ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

রাজনীতি

রাজাকারপুত্র চান আ’লীগের মনোনয়ন

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২৩৫ ঘণ্টা, মার্চ ১৬, ২০১৬
রাজাকারপুত্র চান আ’লীগের মনোনয়ন জাহেদ আলী

ঢাকা: নারায়ণগঞ্জ জেলার রূপগঞ্জ উপজেলার কায়েতপাড়া ইউনিয়নের রাজাকারপুত্র, আদম বেপারী কিশোর রাজাকার জাহেদ আলী এবার আসন্ন কায়েতপাড়া ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের চেয়ারম্যান প্রার্থী হতে দৌড়ঝাঁপ চালিয়ে যাচ্ছেন।

মুক্তিযুদ্ধের সময় জাহেদ আলী ছোট ছিলেন আর তার বাবা নোয়াব আলীর সব কর্মকাণ্ডে সহযোগিতা করতেন বলে এলাকাবাসী জাহেদ আলীকে কিশোর রাজাকার হিসেবে জানেন।

কিছু দিন আগে রূপগঞ্জের সংসদ সদস্য গোলাম দস্তগীর গাজীর (বীরপ্রতীক) রূপসীস্থ বাসভবনে আওয়ামী লীগের কাউন্সিল হয়।

জনপ্রিয়তা না থাকায় জাহেদ আলী সেই কাউন্সিলে অংশ গ্রহণ পর্যন্ত করেননি। এখন তিনি  চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেতে দৌড়ঝাঁপ শুরু করেছেন। টাকার বিনিময়ে নৌকা প্রতীকে মনোনয়ন পেতে তিনি বিভিন্ন মন্ত্রী-এমপির দ্বারস্থ হচ্ছেন। রাজাকারপুত্র জাহেদ আলী আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চাওয়ায় হতাশ স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও কায়েতপাড়া এলাকাবাসী।

আওয়ামী লীগের নাম ভাঙিয়ে এমন কোনো অপকর্ম নেই যা জাহেদ আলী করেননি। জাহেদ আলী ও তার বাহিনীর অত্যাচারে এলাকাবাসী অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে। জাহেদ আলীর পল্টিবাজি রাজনীতির কারণে রূপগঞ্জের বিভিন্ন এলাকা থেকে ৮টি তাজা প্রাণ চলে গেছে। আজও থামেনি সেসব পরিবারের কান্না।

কিশোর রাজাকার জাহেদ আলী ওরফে কাঁপা জাহেদ এলাকায় জমির দালালি, মানবপাচার, নারী ব্যবসাসহ বহু অবৈধ কাজের হোতা। এলাকার নিরীহ ও হতদরিদ্রদের ঠকিয়ে জাহেদ আলী এখন কয়েক কোটি টাকার মালিক বনে গেছেন। কাঁপা জাহেদ এখন গাড়ি, বাড়ি, ফ্ল্যাট, বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের মালিক। এক সময় যিনি চনপাড়া খেয়াঘাট দখল করে কোনো রকম সংসার চালাতেন বর্তমানে তিনি  কোটিপতি।

উপজেলার ইছাখালী এলাকার রাজাকার আলাউদ্দিন, নাওড়া এলাকার রাজাকার খালেকও জাহেদ আলীর পিতা রাজাকার নোয়াব আলীর সহযোগী ছিলেন। তারা কায়েতপাড়া ও ডেমরা এলাকায় পাকবাহিনীর সহযোগিতায় লুটপাট চালাত আর যুবতী মেয়েদের ধরে এনে পাকিবাহিনীর হাতে তুলে দিত। জাহেদ আলীর বাপ-দাদার জমি-জমা তেমন কিছু ছিল না। অন্যের বাড়িতে দিনমজুরি ও কৃষিকাজ করেই তারা সংসার চালাতেন। অভাবের তাড়নায় জাহেদ আলী ঢাকা গিয়ে আদম ব্যবসা শুরু করে। সেখান থেকেই তার উত্থান ঘটে।

ছাত্র জীবনে জাহেদ আলী ছাত্রদলের কনভেনার ছিলেন। টাকার বিনিময়ে ম্যানেজ করে জাহেদ আলী কায়েতপাড়া আওয়ামী লীগের সভাপতি পদ বাগিয়ে নেন। এরপর আর ফিরে তাকাতে হয়নি জাহেদ আলীকে। দলীয় নাম ভাঙিয়ে জাহেদ আলী ও তার ভাতিজারা এলাকায় রামরাজত্ব তৈরি করেছেন। এলাকায় পরিবহন চাঁদাবাজি, মাদক ব্যবসা, জমি দখল, শীতলক্ষ্যা নদীর খাস জমির চরের মাটি বিক্রি থেকে এমন কোনো কাজ নেই জাহেদ আলী ও তার বাহিনী করছে না। জাহেদ আলীর দুশ্চরিত্রতার সীমাও ছাড়িয়ে গেছে। কাজের মেয়ের সঙ্গে অনৈতিক কাজে ধরা পড়ায় এলাকাবাসীর চাপে তাকে বিয়ে করতে বাধ্য হন। এ ছাড়া আদম ব্যবসার সময় অনেক নারী তার লালসার শিকার হয়েছেন। এক বছর আগে পূর্বগ্রামের এক মেয়ের সঙ্গে উপজেলার গঙ্গানগর এলাকায় মেয়েটির বোন জামাই মারফতের বাড়িতে অনৈতিক কাজে ধরা খান। পরে ৫০ হাজার টাকা খরচ করে সে স্থানীয় লোকজনকে ম্যানেজ করে সেই ঘটনা ধামাচাপা দেন। সেই মেয়েকে জাহেদ আলী রক্ষিতা হিসেবে রেখেছে। ৪ মাস আগে তিনি সন্তানের মা হয়েছেন বলে জানা গেছে।

জাহেদ আলীর ছেলে নাহিদও দুই বিয়ে করেছে। কায়েতপাড়া ইউনিয়নে মাদক নিয়ন্ত্রণ করে তার ছেলে নাহিদ, ভাতিজা শরীফ, আল-আমিন, রুমন, তানভীর, ডিলার মতিনের ছেলে মুন্না। এলাকায় মদ, ইয়াবা, ফেনসিডিলসহ বিভিন্ন মাদকের ব্যবসার একচ্ছত্র আধিপত্য তাদের। শীতলক্ষ্যা নদীর তীরে কায়েতপাড়ার পূর্বগ্রামে প্রায় শতাধিক ডক ইয়ার্ড রয়েছে। এসব ডক ইয়ার্ডে জাহেদ আলী ও তার বাহিনী নিয়মিত চাঁদাবাজি করেন। জাহেদ আলীর ছেলে ও তার ভাতিজাদের চাঁদাবাজির কারণে কায়েতপাড়া দিয়ে চলাচলরত ঢাকা-ভক্তবাড়ী পরিবহন সার্ভিস বন্ধ হয়ে গেছে। জাহেদ আলী বাহিনীর বিশ্বস্ত সদস্য নয়ামাটির রবি রায়, নগরপাড়ার ফজলউদ্দিন, দেলপাড়ার আকতার জাহেদ আলীর সব অপকর্ম নিয়ন্ত্রণ করে। ক্ষমতা অপব্যবহার করে জাহেদ আলী কায়েতপাড়া ইউনিয়ন ভূমি অফিস নিয়ন্ত্রণ করেন। জাল দলিল, জমি দখল ও দালালি করে জাহেদ আলী প্রায় ৫০ কোটি টাকার মালিক হন। এলাকার অনেক লোক তার অত্যাচারের শিকার। ১১ মাস আগে হরিণা গ্রামের আলেকের ছেলে নবী ও ইসফিলকে একটি জমি বাবদ ১ লাখ টাকা বায়না দেন জাহেদ আলী। সেই জমি রেজিস্ট্রি করে না নিয়ে উল্টো জোরপূর্বক নবী ও ইস্রাফিলদের কাছ থেকে সাড়ে ৩ লাখ টাকা আদায় করেন জাহেদ আলী ও তার বাহিনী।

২০১০ সালে আর্মিদের বিরুদ্ধে জনগণকে ভুল বোঝানোর মূল হোতা ও উসকানিদাতা ছিলেন জাহেদ আলী ও ফজলউদ্দিন। জাহেদ আলীর কারণে রূপগঞ্জের বিভিন্ন এলাকা থেকে ৮টি তাজা প্রাণ চলে গেছে। আজও থামেনি সেসব পরিবারের কান্না। আগামী আসন্ন ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে রাজাকারপুত্র কিশোর রাজাকার জাহেদ আলী ওরফে কাঁপা জাহেদ আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন পেলে দেশের স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধ প্রশ্নবিদ্ধ হবে বলে স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধা ও আপামর জনতা মনে করেন।

বাংলাদেশ সময়: ১২৩৭ ঘণ্টা, মার্চ ১৬, ২০১৬
জেডএম/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।