বগুড়া: বগুড়ার সারিয়াকান্দি উপজেলার ফুলবাড়ি ইউনিয়নের চর রামনগর গ্রামের বাসিন্দা মোঃ আফজাল হোসেন প্রামাণিক। তিনি ছিলেন এ ইউনিয়নের ভোটার।
ফলে বাড়িভাড়া ও পৌরকর রশিদ, ইউটিলিটি বিলের অনুলিপিও তার নেই। নিয়মানুসারে পৌরসভার ভোটার হতে গেলে নির্বাচন কমিশনের নির্ধারিত ১৩নং ফরমে এসব তথ্য পূরণ করতে হয়। তবেই স্থানান্তরিত হয়ে পৌরসভার ভোটার হওয়া যায়। কিন্তু মোঃ আফজাল হোসেন প্রামাণিকের ক্ষেত্রে তা মানা হয়নি। এরপরও তিনি পৌরসভার ভোটার!
নির্বাচন কমিশনের শর্ত ভঙ্গ করে এ রকম প্রায় আড়াই হাজার ভোটার ইউনিয়ন থেকে স্থানান্তরিত হয়ে পৌরসভার ভোটার হন। আগামী ২২ মার্চ অনুষ্ঠিতব্য ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে (ইউপি) ভোট দিতে তারা একইভাবে ইউনিয়নের ভোটার হওয়ার চেষ্টা করেন। কিন্তু বিধি বাম! এবার তারা আটকে গেছেন। তাই ভোটার, তবে ভোট দিতে পারবেন না তারা !
সোমবার (১৪ মার্চ) সারিয়াকান্দি পৌরসভার ভোটার তালিকা থেকে নাম কর্তন করে একাধিক ব্যক্তি আবারো স্ব স্ব ইউনিয়নের ভোটার হতে চাইলে এমনই তথ্য বের হয়ে আসে।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, গত বছরের ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত পৌরসভা নির্বাচনের আগে সারিয়াকান্দি সদর, কাজলা, চালুয়াবাড়ি, হাটশেরপুর, নারচি, ফুলবাড়ি, ভেলাবাড়ি, কুতুবপুর, কর্ণিবাড়ি, চন্দনবাইশা, কামলপুর ও বোহাইল ইউনিয়ন থেকে প্রায় আড়াই হাজার ভোটার স্থানান্তরিত হয়ে সারিয়াকান্দি পৌরসভার ভোটার হন। নির্বাচন কমিশনের নীতিমালা লঙ্ঘন করে তাদের পৌরসভার ভোটার বানানো হয় বলে অভিযোগ উঠেছে। কারণ তাদের কাউকেই নির্বাচন কমিশনের নির্ধারিত ১৩নং ফরম পুরণের প্রয়োজনীয় কাগজপত্র জমা দিতে হয়নি।
সরেজমিনে গিয়ে জানা গেছে, পৌর নির্বাচনের আগে যারা পৌরসভার ভোটার হয়েছেন তারা কেউই পৌরসভার বাসিন্দা নন। পৌর এলাকায় তাদের বাড়িঘরও নেই। এরপরও ফুলবাড়ি ইউনিয়নের চর রামনগর গ্রামের একরাম হোসেন মন্ডল (ভোটার নং ১০১৭১০০০৬২২৭, স্থানান্তরিত ভোটার নং ১০১৬৪৩০০০৫৫২), মমতাজ বেগম (ভোটার নং ১০১৭১০০০৬২২৫, স্থানান্তরিত ভোটার নং ১০১৬৪৩০০০৭২৬), জহুরা বেগম (ভোটার নং ১০১৭১০০০৬২২৬, স্থানান্তরিত ভোটার নং ১০১৬৪৩০০০৭৩৯) ও জামিনা বেগম (ভোটার নং ১০১৭১০০০৬২২৮, স্থানান্তরিত ভোটার নং ১০১৬৪৩০০০৬২১) সারিয়াকান্দি পৌরসভার হিন্দুকান্দির ঠিকানায় ভোটার হয়েছেন।
এসব ভোটাররা বাংলানিউজকে বলেন, পৌরসভা নির্বাচনের আগে মেয়র প্রার্থীর লোকজন আমাদের পৌরসভার ভোটার হওয়ার জন্য উদ্বুদ্ধ করেছিলেন। তাদের কথা শুনে এখন আমরা নিজের ইউনিয়নের ভোটাধিকার হারিয়েছি। কয়েকদিন পর ভোট হবে। কিন্তু আমরা ভোট দিতে পারবো না। ভাবতে ভীষণ খারাপ লাগছে।
উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা আশরাফুল হক বাংলানিউজকে বলেন, সারিয়াকান্দি উপজেলার বহু গ্রাম যমুনা নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। এসব গ্রামের ভোটাররা বাড়ি-ঘর হারিয়ে এখন অন্যত্র বসবাস করছেন। কিন্তু ভোটের সময় এসে তারা আগের ঠিকানায় ভোট দিয়ে যান। এ কারণে ইউনিয়নের ভোটারদের পৌরসভার ভোটার হতে অসুবিধা নেই বলে দাবি করেন এই কর্মকর্তা।
জেলার সিনিয়র নির্বাচন কর্মকর্তা ইউনুচ আলী বাংলানিউজকে বলেন, এ বিষয়ে আমার কোনো কিছু জানা নেই। তবে ভোটার স্থানান্তর হওয়া নাগরিকের সাংবিধানিক অধিকার। পৌরসভার বাসিন্দা প্রমাণ করতে ১৩নং ফরমে শর্ত জুড়ে দেওয়া হয়েছে। সেক্ষেত্রে জনপ্রতিনিধিরা প্রত্যয়নপত্র দিলে কমিশনের কিছু করার থাকে না। এছাড়া তফসিল ঘোষণার পর ভোটার স্থানান্তরের প্রক্রিয়া স্থগিত করা হয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ১৬৫৫ ঘণ্টা, মার্চ ১৫, ২০১৬
এমবিএইচ/এএসআর