ফরিদপুর: দীর্ঘ ১১ বছর পর আগামী মঙ্গলবার (২২ মার্চ) অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে ফরিদপুর জেলা আওয়ামী লীগের ত্রিবার্ষিক সম্মেলন। সম্মেলনকে সামনে রেখে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের মাঝে সাজ সাজ রব পড়ে গেছে।
পদপ্রত্যাশী নেতারা লবিং চালিয়ে যাচ্ছেন দলের উচ্চ পর্যায়ে। বিশেষ করে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদের প্রার্থী ও তাদের সমর্থকরা পোস্টার, ব্যানার আর তোরণে ঢেকে দিয়েছেন পুরো শহর। সাধারণ মানুষের মাঝেও আলোচনা চলছে, এবারের সম্মেলনে দলের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক হচ্ছেন কারা।
সব মিলিয়ে ফরিদপুর এখন উৎসবের শহরে পরিণত হয়েছে।
দলীয় বিভিন্ন সূত্র এবং নেতাকর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এবারের জেলা সম্মেলনে সভাপতি পদে ৫ জন এবং সাধারণ সম্পাদক পদে ২ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। শীর্ষ এ দুই পদপ্রত্যাশী নেতারা দলের কেন্দ্রীয় নেতাদের কাছে যার যার মতো করে লবিং চালিয়ে যাচ্ছেন। যোগাযোগ ও আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে সমর্থন লাভের চেষ্টা চালাচ্ছেন কাউন্সিলরদেরও।
সম্মেলনে যে পাঁচজন সভাপতি পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন তারা সবাই বর্তমান জেলা আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি পদে আছেন। এ পদপ্রত্যাশী নেতারা হচ্ছেন- সাবেক কেন্দ্রীয় সদস্য ও জেলা কমিটির সাবেক সাধারণ সম্পাদক বিপুল ঘোষ, লোকমান হোসেন মৃধা, অ্যাডভোকেট সুবল চন্দ্র সাহা, নগরকান্দা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আয়মন আকবর চৌধুরী বাবলু এবং ভাঙ্গা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি কাজী হেদায়েতুল্লাহ সাকলাইন। অন্যদিকে সাধারণ সম্পাদক পদ চান ফরিদপুর সদর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান খন্দকার মোহতেশাম হোসেন বাবর ও বর্তমান ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ মাসুদ হোসেন।
পদপ্রত্যাশীদের ছবি সম্বলিত ব্যানার-ফেস্টুন-তোরণ ও পোস্টারের মাধ্যমে স্ব স্ব পদে নির্বাচিত করার আহ্বান জানাচ্ছেন সমর্থকরা। ‘ফরিদপুর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি পদে দেখতে চাই’ উল্লেখ করে সেগুলো লাগানো হয়েছে জাতীয় সংসদ উপনেতা আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য সৈয়দা সাজেদা চৌধুরীর ছেলে আয়মন আকবর চৌধুরী বাবলু, আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কাজী জাফরউল্লাহর ভাই কাজী হেদায়েতুল্লাহ সাকলাইন এবং লোকমান হোসেন মৃধার নামে।
‘সাধারণ সম্পাদক পদে দেখতে চাই’ বলে দলীয় সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বেয়াই স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার খন্দকার মোশাররফ হোসেনের ছোট ভাই খন্দকার মোহতেশাম হোসন বাবরের শত শত ব্যানার-ফেস্টুন ও পোস্টার লাগানো হয়েছে সড়কে সড়কে। তৈরি করা হয়েছে অসংখ্য তোরণও। তবে এ পদে অন্য কারো সমর্থনে ব্যানার-ফেস্টুন লক্ষ্য করা যায়নি।
সম্মেলন সফল করতে গত ১২ মার্চ জেলা আওয়ামী লীগের বর্ধিত সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। এর আগে ০৫ মার্চ জেলা আওয়ামী লীগের নেতারা বর্ধিত সভা করে ফরিদপুর জেলা আওয়ামী লীগের ১নং সদস্য এলজিআরডিমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার খন্দকার মোশাররফ হোসেনকে এ সম্মেলনের সকল দায়িত্ব দেন।
ফরিদপুর জেলা আওয়ামী লীগ সূত্রে জানা গেছে, ২০০৫ সালের ১৭ মে জেলার আওয়ামী লীগের সর্বশেষ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সম্মেলনে বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ফরিদপুর জেলা পরিষদের বর্তমান প্রশাসক কাজী জায়নুল আবেদীন সভাপতি এবং ফরিদপুর পৌরসভার সাবেক চেয়ারম্যান হাসিবুল হাসান লাবলু সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। প্রায় ৮ মাস পর গঠিত হয় ৭১ সদস্য বিশিষ্ট পূর্ণাঙ্গ কমিটি। যদিও সেই কমিটিতে ভাঙ্গা উপজেলার ১৭ নেতার স্থান পাওয়ায় বিতর্কের সৃষ্টি হয়।
২০১০ সালের ২৪ জানুয়ারি জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হাসিবুল হাসান লাবলুর মৃত্যু হয়। এরপর থেকে ১নং যুগ্ন সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ মাসুদ হোসেন ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করছেন।
জেলা আওয়ামী লীগের দফতর সম্পাদক সাহেব সরোয়ার জানান, মঙ্গলবার ফরিদপুর শহরের ঐতিহাসিক অম্বিকা ময়দানে সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে। জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি কাজী জায়নুল আবেদীনকে আহবায়ক এবং জেলা আওয়ামী লীগের সকল সদস্যকে সদস্য করে সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটি করা হয়েছে। এছাড়াও সম্মেলন সফল করতে অর্থ, অভ্যর্থনা ও আপ্যায়ন, সাজসজ্জা, প্রচার এবং যোগাযোগ উপ-কমিটি করা হয়েছে।
তিনি বলেন, সম্মেলনের উদ্বোধন করবেন দলীয় সাধারণ সম্পাদক জনপ্রশাসনমন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম এমপি। প্রধান অতিথি থাকবেন সংসদ উপনেতা দলের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী এমপি। বিশেষ অতিথি থাকবেন স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার খন্দকার মোশাররফ হোসেন এমপি, কেন্দ্রীয় সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম এমপি ও কাজী জাফরউল্লাহ, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ এমপি, সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডা. দীপু মনি এমপি ও জাহাঙ্গীর কবির নানক এমপি, সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন, বি এম মোজাম্মেল হক এমপি ও আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম এমপি, দফতর সম্পাদক ড. আব্দুস সোবহান গোলাপ, আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক কর্নেল (অব.) মুহাম্মদ ফারুক খান এমপি, শ্রম ও জনশক্তি বিষয়ক সম্পাদক হাবিবুর রহমান সিরাজ, ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক আলহাজ অ্যাডভোকেট শেখ মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ, কেন্দ্রীয় সদস্য আব্দুর রহমান এমপি, এ কে এম এনামুল হক শামীম ও এস এম কামাল হোসেন, সংসদ সদস্য নিলুফার জাফরউল্লাহসহ কেন্দ্রীয় নেতারা।
বাংলাদেশ সময়: ১১৫৩ ঘণ্টা, মার্চ ১৮, ২০১৬
আরকেবি/এএসআর