বগুড়া: যমুনা-বাঙালি নদী বেষ্টিত বগুড়ার সারিয়াকান্দি উপজেলা। আগামী ২২ মার্চ এ উপজেলার ১২টি ইউনিয়নে (ইউপি) ভোট অনুষ্ঠিত হবে।
তবে এসব প্রার্থীদের সিংহভাগই এলাকায় স্থায়ীভাবে বসবাস করেন না। বগুড়া শহরসহ বিভিন্ন স্থানে বসবাস করেন তারা। তবে আসন্ন নির্বাচন তাদের এলাকায় আসতে বাধ্য করছে। কিন্তু নির্বাচন শেষেই তারা আবারো চলে যাবেন শহরে। গ্রামে থেকে যাবেন সেই গরীবেরা।
শনিবার (১২মার্চ) উপজেলার বিভিন্ন এলাকার সাধারণ ভোটারদের সঙ্গে কথা হলে এসব তথ্য ওঠে আসে।
আওয়ামী লীগ ও বিএনপি নেতারাও বিষয়টি স্বীকার করে নেন। তবে তাদের মতে, ‘যোগাযোগ ব্যবস্থা ভাল। আধুনিক প্রযুক্তির সুবিধা নিয়ে শহরে বসেই অনেক কাজ সারা যায়। জনপ্রতিনিধিরা থাকার জন্য শুধু রাতে শহরে আসেন।
‘দিন হলেই এলাকার মানুষের পাশে ছুটে যান’ -এমনটাই দাবি দু’দলের নেতাদের।
অনুসন্ধানে জানা যায়, উপজেলার চালুয়াবাড়ী ইউনিয়নের বিএনপি মনোনীত প্রার্থী অ্যাডভোকেট মোস্তাফিজার রহমান বাস করেন বগুড়া শহরে। আওয়ামী লীগ মনোনীত তাজুল ইসলাম বাদশা শাজাহানপুর উপজেলার মাঝিড়ায় থাকেন।
কাজলা ইউনিয়নের এবিএম শামস উদ্দিন জিন্নাহ। মামলা জনিত আদালতের রায়ে টানা ২৭ বছর চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেন তিনি। কিন্তু নিজ এলাকায় তার কোন বসতবাড়ি নেই। পাশের হাটশেরপুর ইউনিয়নের হাসনাপাড়া গ্রামে ভাগভাগিরায় বসবাস করেন। পাশাপাশি বগুড়া শহরের মালতিনগর এলাকায় থাকেন।
নারচী ইউনিয়নের স্বতন্ত্র প্রার্থী মজনু রহমানের গ্রামের বাড়ী শেখাহাতি। এর আগে ৩বার চেয়ারম্যান পদে লড়ে হেরে গেছেন তিনি। বাস করেন বগুড়া শহরের চেলোপাড়ায়। এ ইউনিয়নের বর্তমান চেয়ারম্যান আওয়ামী লীগ মনোনীত আলতাব হোসেন বান্টু থাকেন শহরের জলেশ্বরীতলায়।
হাটশেরপুর ইউনিয়নের বিএনপি মনোনীত আলিনুর রহমান আন্না বাস করেন বগুড়া শহরের রহমান নগরে। আর স্বতন্ত্র প্রার্থী হামিদুল ইসলাম বাচ্চু শহরের নারুলী এলাকায়।
সারিয়াকান্দি সদর ইউনিয়নের আওয়ামী লীগ মনোনীত চেয়ারম্যান প্রার্থী সাহাম্মত করিম পৌর এলাকার বাড়ইপাড়া গ্রামে বাস করেন। বিএনপি মনোনীত প্রার্থী আব্দুল কদ্দুস কাইয়ুমও একইগ্রাম বসবাস করেন।
ফুলবাড়ী ইউনিয়নের বিএনপির বিদ্রোহী প্রার্থী সাইফুল ইসলাম বেলাল বসবাস করেন বগুড়া শহরের ঠনঠনিয়ায়। ভেলাবাড়ী ইউনিয়নের বিএনপি মনোনিত প্রার্থী লুৎফুল হায়দার রুমি শহরের নাটাইপাড়ায় বাস করেন।
কর্ণিবাড়ী ইউনিয়নের আওয়ামী লীগ মনোনীত বর্তমান চেয়ারম্যান আজাহার আলী বসবাস করেন বগুড়া শহরের উত্তর চেলোপাড়ায়। তিনি শহরের বাসা থেকে নিজ এলাকায় এসে পরিষদের কাজকর্ম করেন। এ ইউনিয়নের বিএনপি মনোনীত প্রার্থী কাজী জাকির হোসেন বাবলু থাকেন শহরের জলেশ্বরীতলায়।
কুতুবপুর ইউনিয়নে বিএনপি মনোনীত প্রার্থী ইমরান আলী রনি আগে থেকেই বগুড়া শহরে বসবাস করেন। দলীয় মনোনয়ন পাওয়ার পর মাসখানেক ধরে তিনি ইউনিয়নের ধলিরকান্দি গ্রামে বসবাস করে নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন।
চন্দনবাইশা ইউনিয়নের বর্তমান চেয়ারম্যান স্বতন্ত্র প্রার্থী শাহ জিহাদুল ইসলাম চেয়ারম্যান নির্বাচিত হওয়ার পর দুই বছর পর্যন্ত এলাকায় ছিলেন। গত ৩ বছর হলো এলাকায় আসা ছেড়ে দিয়েছেন। ঢাকায় তিনি তার বিত্তশালী ভাই-বোনদের বাসায় থাকেন। সেখান থেকে মোবাইল ফোনের মাধ্যমে কর্মকাণ্ড চালান।
ফাইলপত্র স্বাক্ষরের প্রয়োজন দেখা দিলে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ঢাকা পর্যন্ত দৌঁড়াতে হয়েছে। এ ইউনিয়নের আরেক স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন সাবেক চেয়ারম্যান শাহাদত হোসেন দুলাল। তিনি বগুড়া শহরের নারুলীতে বসবাস করেন।
বোহাইল ইউনিয়নের বিএনপি মনোনীত চেয়ারম্যান প্রার্থী আব্দুল মজিদ বগুড়ার শেরপুর শহরের দুবলাগাড়ী এলাকায় বসবাস করেন। এই ইউনিয়নের বর্তমান চেয়ারম্যান আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী গোলাম মোস্তফা তরফদার টুকু বসবাস করেন বগুড়া শহরের মালতীনগরে। তবে পাশের কামালপুর ইউনিয়নের কড়িতলা বাজারের রৌহাদহ গ্রামে প্রয়োজনের তাগিদে মাঝেমধ্যে রাত যাপন করেন তিনি।
কামালপুর ইউনিয়নের বিএনপি দলীয় চেয়ারম্যান প্রার্থী নাদিরুতজ্জামান সাইদ খান থাকেন বগুড়া শহরের জলেশ্বরীতলায়।
ভুলু প্রামাণিক, ছায়েদ আলী, সুরুজ্জামানসহ স্থানীয় ভোটাররা বাংলানিউজকে জানান, ভোট আসলেই চেয়ারম্যান প্রার্থীরা এলাকায় থাকার কথা বলে ভোট
প্রার্থনা করেন। এবারো তাই করছেন। ভোট চলে গেলেই তারা দ্রুতই সেই কথা ভুলে যান। ছুটে যান শহরের ঠিকানায়। কিন্তু গরীবদের কি করার আছে।
যাকেই ভোট দেওয়া হোক না কেন জেতার পর একই কাজ করেন বা করবেন। তবে এবারো ভোট দেখে শুনে দেবেন বলে জানান তারা।
অবশ্য উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সাহাদারা মান্নান বাংলানিউজকে বলেন, ‘আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থীরা বগুড়া শহরের বসবাস করলেও শুধু রাত কাটান সেখানে। সারাদিন তারা এলাকার মানুষের পাশে থাকেন। তাছাড়া এখন ডিজিটাল যুগ। মোবাইলে মুহূর্তের মধ্যে অনেক কাজ সেরে ফেলা যায়। ’
একই কথা বললেন উপজেলা বিএনপির সভাপতি সুজাউদ্দৌলা সনজু। তিনি বাংলানিউজকে বলেন, ‘আমি নিজেও উপজেলার ফুলবাড়ী ইউনিয়নের ভোটার হলেও বসবাস করি বগুড়া শহরের বনানী এলাকায়। এখন যোগাযোগ ব্যবস্থা অনেক ভাল। বগুড়া থেকে সব কার্যক্রম চালানো যায়। ’ তাই চেয়ারম্যানদের কাজকর্মে কোন সমস্যা হবে না বলে দাবি তার।
বাংলাদেশ সময়: ২১৩৫ ঘণ্টা, মার্চ ১২, ২০১৬
এমবিএইচ/আরআই