ঢাকা: অপরিণামদর্শী সিদ্ধান্ত ও কর্মসূচি বাস্তবায়ন করতে গিয়ে মূলধারার রাজনীতি থেকে ছিটকে পড়া বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয় এতোদিন ছিল ফাঁকা। কিন্ত ষষ্ঠ জাতীয় কাউন্সিল সামনে রেখে কার্যালয়টি আবার চাঁদের হাটে পরিণত হয়েছে।
সারাদেশ থেকে আসা হাজার হাজার নেতাকর্মীর পদচারণায় মুখরিত হয়ে উঠেছে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়।
পাঁচতলা বিশিষ্ট এ কার্যালয়ের প্রতিটা তলার প্রতিটা কক্ষে দলীয় নেতাকর্মী, কর্মকর্তা, কর্মচারী, অফিস স্টাফ গিজ গিজ করছে।
দলের দায়িত্বশীল নেতা ও অফিস স্টাফরা ব্যস্ত সময় পার করছেন দাপ্তরিক কাজ নিয়ে। আর ঢাকার বাইরে থেকে আসা নেতাকর্মীরা ব্যস্ত কাউন্সিলর-ডেলিগেটস কার্ডের জন্য নিজেদের নাম তালিকাভুক্তিকরণ ও কার্ড সংগ্রহ নিয়ে।
কেউ কেউ আবার কাঙ্ক্ষিত পদ পেতে শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে দেখা করার জন্য কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে ভিড় করছেন। কেউবা স্রেফ জাতীয় কাউন্সিলের মহা কর্মযজ্ঞ দেখার জন্য হাজির হয়েছেন বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে।
মঙ্গলবার (১৫ মার্চ) বিকেলে নয়াপল্টন কার্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, কার্যালয়ের সামনে কয়েক শ’ নেতা-কর্মী ছোট ছোট দলে বিভক্ত হয়ে গল্প-গুজবে মত্ত রয়েছেন।
এদের কেউই বড় কোনো পদের জন্য নয়াপল্টন কার্যালয়ে আসেননি। বরং বহুদিন ধরে বিএনপির কোনো কর্মসূচি না থাকায় ঘরে হাত-পা গুটিয়ে বসে থাকা এসব মাঠকর্মী দলের কাউন্সিল কেন্দ্রিক আনন্দযজ্ঞে শরিক হতে এসেছেন।
কথা হয় নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ থেকে আসা তৌহিদুর রহমানের সঙ্গে। জেলা বিএনপির সভাপতি কেন্দ্রীয় বিএনপির সহআইন বিষয়ক সম্পাদক তৈমুর আলম খন্দকারের সঙ্গে নয়াপল্টন কার্যালয়ে আসা তৌহিদ বাংলানিউজকে বলেন, আমি কোনো পদের জন্য আসিনি। বস (তৈমুর আলম খন্দকার) আসছেন, তার সঙ্গে আমিও আসছি। উনি উপরে গেছেন, আমি নিচে দাঁড়িয়ে আছি।
আপনার বস কোন পদের জন্য চেষ্টা করছেন? এমন প্রশ্নের জবাবে তৌহিদ বলেন, সেটা তো বলা যাবে না। আপনারা সাংবাদিকরা সব কিছুই লিখে দেন। তবে যুগ্ম মহাসচিব পদটা বসকে দিলে ভাল হয়।
ভিড় ঠেলে কার্যালয়ে তৃতীয় তলায় উঠে মহাসচিবের কক্ষসংলগ্ন কনফারেন্স রুমে গিয়ে দেখা যায়, বিভিন্ন অঞ্চল থেকে আসা শ’ দেড়েক নেতাকর্মী নিজ নিজ এলাকার কাউন্সিলর ও ডেলিগেটদের নামের তালিকা সংশ্লিষ্টদের নথিতে অন্তর্ভুক্ত করার কাজে ব্যস্ত রয়েছেন। কারো সঙ্গে কথা বলার ফুরসৎ তাদের নেই।
দপ্তরের দায়িত্বপ্রাপ্ত যুগ্ম মহাচিব রুহুল কবির রিজভীর কক্ষে তীল ধারনের জায়গা নেই। সংরক্ষিত চেয়ার-বেঞ্চগুলোতে গাদা-গাদি করে বসে রয়েছেন নেতাকর্মীরা। কারো কোনো কাজ না থাকলেও দখল করা আসন ছেড়ে কেউ উঠতেই চাচ্ছেন না।
এ কক্ষেই কথা হয় ঢাকা মহানগর বিএনপির সাবেক সদস্য সচিব কেন্দ্রীয় বিএনপির অর্থনীতি বিষয়ক সম্পাদক আবদুস সালামের সঙ্গে। দীর্ঘ দিন পর নয়াপল্টন কার্যালয়ে আসা এ নেতা বাংলানিউজকে বলেন, কাউন্সিল উপলক্ষে সকল স্তরের নেতা-কর্মী আবার সক্রিয় হওয়ার সুযোগ পেয়েছেন। বিষয়টি ভাল লাগছে।
এ কক্ষেই কথা হয় টাঙ্গাইল জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক তোহার সঙ্গে। বাংলানিউজকে তিনি বলেন, নয়াপল্টন কার্যালয়ে এসে তো কোনো পদ পাওয়া যাবে না। সে রকম কোনো চিন্তা-ভাবনা নিয়েও আসিনি এখানে। কাউন্সিল উপলক্ষে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের কর্মযজ্ঞ দেখতেই এসেছি।
রুহুল কবির রিজভীর কক্ষ পার হয়েই দাপ্তরিক কক্ষ। এ কক্ষে কর্মরত অফিস স্টাফ রেজাউল করিমের নি:শ্বাস ফেলার সময় নেই। সদা ব্যস্ত রেজাউল করিম গত কয়েক সপ্তাহ ধরে আহার-নিদ্রা ছেড়ে দাপ্তরিক কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন।
মঙ্গলবার বাংলানিউজকে তিনি বলেন, কাজের চাপে কিছু চোখে দেখছি না। তবুও কর্মমুখর বিএনপি কার্যালয় দেখে ভাল লাগছে। ১৯ মার্চ ভালয় ভালয় কাউন্সিল হয়ে গেলে এই কষ্টের কথা আর মনে থাকবে না।
বাংলাদেশ সময়: ১৮২৯ ঘণ্টা, মার্চ ১৫, ২০১৬
এজেড/জেডএম