আইইবি প্রাঙ্গণ (রমনা) থেকে: মেয়াদ শেষেরও দীর্ঘ সময় পর ষষ্ঠ কাউন্সিলের দ্বারপ্রান্তে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)। তাই এই আয়োজনকে ঘিরে দীর্ঘদিন চুপচাপ থাকা দলের নেতাকর্মীরাও দারুণ উচ্ছ্বসিত।
শনিবার (১৯ মার্চ) অনুষ্ঠিতব্য এ কাউন্সিলের আগের দিন শুক্রবার (১৮ মার্চ) সকাল থেকেই নেতাকর্মীতে মুখর হয়ে উঠেছে রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউট প্রাঙ্গণ। দফায় দফায় নেতারা এসে দেখে যাচ্ছেন প্রস্তুতিকর্ম। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য হান্নান শাহ এসে সরকারকে ধন্যবাদ দিলেন। কারণ সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের একটি অংশও ব্যবহার করার অনুমতি পেয়েছে দলটি।
আগত নেতাদের একজন অভিযোগ তোলেন, দেশের বাইরে থেকে আসতে চাওয়া কেউ কেউ ভিসা পাচ্ছেন না। এজন্য সরকারকে দায়ী করেন তিনি।
প্রস্তুতি নিয়ে সন্তুষ্ট দলের স্থায়ী কমিটির অপর সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়। মঞ্চ, মঞ্চের সামনের প্রয়োজনীয় সামগ্রীর অধিকাংশই দুপুরের মধ্যে এসে গেছে। নেতাকর্মীদের জন্য খাবার তৈরির প্রস্তুতি চলছে বড় বড় ডেকচিতে।
কিছুক্ষণ পরপর পিকআপ ভ্যানে সোফা, চেয়ার, বাঁশ, কাপড়, দড়িসহ প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম আসছে। জাতীয় পতাকার লাল-সবুজ রঙের কাপড়ে মুড়ে দেওয়া হয়েছে মঞ্চ। সামিয়ানা টাঙানোর কাজও চলছে। উদ্যানের কাজ অবশ্য সেভাবে এগোয়নি বিকেল পর্যন্ত।
বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় আবারও বিএনপি চেয়ারপারসন হয়েছেন খালেদা জিয়া, সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান হয়েছেন তারেক রহমান। তাদের ছবি ও দলের প্রতিষ্ঠাতা সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের ছবির সঙ্গে নিজেদের ছবি জুড়ে পোস্টার, ব্যানার টাঙাচ্ছেন দলের নেতারা ও তাদের ভক্তকর্মীরা। গাছ, সামিয়ানাসহ যেখানে যেখানে সেগুলো টাঙানো সম্ভব, কিছুই বাকি রাখছেন না তারা।
সোহরাওয়ার্দী উদ্যান সংলগ্ন ফটক দিয়ে কাউন্সিল স্থলে ঢুকছেন দলে দলে নেতাকর্মীরা। তাদের আলাপে নানা সমালোচনাও উঠে আসে। তাদের অভিমত, দিনব্যাপী এতোবড় অনুষ্ঠানের জন্য আরও বড় জায়গা প্রয়োজন। এতোদিন পর সারাদেশের নেতাকর্মী-সমর্থকদের মিলনমেলা হবে এ কাউন্সিল, ফলে শেষ পর্যন্ত স্থান সংকুলান হবে না।
মহিলা দলের এক নেত্রী বাংলানিউজকে বলেন, গরম পড়ছে খুব। লোকজন বেশি হলে এখানে নিঃশ্বাস ফেলা যাবে কিনা সেটাই ভাবছি। এছাড়া সবার খাওয়া, বাথরুমসহ সুবিধা-অসুবিধা বিচারেও এ জায়গাটা আসলেই ছোট হয়ে গেছে।
তার সঙ্গে কণ্ঠ মিলিয়ে অপর এক নেত্রী বলেন, এর চেয়ে মহানগর নাট্যমঞ্চ বা বসুন্ধরা কনভেনশন সিটি হলে ভালো হতো। ওগুলোতে স্পেস বড়। বিশেষ করে বসুন্ধরা কনভেনশন সিটিতে নিজস্ব সিকিউরিটি থাকে, গাড়ি পার্কিং আছে। ওখানে হলে আরও ভালো হতো। এখানেতো জায়গা দেখে মনে হচ্ছে, জেলা পর্যায়ের কোনো সম্মেলন।
তবে তদারকিতে থাকা কর্মীরা বলছেন, যতোটা ছোট পরিসর মনে হচ্ছে, কাজ শেষে তা মনে হবে না। গোছানোর কাজ শেষ হলে, ভালোই স্পেস পাওয়া যাবে।
বিকেল নাগাদ আরও কয়েকজন নেতার প্রাঙ্গণে আসার কথা রয়েছে বলে তারা জানান। অনেক দিন পর সতীর্থদের কাছে পেয়ে অনেকেই গল্পে ও সরকারের নিন্দায় মশগুল। কারো কারো অভিযোগ, এলাকায় জানাজানির ভয়ে কেউ কেউ আসতে পারছেন না। যদি পরে সরকারি দলের রোষানলে পড়তে হয়, সেই আশঙ্কা তাদের।
এদিন দুপুরে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে দলের যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী জানান, সারাদেশ থেকে বিএনপির ৭৬টি সাংগঠনিক জেলার সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক, প্রত্যেক থানা, পৌরসভা, জেলা ও মহানগরের সভাপতি- সাধারণ সম্পাদক এবং সাংগঠনিক জেলা থেকে ২ জন করে নারী কাউন্সিলরকে কার্ড দেওয়া হয়েছে। কাউন্সিল উপলক্ষে ডেলিগেটরা ইতিমধ্যে ঢাকায় পৌঁছেছেন।
এর আগে বিএনপির কাউন্সিল (দলের পঞ্চম কাউন্সিল) হয়েছিলো ২০০৯ সালের ৮ ডিসেম্বর। পরের জানুয়ারিতে ৩৮৬ সদস্যের জাতীয় নির্বাহী কমিটি কার্যকর হয়। নিয়মানুসারে, তিন বছর মেয়াদ শেষ হলেও এতোদিন নানা কারণ দেখিয়ে কাউন্সিল করতে পারেনি একাধিকবার রাষ্ট্রক্ষমতায় থাকা দলটি।
অবশ্য তৃতীয় কাউন্সিলে তারা আরও বেশি সময় নিয়েছিলো। ১৯৮২ সালের ফেব্রুয়ারিতে দ্বিতীয় কাউন্সিল হওয়ার আট বছর পর, ১৯৮৯ সালের মার্চে হয় তৃতীয়টি। প্রথম কাউন্সিলটি হয় ১৯৭৮ সালের সেপ্টেম্বরে, ১৯৯৩ সালের সেপ্টেম্বরে হয় চতুর্থ কাউন্সিল।
বাংলাদেশ সময়: ১৬৪৫ ঘণ্টা, মার্চ ১৮, ২০১৬
এসকেএস/আরএম