আইইবি প্রাঙ্গণ (রমনা) থেকে: কর্মীদের ‘অবাধ্যতায়’ ধীর হয়ে পড়েছে কাউন্সিলের প্রস্তুতি কাজ। রাত পোহালেই শুরু হবে বিএনপির ষষ্ঠ জাতীয় কাউন্সিল, অথচ এখনো কাজ বাকি।
মাইকে বারবার মিনতি ও নির্দেশনা আসছে, মঞ্চের কাছ থেকে সরে যেতে, প্যান্ডেলের বাইরে যেতে বলা হচ্ছে নেতাকর্মীদের। কিন্তু ভ্রুক্ষেপ নেই তাদের। উচ্ছসিত নেতাকর্মীরা মূল মঞ্চের কাছে গিয়ে সেলফি তোলায় ব্যস্ত, কিংবা জটলা হয়ে আড্ডায়।
হাতে সময় নেই আয়োজকদের- বলছেন তারা। শনিবার (১৯ মার্চ) সকাল থেকে কাউন্সিল, শুক্রবার (১৮ মার্চ) রাতের কয়েকটি ঘণ্টাইতো কেবল বাকি।
কর্মীদের দোষ দিচ্ছেন না তারা। এতোদিন পর কাউন্সিল, মিলিত হওয়ার সুযোগ পেয়ে অবাধ্যতা ভর করেছে তাদের মাঝে। এক-আধটু ছবি না তুলে কেউ সরতে চান না। কেউ কেউ ছবি তোলা শেষে বসে থাকছেন, আড্ডা দিচ্ছেন। আর এভাবেই বিঘ্ন ঘটছে কাজে, চলছে খুব ধীরগতিতে।
নেতারা যেন উপায় পাচ্ছেন না। বারবার অনুরোধ, নির্দেশ জানিয়েও কাজ না হওয়ায় বিরক্তিও প্রকাশ করছেন।
ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির হান্নান শাহ, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ঢাকা মহানগর বিএনপির সাবেক আহ্বায়ক আবদুস সালাম, নির্বাহী কমিটির সদস্য অ্যাডভোকেট মোয়াজ্জেম হোসেন আলালসহ নেতারা বারবার চেষ্টা করেও কর্মীদের স্থানত্যাগ করাতে পারছেন না।
একেকবার চেয়ার পেতে পুরো আসরটির একটি চেহারা আনা হয়, এরপর বেশ ক’জন সেটি ওলটপালট করে রেখে যান। আবার ঠিক করা হয়। আবারও কিছুক্ষণ পর একই কাণ্ড। মঞ্চে চেয়ার, ফুল, বহনযোগ্য এয়ারকুলার, সাউন্ড সিস্টেম সেট করতে বেশ বেগ পেতে হচ্ছিল ডেকোরেশনকর্মীদের।
মঞ্চের সামনে প্যান্ডেলে বাতি, ফ্যান সংযোগের কাজও তারা সময়মতো শেষ করতে পারেন নি। নেতারা আশা করেছিলেন, রাত ১০টার আগেই প্রায় সব কাজ শেষ হয়ে যাবে। কিন্তু প্রত্যাশা থেকে অনেক দূরে বাস্তবতা।
খাদ্যদ্রব্যের উচ্ছিষ্ট ফেলে বেশ নোংরা হয়েছে পুরো প্রাঙ্গণ। কাজ শেষ হলে সেসব পরিষ্কার করার বিষয়ও রয়েছে।
প্রস্তুতি শেষ না হওয়ার পেছনে অবশ্য অন্য কারণও বলছেন নেতারা। গয়েশ্বর ও সালাম বলছেন, সরকার কোনোভাবেই চায়নি এমন আয়োজন বিএনপি করতে পারুক। তাই তারা শেষ মুহূর্তে ভেন্যু ব্যবহারের অনুমতি দিয়েছে। এতো কম সময়ে এর চেয়ে ভালো প্রস্তুতি সম্ভবও নয়।
রাত ৯টার দিকে গয়েশ্বর একটু কৌশল নেন। নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, আপনারা নিশ্চয়ই অনেক ক্লান্ত। আমরা নিজ থেকে জোর করে আপনাদের চলে যেতে বলতে পারি না। তবে অনুরোধ করবো, সবাই যার যার বাসায় যান, একটু গোসল করে খেয়ে নিন, এরপর ঘুমিয়ে পড়ুন। তাহলে কাল সারাদিনের কষ্টটা করতে পারবেন। আপনাদের জন্যই এতো আয়োজন। কাল যেন কোনো ঝামেলা না হয়, সেজন্য আজ একটু
জায়গাটা ছেড়ে দিন, যাতে ভালোভাবে প্রস্তুতি নেওয়া যায়। কিন্তু তাতেও কাজ হয় না।
এরপর সাড়ে ৯টার দিকে মাইকে বলা হয়, নিরাপত্তার খাতিরে সব গেট বন্ধ করে দেওয়া হবে। মঞ্চের দিকে কেউ যেন আর না থাকে।
কিন্তু সেসব কথা বিশ্বাস করলেন না কর্মীরা। যেতে চাইলেন না।
একপ্রকার জোর করেই সবাইকে বাইরে যেতে বাধ্য করা হয়। সেটিও কিছুক্ষণের জন্য। কিছুক্ষণ পর থেকে কয়েকজন করে করে জটলা এবং আবারও ভিড় বাড়তে থাকে।
আয়োজকদের কয়েকজন কিছুটা চিন্তিত রয়েছেন বলে আলাপে জানান। তারা বলছেন, সব প্রস্তুতি শেষে একবার চেক করতে হবে। এভাবে চলতে থাকলে প্রস্তুতি শেষ কখন হবে, আর কখনইবা চেক করা যাবে- ভেবে পাচ্ছেন না তারা।
এদিকে শনিবার সেভাবে কোনো নতুনত্বের আশা করছেন বলে জানালেন নেতাকর্মীরা। তারা বলছেন, সবাই একটি দিন একসঙ্গে দেখা-সাক্ষাৎ হবে ধরে নিয়েই এসেছেন।
তবে যারা পদ-পদবীর আকাঙ্ক্ষা করছেন, তাদের ঘিরে জটলা রয়েছে সমর্থকদের। আলোচনায় কান পেতে মির্জা ফখরুলের ঘাড় থেকে ‘ভারপ্রাপ্ত’ শব্দটি খসার আলাপ শোনা যায়।
ফখরুল অবশ্য সেসব নিয়ে ভাবেন না বলে জানান। এসব বিষয় পুরোপুরি দল ও দলনেতা খালেদা জিয়ার ওপর ছেড়ে দিতে বলেন। ভারপ্রাপ্ত থাকা বা পুরোপুরি মহাসচিব হওয়ার ওপর তার কাজে প্রভাব পড়বে না বলে জানান।
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা মীর নাছির, আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী, ভাইস চেয়ারম্যান সেলিমা রহমান, নির্বাহী কমিটির সদস্য নীলুফার চৌধুরী মনি, শাম্মী আখতার প্রমুখ কাজের অগ্রগতি দেখতে আসেন।
বাংলাদেশ সময়: ২২৪৩ ঘণ্টা, মার্চ ১৮, ২০১৬
এসকেএস/জেডএস
** বিএনপি কাউন্সিলের রসুই সমাচার
** বিএনপির নেতাকর্মীতে মুখর আইইবি প্রাঙ্গণ