্রস্ত হবে।

বাংলাদেশ সময়: ১১১৪ ঘণ্টা, মার্চ ১২, ২০১৬
এমএম/এসএস/ওএইচ/এসএইচ

** আন্ডারগ্রাউন্ডে জামায়াত, জুনিয়র গ্রুপ সক্রিয়

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।