ঢাকা: মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব, জাতীয়তাবাদী কৃষক দলের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি এবং ঠাকুরগাঁও জেলা বিএনপির সভাপতি।
২০০৯ সালের ৮ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত বিএনপির পঞ্চম জাতীয় কাউন্সিলের পর থেকে একসঙ্গে এই তিনটি পদে দায়িত্ব পালন করছেন ফখরুল। অধিকন্তু সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব পদটিও রয়েছে তার কব্জায়।
শুধু মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর নন, বিএনপির অসংখ্য নেতা একাধিক পদ আঁকড়ে আছেন। একাধারে কেন্দ্রীয় কমিটির গুরুত্বপূর্ণ পদ, অঙ্গ সংগঠন ও জেলা বিএনপির সভাপতি-সেক্রেটারির পদও রয়েছে তাদের দখলে।
বৃহৎ এ রাজনৈতিক দলটির লোভনীয় পদগুলো মুষ্টিমেয় কয়েকজন নেতার মুঠোবন্দি হয়ে পড়েছে। ফলে যোগ্য অনেক নেতাই পাচ্ছেন না তাদের কাঙ্ক্ষিত পদ। তৈরি হচ্ছে না নতুন নেতৃত্ব।
আসন্ন জাতীয় কাউন্সিলে এই সমস্যার যৌক্তিক একটা সমাধান করতে যাচ্ছেন বিএনপি চেয়ারপারসন। কাউন্সিলের পর এক নেতা একাধিক পদে থাকার সুযোগ আর পাচ্ছেন না।
সূত্রমতে, এবারের কাউন্সিলে বিএনপির গঠনতন্ত্রের পরিবর্তন করে ‘এক নেতার এক পদ’ ধারাটি যুক্ত করা হচ্ছে। গঠনতন্ত্রে এই ধারাটি যুক্ত হওয়ার পর কেন্দ্রীয় কমিটিতে থাকা ৩৫০ কর্মকর্তা বিএনপির অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের কোনো পদে থাকতে পারবেন না। মহানগর, জেলা, উপজেলা, থানা, পৌরসভা, ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড পর্যায়ের কমিটিতে আর কেউ পদ পাবেন না।
সম্প্রতি বিভিন্ন অনুষ্ঠানে দেওয়া বক্তব্যে খালেদা জিয়া বিষয়টি বার বার উত্থাপন করেছেন। তবে খালেদা জিয়ার এই মতের সঙ্গে একমত পোষণ করতে পারেননি বিএনপির শীর্ষ পর্যায়ের অনেক নেতা। বিশেষ করে যারা একাধিক পদ আঁকড়ে আছেন, তারা দলীয় প্রধানের এ সিদ্ধান্ত’র বিরোধিতা করেছেন প্রকাশ্যেই।
সূত্রমতে, জাতীয় কাউন্সিলের সিদ্ধান্ত গ্রহণের জন্য গত জানুয়ারিতে অনুষ্ঠিত স্থায়ী কমিটির বৈঠকে খালেদা জিয়া ‘এক নেতার এক পদ’ রাখার ব্যাপারে স্থায়ী কমিটির সদস্যদের মতামত জানতে চাইলে উপস্থিত কয়েকজন বিষয়টির বিরোধিতা করেন।
অবশ্য একাধিক পদধারী ওইসব নেতা অন্য নেতাদের তোপের মুখে পড়েন। খালেদা জিয়ার উপস্থিতিতে স্থায়ী কমিটির বৈঠকে কিছুটা হট্টগোলও হয়।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, বেশি সংখ্যক নেতাকে সুযোগ করে দেওয়ার জন্য দলের পদগুলো কয়েক জনের হাতে ন্যাস্ত না রেখে যোগ্য ও সক্রিয়দের মধ্যে ভাগ করে দিতে চান খালেদা জিয়া। শীর্ষ নেতাদের বড় একটি অংশ নাখোশ হলেও নিজের সিদ্ধান্তে অনড় রয়েছেন খালেদা জিয়া।
সম্প্রতি তাঁতীদলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে সংগঠনটির নেতারা খালেদা জিয়ার সঙ্গে মতবিনিময় করতে গুলশান কার্যালয়ে আসেন। ওই দিন সংক্ষিপ্ত বক্তৃতায় বিএনপি প্রধান বলেন, অনেক সময় দেখা যায়, একজন তাঁতী দলে ভাল পদে আসেন, আবার সেই ব্যক্তিই মৎসজীবী দলের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ পদ দখল করে আছেন। যিনি তাঁতীদল করেন, তিনি তাঁতী দলই করবেন, মৎসজীবী বা কৃষক দল করতে পারবে না। বিএনপিতে অনেক লোক আছে, সবাইকে সুযোগ করে দিতে হবে।
সূত্রমতে, সদ্য কারামুক্ত এক নেতা খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেখা করতে এসে নিজের পরিচয় দেন, আমি জাতীয়তাবাদী অমুক দলের সাংগঠনিক সম্পাদক, অমুক দলের সেক্রেটারি, অমুক দলের সহ-সভাপতি ইত্যাদি ইত্যাদি।
খালেদা জিয়া ওই নেতাকে থামিয়ে দিয়ে বলেন, আপনি একাই যদি সব করেন, অন্যরা কী করবে? এবারের কাউন্সিলে এই নিয়ম করে দেব, এক নেতা একাধিক পদে থাকতে পারবেন না।
জানা গেছে, খালেদা জিয়ার এই সিদ্ধান্তে একাধিক পদধারী নেতারা অসন্তুষ্ট হলেও দলের বেশিরভাগ শীর্ষ নেতাই তার এ সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছেন। তারা বলছেন, মুষ্টিমেয় কয়েকজন নেতার হাতে নেতৃত্ব থাকলে নতুন নেতৃত্ব গড়ে উঠবে না। রাজনীতিবিদরা বিএনপি করতে আগ্রহ হারিয়ে ফেলবে।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মাহবুবুর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, সবাইকে সুযোগ করে দেওয়ার জন্য এটি একটা ভাল সিদ্ধান্ত। এখন দেখা যাক, কাউন্সিলররা এই সিদ্ধান্তের পক্ষে রায় দেন কি না। কাউন্সিলরদের মতামতের ভিত্তিতেই বিএনপির চেয়ারপারসন চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন।
বাংলাদেশ সময়: ০৮২৮ ঘণ্টা, মার্চ ১৫, ২০১৬
এজেড/জেডএম