ঢাকা: টাঙ্গাইল-৪ (কালিহাতী) আসনের উপ-নির্বাচন ফের স্থগিত করেছেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ। এ উপ-নির্বাচনে মনোনয়নপত্র অবৈধ ঘোষণা করে হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে কৃষক-শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি আবদুল কাদের সিদ্দিকীর মূল আপিলের শুনানি হবে আগামী ৩ মে।
মঙ্গলবার (১৫ মার্চ) কাদের সিদ্দিকীর লিভ টু আপিল গ্রহণ করে প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নেতৃ্ত্বে ৫ সদস্যের আপিল বেঞ্চ এ আদেশ দেন।
দুই দফা পেছানোর পর আগামী ২০ মার্চ টাঙ্গাইল-৪ আসনের উপ-নির্বাচনের তারিখ নির্ধারণ করেছিলো নির্বাচন কমিশন (ইসি)। কিন্তু মঙ্গলবারের আদেশে এ নির্বাচন ফের স্থগিত হয়ে গেলো।
আদালতে কাদের সিদ্দিকীর পক্ষে শুনানি করেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী এ জে মোহাম্মদ আলী। সঙ্গে ছিলেন ব্যারিস্টার রাগীব রউফ চৌধুরী। রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম। নির্বাচন কমিশনের পক্ষে ছিলেন অ্যাডভোকেট অন রেকর্ড ব্যারিস্টার ড. মোহাম্মদ ইয়াসীন খান।
টাঙ্গাইল-৪ আসনে দশম সংসদ নির্বাচনে অংশ নিয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন কাদের সিদ্দিকীর বড় ভাই লতিফ সিদ্দিকী। গত বছরের ০১ সেপ্টেম্বর তিনি পদত্যাগ করায় আসনটি শূন্য ঘোষণা করে ০৩ সেপ্টেম্বর গেজেট প্রকাশ করে সংসদ সচিবালয়।
এরপর গত বছরের ১০ নভেম্বর টাঙ্গাইল-৪ আসনে উপ-নির্বাচনের দিন ধার্য করেছিল ইসি। তার মনোনয়নপত্র অবৈধ ঘোষণার বিরুদ্ধে করা কাদের সিদ্দিকীর রিটের প্রেক্ষিতে প্রথমে চেম্বার আদালত উপ-নির্বাচন স্থগিত রেখেছিলেন। পরে এ স্থগিতাদেশ বহাল রেখে ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত উপ-নির্বাচন স্থগিত করেছিলেন আপিল বিভাগ। পরবর্তীতে হাইকোর্টের রায়ের আলোকে আইনি জটিলতা কাটায় ২০ মার্চ ফের উপ-নির্বাচনের দিন ধার্য করে ইসি।
অন্যদলের পাশাপাশি এতে কৃষক-শ্রমিক-জনতা লীগের প্রার্থী হিসেবে কাদের সিদ্দিকী ও তার স্ত্রী নাসরিন সিদ্দিকী মনোনয়নপত্র দাখিল করেন।
কিন্তু ঋণখেলাপের অভিযোগে গত বছরের ১৩ অক্টোবর রিটার্নিং কর্মকর্তা মো. আলীমুজ্জামান তাদের মনোনয়নপত্র বাতিল ঘোষণা করেন। এরপর ১৬ অক্টোবর এ দুই নেতা রিটার্নিং কর্মকর্তার সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে ইসিতে আপিল আবেদন করেন।
১৮ অক্টোবর প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী রকিবউদ্দীন আহমদের নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের নির্বাচন কমিশন কাদের সিদ্দিকীর আপিল খারিজ করে তার মনোনয়নপত্র বাতিলের চূড়ান্ত রায় দেন।
এরপর নির্বাচন কমিশনের বাতিল আদেশের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে রিট করেন কাদের সিদ্দিকী।
এ রিটের শুনানি নিয়ে গত বছরের ২১ অক্টোবর নির্বাচন কমিশনের আদেশ স্থগিত ও কাদের সিদ্দিকীর মনোনয়নপত্র বৈধ বলে আদেশ দেন বিচারপতি মিফতাহ উদ্দিন চৌধুরী ও বিচারপতি কাজী মো. ইজারুল হক আকন্দের হাইকোর্টের অবকাশকালীন বেঞ্চ। একইসঙ্গে নির্বাচন কমিশনের আদেশের বিষয়ে রুল জারি এবং রিটার্নিং অফিসার ও নির্বাচন কমিশনের আদেশ স্থগিত করেন আদালত।
পরে ২৬ অক্টোবর কাদের সিদ্দিকীর মনোনয়নপত্রের বৈধতা নিয়ে হাইকোর্টের ওই আদেশ স্থগিত চেয়ে আবেদন জানান ইসির অ্যাডভোকেট-অন-রেকর্ড ব্যারিস্টার ড. মো. ইয়াসিন খান।
পরদিন ২৭ অক্টোবর আপিল বিভাগের অবকাশকালীন চেম্বার বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের আদালত টাঙ্গাইল-৪ আসনের উপ-নির্বাচনই স্থগিত করে দেন। একইসঙ্গে ইসি’র আবেদনটি আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে পাঠিয়ে দিয়ে ০২ নভেম্বর এর শুনানির দিন ধার্য করে দেন।
০২ নভেম্বর চেম্বার বিচারপতির দেওয়া উপ-নির্বাচনের ওই স্থগিতাদেশ বহাল রাখেন প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহার নেতৃত্বে পূর্ণাঙ্গ আপিল বেঞ্চ। ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত উপ-নির্বাচন স্থগিত রেখে এর মধ্যে কাদের সিদ্দিকীর মনোনয়নপত্রের বৈধতা নিয়ে হাইকোর্টের জারি করা রুল বিচারপতি মো. আশফাকুল ইসলাম ও বিচারপতি জাফর আহমেদের হাইকোর্ট বেঞ্চে নিষ্পত্তির আদেশ দেন সর্বোচ্চ আদালত।
গত ০৪ ফেব্রুয়ারি শুনানি শেষে কাদের সিদ্দিকীর মনোনয়নপত্র বৈধ নয় বলে নির্বাচন কমিশনের দেওয়া সিদ্ধান্ত বহাল ও কাদের সিদ্দিকীর রিট খারিজ করে রায় দেন ওই বেঞ্চ।
২৪ ফেব্রুয়ারি এ রায়ের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি প্রকাশিত হয়। পরদিন ২৫ ফেব্রুয়ারি লিভ টু আপিল করেন কাদের সিদ্দিকী। মঙ্গলবার এ আপিলের শুনানির দিন ০৩ মে ধার্য করে উপ-নির্বাচন ফের স্থগিত করেন সর্বোচ্চ আদালত।
২০১৪ সালেও টাঙ্গাইল-৮ (সখিপুর) আসনের উপ-নির্বাচনেও প্রার্থী হতে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছিলেন কাদের সিদ্দিকী। সে সময়ও ঋণখেলাপের অভিযোগে তার মনোনয়নপত্র বাতিল হয়।
বাংলাদেশ সময়: ০৯৪৫ ঘণ্টা, মার্চ ১৫, ২০১৬
ইএস/জেডএস/এএসআর