ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

রাজনীতি

সকাল ১০টায় শুরু বিএনপির কাউন্সিল

আসাদ জামান, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৬০৮ ঘণ্টা, মার্চ ১৯, ২০১৬
সকাল ১০টায় শুরু বিএনপির কাউন্সিল ছবি : বাদল ও দীপু মালাকার-বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

ঢাকা: জাতীয় ও দলীয় পতাকা উত্তোলনের মধ্য দিয়ে শনিবার (১৯ মার্চ) সকাল ১০টায় শুরু হচ্ছে বিএনপির ষষ্ঠ জাতীয় কাউন্সিল। এরইমধ্যে সব প্রস্তুতি সম্পন্ন।

রমনার ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউট অব বাংলাদেশ মিলনায়তন ও এর চত্বর এবং সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের পূর্ব-উত্তর অংশ কাউন্সিল ভেন্যু হিসেবে ব্যবহার করছে বিএনপি।  
 
দলীয় সূত্রমতে, সকাল ১০টায় জাতীয় ও দলীয় পতাকা উত্তোলনের মধ্য দিয়ে দিনব্যাপী কর্মসূচির আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন ঘোষণা করবেন কাউন্সিলের প্রধান অতিথি বিএনপির চেয়ারপারস খালেদা জিয়া।
 
সবশেষ ২০০৯ সালের ৮ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত হয় দেশের বৃহৎ রাজনৈতিক দল বিএনপির পঞ্চম জাতীয় কাউন্সিল।
 
পর পর তিনটি ‘ব্যর্থ’ আন্দোলন, সিটি করপোরেশন, উপজেলা ও পৌরসভা নির্বাচনে ভরাডুবি, ‘নাশকতানির্ভর’ আন্দোলনের পর মামলা-জেল-আত্মগোপন ও নেতাদের বিদেশযাপনে নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়া বিএনপি জাতীয় কাউন্সিলের মাধ্যমে ফের জেগে উঠবে বলে মনে করছেন দলটির দায়িত্বশীল নেতা ও রাজনীতি বিশ্লেষকরা।
 
তিন হাজার ১ শ’ কাউন্সিলর, প্রায় ১০ হাজার ডেলিগেট, আমন্ত্রিত অতিথি, বিদেশি মেহমান ও দলের বিভিন্ন স্তরের নেতাকর্মী মিলে প্রায় ৩০/৩৫ হাজার লোকের অংশগ্রহণে একটা সফল কাউন্সিলের স্বপ্ন দেখছে বিএনপি।
 
‘মুক্ত করবই গণতন্ত্র’ প্রতিপাদ্য সামনে রেখে এবারের কাউন্সিলের স্লোগান ঠিক করা হয়েছে ‘দুর্নীতি দুঃশাসন হবেই শেষ, গণতন্ত্রের বাংলাদেশ। ’ অবশ্য বিএনপির অঙ্গ সংগঠন, জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল, যুবদল, মহিলা দল, কৃষক দল, শ্রমিক দল, ওলামা দল, তাঁতী দল, মৎস্যজীবী দল আলাদা আলাদা স্লোগান ঠিক করেছে। নিজ নিজ সংগঠনের পক্ষে পোস্টার, ব্যানার ও ফেস্টুন তৈরি করেছে তারা।
 
প্রায় ৬ বছর পর অনুষ্ঠেয় এ কাউন্সিল সামনে রেখে গত দেড় মাস মহাব্যস্ত সময় পার করেছে বিএনপি। গত ২৩ জানুয়ারি স্থায়ী কমিটির বৈঠকে কাউন্সিলের সিদ্ধান্ত গ্রহণের পরই দায়িত্বশীল নেতারা কোমর বেঁধে নেমে পড়েন কাজে। খালেদা জিয়াকে প্রধান করে কয়েকদিনের মধ্যেই গঠন করা হয় ১১টি উপ-কমিটি।
 
অর্ভ্যথনা উপ-কমিটির আহ্বায়ক হন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, ঘোষণাপত্র উপ-কমিটির আহ্বায়ক বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য তরিকুল ইসলামকে, শৃঙ্খলা উপ-কমিটির আহ্বায়ক হন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আ স ম হান্নান শাহ, ড্রাফটিং উপ-কমিটির আহ্বায়ক হন নজরুল ইসলাম খান, ব্যবস্থাপনা ও প্রচার উপ-কমিটির আহ্বায়ক হন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, আন্তর্জাতিক উপ-কমিটির আহ্বায়ক হন সাংবাদিক শফিক রেহমান, প্রকাশনা উপ-কমিটির আহ্বায়ক হন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ আল নোমান, চিকিৎসা উপ-কমিটির আহ্বায়ক হন বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা এ জেড এম জাহিদ হোসেন, তথ্য ও যোগাযোগ উপ-কমিটির আহ্বায়ক হন বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী,  সাংস্কৃতিক উপ-কমিটির আহ্বায়ক করা হন বিএনপি সাংস্কৃতিক বিষয়ক সম্পাদক গাজী মাজহারুল আনোয়ার ও আপ্যায়ন উপ কমিটির আহ্বায়ক হন বিএনপির অর্থনীতি বিষয়ক সম্পাদক আবদুস ‍সালাম।
 
এই উপ কমিটিগুলো কাউন্সিলের সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে। প্রায় দুই মাস ধরে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয় ও গুলশানে খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক কার্যালয়ে চলে এ কর্মযজ্ঞ।
 
শুরুতেই কাউন্সিলের ভেন্যু নিয়ে দুঃচিন্তায় পড়ে বিএনপি। বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্র ও ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যান ব্যবহারের অনুমতি চেয়ে চিঠি দিলেও সংশ্লিষ্টদের কাছ থেকে কোনো সাড়া পায়নি দলটি। অবশেষে রমনার ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউট অব বাংলাদেশ মিলনায়তনে কাউন্সিল করার অনুমতি পায় তারা।
 
অনুমতি পাওয়ার পরই ব্যাপক উৎসাহ উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে কাউন্সিলের চূড়ান্ত প্রস্তুতি শুরু করে বিএনপি। গত দুই সপ্তাহ টানা কাজ কাউন্সিলের সব প্রস্তুতি শেষ করে এনেছে দলটি।
 
তবে এবারের কাউন্সিলে বাড়তি কোনো চমক থাকছে না। কাউন্সিলের ১২ দিন আগে গত ৬ মার্চ দলের চেয়ারপারসন ও সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান পদে পুনঃনির্বাচিত হয়েছেন খালেদা জিয়া। কাউন্সিলের দিন বড় জোর মহাসচিব হিসেবে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের নাম ঘোষণা করতে পারেন খালেদা জিয়া।
 
বর্তমান কাঠামো অনুযায়ী জাতীয় স্থায়ী কমিটির ১৯, ভাইস চেয়ারম্যান ১৬, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব ১, যুগ্ম মহাসচিব ৭, ও সাংগঠনিক সম্পাদকের ৮টি পদসহ মোট ৪৩টি পদে কাউন্সিলের কয়েক দিন পর নেতাদের নিয়োগ দিতে পারেন বিএনপি প্রধান।
 
কেন্দ্রীয় নির্বাহী সদস্য হিসেবে ২৬৫ জন বা প্রয়োজনীয় সংখ্যক নেতা নিয়োগ দিতে এক/দেড় মাস সময় লাগতে পারে তার। কারণ, এ পদের জন্য জমা পড়া কয়েক হাজার সিভি থেকে ২৬৫ জনকে বাছাই করতে হবে।

তবে কাউন্সিলে নেতা নির্বাচনের ‘আসল’ কাজটি না হলেও তিন দফার ব্যর্থ আন্দোলনে নৈতিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়া বিএনপি আবার চাঙা হয়ে উঠবে বলে মনে করছেন দলটির শীর্ষ নেতারা।
 
অদূরদর্শী কর্মসূচির পর দীর্ঘদিন ঘরে ঢুকে থাকা নেতা-কর্মী কাউন্সিল উপলক্ষে ফের বের হয়ে আসতে পেরেছেন- এটিই বিএনপির জন্য টার্নিং পয়েন্ট হিসেবে দেখছেন কেউ কেউ।
 
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ আল নোমান বলেন, হামলা মামলায় জর্জরিত নেতাকর্মীরা কাউন্সিল উপলক্ষে আবার সক্রিয় হয়ে  উঠেছেন। তাদের মধ্যে এক ধরনের উৎসাহ উদ্দীপনা দেখা যাচ্ছে। বিষয়টি বিএনপির জন্য ইতিবাচক।
 
বাংলাদেশ সময়: ০৬০৯ ঘণ্টা, মার্চ ১৯, ২০১৪
এজেড/এএ

** রাত পোহালেই বিএনপির কাউন্সিল

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।