খুলনা থেকে ফিরে: কিছুদিন পরেই বিএনপির কেন্দ্রিয় কমিটির কাউন্সিল। কাউন্সিলকে ঘিরেই দলটি আবার চাঙ্গা হয়ে উঠবে বলেই নেতা-কর্মীদের ধারণা।
বাংলানিউজঃ আপনি তো এরশাদ বিরোধী আন্দোলনে সামনে থেকেই নেতৃত্ব দিয়েছেন। ছিলেন ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় নেতাও। এরপর খুলনা মহানগরের নেতৃস্থানে আছেন প্রায় ৩০ বছর। বলা হচ্ছে, বর্তমানে বিএনপির সাংগঠনিক ভিত্তি নেই। এর কারণ কী?
নজরুল ইসলাম মঞ্জুঃ এরশাদ বিরোধী আন্দোলনের সময় মামলা হতো। ধরপাকড়ও হতো। কিন্তু তখন প্রশাসন এতোটা হিংসাত্মক মনোভাব দেখায়নি। তখন মামলা হলে আসামিকেই গ্রেফতার করা হতো। আর এখন মামলা হলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে না পেলে পুলিশ বাড়িতে গিয়ে হানা দেয়। পিতা-মাতা না হলে সন্তানকে থানায় নিয়ে গিয়ে হেনস্তা করে। এছাড়া সম্পত্তির ওপর হামলা আসে। তাই সব হারিয়ে কেউ আর রাজনীতি করতে চায় না। তাই বিএনপির তৃণমূলের নেতারা এখন রাজনীতি থেকে দুরে।
বাংলানিউজঃ বিএনপিতে রাজনীতিকের চেয়ে ব্যবসায়ী বেশি এমনটাই সবাই বলে। এ কারণেই আপনাদের দলের কোনো কর্মসূচি সফল হয় না। অথবা দলের শীর্ষ নেতাদের ডাকে কর্মীরা ছুটে আসেন না। বিষয়টিকে আপনি কিভাবে দেখছেন?
নজরুল ইসলাম মঞ্জুঃ বিএনপি একটি বিরাট দল। এ নিয়ে কারো কোনো সন্দেহের অবকাশ থাকার কথা নয়। তবে নানাভাবে দলের মাঠ পর্যায় থেকে রাজনীতি করে উঠে আসা ব্যক্তির চেয়ে হুট করে আসা সুবিধাভোগী ব্যক্তি কম নয়। এদের জন্যই দলের সাংগঠনিক শক্তি কমে গেছে। তাই একটা রিফাইন দরকার। একটা শুদ্ধি অভিযান না হলে ঘুরে দাঁড়াতে সময় লাগবে। খুলনা অঞ্চলের মানুষের বিশ্বাস, আসছে কাউন্সিলে সৎ, সাহসী, ত্যাগী, মেধাবী আর ক্লিন ইমেজের নেতারা যথাযথ মূল্যায়ন পাবেন। বিএনপি হবে সুবিধাভোগী মুক্ত।
বাংলানিউজঃ কাউন্সিলের প্রস্তুতি কেমন?
নজরুল ইসলাম মঞ্জুঃ কাউন্সিলের ক্ষেত্রে দুটো বিষয় প্রভাব ফেলেছে। প্রথমত, সরকার কাউন্সিল করার জন্য পরিবেশ দেবে কি না অর্থাৎ কোনো জায়গা পাব কিনা এ বিষয়টি নিয়ে অনিশ্চয়তা ছিলো। যে কারণে জেলা পর্যায়ে কমিটিগুলো গুছিয়ে নেয়া যায়নি। অন্যদিকে যখন জায়গা পাওয়া গেল, সেই মুহূর্তে ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচন শুরু হয়ে গেল। এখন আমরা এ নির্বাচন নিয়েই ব্যস্ত আছি। এদিকে নেতা-কর্মীদের ধরপাকড় আবারও শুরু হয়েছে। মূলত: এসব কারণেই দলের কাউন্সিলের আলোচনা প্রায় হারিয়ে গেছে।
বাংলানিউজঃ বিএনপি একটি গণতান্ত্রিক দল একথা আপনারাই বলেন। কিন্তু এই কাউন্সিলকে ঘিরে দেশবাসী দেখল আপনাদের দলের চেয়ারপার্সন ও সিনিয়র ভাইস-চেয়ারম্যান পদে কোনো নমিনেশন জমা পড়েনি। তারাও পাঁচ জানুয়ারির নির্বাচনের মতো বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হলেন। দলের অভ্যন্তরে গণতন্ত্রের স্বার্থে হলেও এ পদ দুটোতে অন্যদের মনোনয়নপত্র জমা পড়া উচিত ছিলো বলেও অনেকে বলেন। হয়তো ভোটে তারাই নির্বাচিত হতেন। এ বিষয়টি কিভাবে ব্যাখ্যা করবেন?
নজরুল ইসলাম মঞ্জু: দেখুন, এদেশের প্রধান দু’টি দল হচ্ছে-বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ এবং বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)। এদেশের রাজনীতিতে এ দু’টি দলে ঐক্যের প্রতীক হচ্ছে মুজিব পরিবার ও জিয়া পরিবার। যারা এই দু’দলের আদর্শে বিশ্বাস করে, তারা এই দুই পরিবারের বাইরে যেতে পারেন না।
বিভিন্ন সংকটকালেও দেখা গেছে, এই দুই পরিবারের কেউ এসেই দলের হাল ধরেছেন। তাই ওই দুই পদে অন্য কেউ মনোনয়নপত্র জমা দেননি।
বাংলানিউজঃ যদি আদর্শের কথাই বলেন, তবে বিএনপি কেন জামায়াতের সাথে জোট বেঁধেছে। বর্তমান প্রজন্ম কিন্তু জামায়াতকে পছন্দ করেন না। আপনার কি মনে হয়, জামায়াতের সঙ্গ ত্যাগ করলে আপনাদের সমর্থন বাড়বে?
নজরুল ইসলাম মঞ্জু: বর্তমান প্রজন্ম জামায়াতের সঙ্গ পছন্দ করে না, এটা ঠিক। তবে বিষয়টি নিয়ে দলের হাইকমাণ্ড সিদ্ধান্ত নেয়। তারাই এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে।
বাংলানিউজঃ আগামী ২২ মার্চ থেকেই দেশের নির্বাচন উপযোগী ইউপিগুলোতে নির্বাচন শুরু হবে। মাঠে তো আপনাদের প্রার্থীকে খুঁজে পাওয়া যায় না। আবার বাগেরহাটে আওয়ামী লীগের অনেক প্রার্থী বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন। বলা হচ্ছে, আপনাদের প্রার্থীরা মনোনয়নপত্র কিনলেও, পরে প্রার্থিতা প্রত্যাহার করে নিয়েছেন। তবে কি সাংগঠনিকভাবে বিএনপি একেবারে ভঙ্গুর অবস্থানে?
নজরুল ইসলাম মঞ্জুঃ ইউপি নির্বাচনে তো প্রথমে প্রার্থীই পাওয়া যায়নি। সবার মধ্যেই একই ভয়, প্রার্থী হলে সম্পত্তি, ঘের হারাতে হবে। এরপরও নির্বাচন করে জয়ী হতে না পারলে টাকা পয়সাও নষ্ট হবে। তাই কাড়ি কাড়ি টাকা পয়সা খরচ করে প্রায় নিশ্চিত পরাজয় জেনে কেউ প্রার্থী হতে চায়নি। বিএনপির সমর্থন কমেনি বরং বড়েছে। আমরা চাই ক্ষমতাসীন দল এবারের ইউপি নির্বাচনেও নিরঙ্কুশ জয় নিয়ে নিক। এতে তাদের আর কিছু বলার থাকবে না। মানুষ ঘুরে দাঁড়াবেই।
বাংলানিউজঃ ইউপি নির্বাচনে যেসব এলাকায় আপানাদের প্রার্থী রয়েছে, তাদের প্রচারণা কিভাবে হচ্ছে?
নজরুল ইসলাম মঞ্জুঃ প্রচারণা হবে কিভাবে? প্রার্থীরা তো ভয়ে প্রচারণাতেই নামে না। আমি যেদিন যাই, সেদিন প্রার্থী যায়। অন্যথায়, পুলিশ আর আওয়ামী লীগের প্রার্থীর ভয়ে এলাকাতেই ঢুকে না। তবে কিছু কিছু জায়গায় অনেকটা চুপিচুপি প্রচারণা চালাচ্ছেন প্রার্থীরা। সেখানে তারা আক্রমণের শিকারও হচ্ছেন। এ নিয়ে নির্বাচন কমিশন এবং প্রশাসনের কাছে আমরা স্মারকলিপিও দিয়েছি। কোনো লাভ হচ্ছে না। এক্ষেত্রে নির্বাচন কমিশন এবং প্রশাসনের সদিচ্ছা না থাকলে নির্বাচন সুষ্ঠু হবে না।
বাংলাদেশ সময়: ০৯১০ ঘণ্টা, মার্চ ১৪, ২০১৬
ইইউডি/জেডএম