ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

রাজনীতি

বিএনপির রাজনীতি এখন তাবলীগ-চিল্লামুখী

খুলনা থেকে ফিরে ইকরাম-উদ দৌলা | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০০৯ ঘণ্টা, মার্চ ১২, ২০১৬
বিএনপির রাজনীতি এখন তাবলীগ-চিল্লামুখী ছবি: মানজারুল ইসলাম/বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

ঢাকা: সরকার বিরোধী আন্দোলনে গিয়ে দেশব্যাপী বিএনপির নেতা-কর্মীরা নাশকতার মামলায় জড়িয়ে পড়েছেন। অন্যদিকে রয়েছে দলটি সাংগঠনিক দুর্বলতা।

সবমিলিয়ে কুলিয়ে উঠতে না পেরে বর্তমানে খুলনা অঞ্চলের বিএনপি নেতা-কর্মীরা রাজনীতির বদলে অনেকটা ধর্ম-কর্ম নিয়েই ব্যস্ত আছেন।

মূলত এক সময়ের তুমুল জনপ্রিয় দলটি এখন সারাদেশেই প্রায় নেতৃত্ব শূন্য হয়ে পড়েছে। বিশেষ করে তৃণমূলে এ অবস্থা ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। এমনই শোচনীয় অবস্থা যে, নির্বাচনে এলেও তৃণমূলে প্রার্থী খুঁজে পায় না দলটি।

খুলনার জেলাগুলোতে সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, বর্তমান সরকার ২০০৮ সালে ক্ষমতায় আসার পর থেকে ভয়ে এলাকা ছাড়তে শুরু করে নেতা-কর্মীরা। এরপর দশম সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে লাগাতার হরতাল অবরোধে মামলায় জড়িয়ে পড়েন নেতা-কর্মীরা। আবার দশম সংসদ নির্বাচনের পর খালেদা জিয়ার আকস্মিকভাবে ডাকা অবরোধ কর্মসূচিতে সংঘটিত হয় বেপরোয়া সহিংসতা। এতে প্রশাসন আরো কঠোর অবস্থানে যায়। পরে ধড়পাকড় আর মামলা শুরু হলে জেলা পর্যায়ের নেতারা গা ঢাকা দেন। অনেক জায়গায় চাপে পড়ে যায় সাধারণ কর্মীরাও। সে থেকেই নেতা-কর্মীরা এলাকায় নেই বললেই চলে। থাকলেও প্রকাশ্যে তাদের বিচরণ জনসাধারণের চোখে খুব একটা পড়ে না।

আর এ অবস্থার কথা অকপটে স্বীকারও করলেন খুলনা মহানগর বিএনপির সভাপতি নজরুল ইসলাম মঞ্জু।

এলাকাসী বলছেন, নজরুল ইসলাম এ অঞ্চলে বিএনপির জনপ্রিয় নেতা। আর প্রশাসনের লোকজনও তাকে মান্য করে। সে হিসেবে এলাকায় কেবল তারই প্রকাশ্য বিচরণ। শুরু তাই নয় আসন্ন ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনেও তিনিই একমাত্র পরিত্রাণদাতা।

খুলনা অঞ্চলে যতগুলো ইউপি নির্বাচন হচ্ছে, তাতে অনেক জায়গায় প্রার্থী দেওয়ার মতো সাহসী কোনো নেতাকে খুঁজে পায়নি দলটি। অনেকে প্রার্থী হলেও তারা এলাকায় যেয়ে প্রচারণায় তেমন একটা অংশ নিচ্ছেন না। কেউ কেউ প্রকাশ্যে আসলেও অনেকটা চুপিসারেই ভোট চেয়ে বেড়াচ্ছেন।

এলাকাবাসী জানান, নজরুল ইসলাম মঞ্জু যেদিন কোনো ইউপিতে যান, কেবল সেদিনই প্রার্থী সামনে আসেন। ধানের শীষে ভোট চাওয়া হয়। অন্যথায়, পথসভার মতো প্রচারণাও চালান না প্রার্থীরা।

বাহিরদিয়া ইউনিয়নের আব্দুর রহিম নামে এক ভোটার বাংলানিউজকে বলেন, বিএনপি প্রার্থীকে দেখাই যায় না। তাই ভোট জমে নাই। তিনি বলেন, ‘ভয় থাকলে কি রাজনীতি হয়?’
 
নৈহাটি ইউনিয়নের ভোটার আকরাম হোসেন বলেন, ‘বিএনপির প্রার্থীর তেমন একটা প্রচারণা নেই। তবে তার জনপ্রিয়তা ভালোই। কিন্তু মানুষের কাছে না গেলে মানুষ ভোট দেবে কেন?’

এ বিষয়গুলো দৃষ্টিগোচর করা হলে নজরুল ইসলাম মঞ্জু বাংলানিউজকে বলেন, ‘খুলনায় বিএনপি সাংগঠনিকভাবে খুবই দুর্বল এ কথা বলার অপেক্ষা রাখে না। এখানকার সব নেতারাই এখন তাবলীগ-চিল্লামুখী। তারা এলাকায় কেউ থাকেন না। তাই নির্বাচনে ভালো প্রার্থী পাওয়া যায়নি। যাদের পাওয়া গেছে, তাদের মাঠের রাজনীতি করার মতন সাহস আর ত্যাগ স্বীকারের ইচ্ছা নেই। ‘

‘তবে তাদেরও দোষ দিয়ে লাভ নেই’ মন্তব্য করে তিনি বলেন, নেতাদের বিরুদ্ধে মামলা হলে প্রশাসনের লোক বাসায় এসে পিতা-মাতা না হলে সন্তানকে চার্জ করে। আগে এমন হিংসাত্মক পরিস্থিতি ছিলো না। তাই বিরোধী দলের হয়ে রাজনীতি করাই তাদের জন্য মুশকিল। অন্যদিকে নির্বাচনে পরাজিত হওয়ার আশঙ্কা তো আছেই। নিগ্রহ সহ্যের পর নির্বাচনে কাড়ি কাড়ি টাকা-পয়সা খরচ করে কেউই পরাজিত হতে চান না। এটাই স্বাভাবিক।

বাংলাদেশ সময় : ২০১১ ঘণ্টা, মার্চ ১২, ২০১৬
ইইউডি/আরআই

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।