সিরাজগঞ্জ থেকে ফিরে: মামলার ভয়ে ও গ্রেফতার এড়াতে সিরাজগঞ্জ বিএনপির অধিকাংশ নেতাকর্মীই সামনে আসছে না। অনেকটা আত্মগোপনে রয়েছেন তারা।
২০১১ সালে ট্রেন পোড়ানো মামলা থেকে শুরু করে ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির পর সরকার পতন আন্দোলনে নাশকতার অভিযোগে নেতাকর্মীদের নামে দেড় শতাধিক মামলা হয়েছে। এসব মামলায় গ্রেফতার এড়াতে বা নতুন করে মামলা থেকে রক্ষা পেতে রাজনীতিতে সক্রিয় নেই সিরাজগঞ্জ জেলা বিএনপির প্রথম সারির নেতারা।
সম্প্রতি একটি মামলার রায়ে বিএনপি-জামায়াতের ২৮ নেতাকর্মীর বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দিয়েছে রাজশাহী দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল। এতে করে আতঙ্কটা বেড়েছে।
সদ্য সমাপ্ত পৌর নির্বাচনে জেলার ৬টি পৌরসভায় দলীয় প্রার্থীরা পরাজিত হওয়ায় আসন্ন ইউপি নির্বাচনকে ঘিরেও ঐক্যবদ্ধ হতে পারেনি এ দলটি।
দলীয় সূত্র জানায়, চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা ও জেলা বিএনপির সভাপতি ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু’র একক নেতৃত্বে চলছে সিরাজগঞ্জ জেলা বিএনপি। টুকুর নেতৃত্বেই জেলা বিএনপির বিভিন্ন কর্মসূচি পালিত হয়ে আসছে।
অপরদিকে, ২৭ বছরে সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালনকারী হুমায়ন ইসলাম খান ২০১০ সালের কমিটিতে স্থান না পেয়ে কেন্দ্রীয় তাঁতী দলের সভাপতি নির্বাচিত হয়ে ঢাকায় রাজনীতি শুরু করছেন।
জেলা বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ও সাবেক পৌর মেয়র টি,এর,এম নুর-ই আলম হেলাল পৌর নির্বাচনে বার বার দলীয় মনোনয়ন চেয়ে ব্যর্থ হয়ে দলে নিস্ক্রিয় হয়ে পড়েছেন।
এছাড়া ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি মির্জা মোস্তফা বাংলানিউজকে জামান, সাধারণ সম্পাদক আসলাম উদ্দিন, শ্রমিকদল নেতা নিয়ামুল হক সাজু দলে স্থান না পেয়ে পৃথক একটি বলয় তৈরির চেষ্টায় রয়েছেন। কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য মেজর (অব.) হানিফ বিগত উপজেলা নির্বাচনে হেরে যাবার পর ঢাকাকেন্দ্রিক রাজনীতি শুরু করেন।
দলীয় একাধিক সূত্রমতে, ২০১০ সালের জেলা বিএনপি একটি হোটেলে ঘরোয়াভাবে সম্মেলন হয়। সম্মেলনে ইকবাল হাসান মাহমুদকে সভাপতি ও অ্যাডভোকেট মোকাদ্দেছ আলীকে সাধারণ সম্পাদক করা হয়। ৬ বছর পেরিয়ে গেলেও আর সম্মেলন হয়নি।
এছাড়াও ছাত্রদল ও স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বয়ক কমিটি করা হলেও এখনও সম্মেলনের মাধ্যমে পূর্ণাঙ্গ কমিটি হয়নি। অপরদিকে মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটি দিয়ে চলছে মহিলা দল ও কৃষকদল। যুবদলের কমিটির মেয়াদোত্তীর্ণ হয়েছে। মৎস্যজীবী দল, মুক্তিযোদ্ধা দল ও ওলামাদলের কার্যক্রম নেই।
জেলা কমিটি ছাড়াও ৯টি উপজেলা, ২টি থানা ও ৬টি পৌরসভার সাংগঠনিক কমিটি রয়েছে। বেশিরভাগ কমিটির মেয়াদ শেষ হলেও নানা কারণেই কাউন্সিল হয়নি। জেলা সদর ছাড়া অপর ৫টি সংসদীয় আসনে বিএনপি থেকে মনোনীত সাবেক এমপিরাও স্থানীয় রাজনীতিতে সময় না দেওয়ায় আরও হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়েছে নেতাকর্মীরা। বিভিন্ন উপজেলায় দলীয় কোন্দল থাকায় ঐক্যবদ্ধ হতে পারছে না দলটি।
উল্লাপাড়ায় সাবেক এমপি ও সভাপতি এম. আকবর আলী এবং উপজেলা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক আজাদ দুটিভাগে বিভক্ত হয়ে পড়লেও বর্তমানে উপজেলা বিএনপি আকবর আলীর দখলে রয়েছে।
চৌহালী-বেলকুচি সরকার বিরোধী আন্দোলনে জেলা সদরের পরই বেলকুচির স্থান ছিল। বর্তমানে কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আমিরুল ইসলাম আলীম ও শিল্পপতি রকিবুল করিম খান পাপ্পুর নেতৃত্বে দুটি গ্রুপে বিভক্ত রয়েছে বেলকুচি-চৌহালীর রাজনীতি।
শাহজাদপুরে বিএনপি কয়েকটি ভাগে বিভক্ত থাকায় সাংগঠনিক অবস্থা একেবারেই দুর্বল হয়ে পড়েছে। অধিকাংশ নেতাই সরকার দলের সঙ্গে আঁতাত করে চলছে। এ উপজেলায় সরকার বিরোধী কোনো আন্দোলন তো দূরের কথা কোনো হরতালই পালিত হয়নি।
কাজিপুরে বিএনপি একেবারেই কোণঠাসা। আওয়ামী অধ্যুষিত এলাকায় হওয়ায় বিএনপি কর্মীরা আন্দোলন তো দূরের কথা মুখ খুলতেই সাহস পাচ্ছে না।
রায়গঞ্জের দলের শক্তিশালী ভিত থাকলেও চাঙ্গা হয়নি আন্দোলন। উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক শামছুল ইসলামের নেতৃত্বে বেশ কিছু ঝটিকা মিছিল হয়েছে।
তাড়াশ উপজেলা বিএনপির সভাপতি নিজ এনজিও নিয়ে ব্যস্ত থাকায় দলে সময় দিতে পারছেন না বলে অভিযোগ রয়েছে।
এদিকে, জেলা বিএনপি কার্যালয়ের পিয়ন নজরুল ইসলাম বাংলানিউজকে জানান, পার্টি অফিসে নিয়মিতই নেতাকর্মীরা বসেন। তবে জেলা বিএনপির সভাপতি ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু ঢাকা থেকে এসে নিজ বাসভবনেই দলীয় কার্যক্রম পরিচালনা করেন। প্রায় ২ বছর ধরে তিনি পার্টি অফিসে আসেন না।
দলের প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের শাহাদত বার্ষিকী, খালেদা জিয়া ও তারেক জিয়ার কারামুক্তি এবং দলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীসহ বিভিন্ন দলীয় কর্মসূচি উপলক্ষে হাতে গোনা অর্ধশতাধিক নেতাকর্মী নিয়ে শুধু সংক্ষিপ্ত আলোচনা ও মিলাদ মাহফিলের মধ্যেই সীমাবদ্ধ রয়েছে।
জেলা বিএনপির প্রচার সম্পাদক হারুন-অর-রশিদ খান হাসান বাংলানিউজকে বলেন, বিএনপি ক্ষমতা ছাড়ার পর থেকে প্রায় দেড় শতাধিক রাজনৈতিক মামলা হয়েছে। এসব মামলায় কয়েক হাজার নেতাকর্মীকে আসামি করা হয়েছে। প্রত্যেক নেতাকর্মী গড়ে প্রায় ২০-২২টি মামলা মাথায় নিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। অনেক নেতাকর্মী জেল খাটছেন, অনেকে জেল থেকে জামিনে বের হয়ে নিজ জেলা ছেড়ে আত্মগোপনে রয়েছেন। এসব মামলার মধ্যে ২৭টি মামলার চার্জশিট হয়েছে। ২টি মামলার বিচারকাজ চলছে। আর একটির রায় হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, বর্তমান জেলা বিএনপি ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকুর নেতৃত্বে জেলাব্যাপী ঐক্যবদ্ধ রয়েছে। অতীতে আন্দোলন সংগ্রামে উল্লেখ যোগ্য ভুমিকা পালন করেছে নেতকর্মীরা। বর্তমানে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন নিয়েও ব্যস্ত সময় পার করছে।
এদিকে, চলতি বছরের ২ ফেব্রুয়ারি ব্রিজের পাটাতন খুলে ফেলা এবং ককটেল বিস্ফোরণ ঘটনায় দ্রুত বিচার আইনে পুলিশের দায়ের করা মামলায় জেলা যুবদল সভাপতিসহ ১৫ নেতাকর্মীর যাবজ্জীবন ও ১৩ নেতাকর্মীর বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দিয়েছেন রাজশাহী দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল।
বাংলাদেশ সময়: ১৪০৮ ঘণ্টা, মার্চ ১২, ২০১৬
এমএম/এসএইচ/পিসি/
** রাজশাহীর ৭১ ইউনিয়নে জয়ী হতে চায় আ’লীগ
** আন্ডারগ্রাউন্ডে জামায়াত, জুনিয়র গ্রুপ সক্রিয়