ময়মনসিংহ : ‘প্রচারেই প্রসার’- চেনা এ শব্দটিই এখন রাজনীতির গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে। আর এ বিজ্ঞাপনী রাজনীতি সংস্কৃতির প্রধান হাতিয়ার হয়ে উঠেছে হালের বিলবোর্ড আর প্যানাফ্যাক্স।
নিজেদের জাহির করতে বছরের পর বছর দেশের রাজনৈতিক দলগুলোর নেতাকর্মীদের মাঝে চলছে প্রচারণার এমন অসুস্থ প্রতিযোগিতা।
সমকালীন রাজনীতির এ দৈন্যতা চোখে আঙুল দিয়ে আরও একবার দেখিয়ে দিয়েছেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। বিজ্ঞাপনী রাজনীতি সংস্কৃতি, নেতৃত্ব গুণের দুর্বলতার বিষয়ে অভয়চিত্তে প্রতিবাদী এক রাজনীতিকের প্রতিকৃতি তিনি। যিনি মন্ত্রিত্বকে নিবেদন করেছেন জনস্বার্থেই।
দৃষ্টিকটু বিলবোর্ডে কেবল ছবি ছাপিয়ে আর গৎবাঁধা কথাবার্তা বলে নেতা হওয়া যায় না। নেতা হতে গেলে কঠোর অধ্যয়ন ও অনুশীলন দরকার, এমনটিও মনে করেন বৃত্তের বাইরের এ রাজনীতিক।
বৃহস্পতিবার (১৭ মার্চ) ময়মনসিংহের ত্রিশালে প্রতিষ্ঠিত জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মদিনে প্রায় ৪৫ মিনিটের নাতিদীর্ঘ বক্তৃতায় সমকালীন বিলবোর্ড রাজনীতি, রাজনীতিকদের বক্তৃতাবাজি, স্তুতি, আচার-আচরণ, ভাষণ শিল্প, বঙ্গবন্ধুর সংগ্রামী রাজনৈতিক জীবনসহ ইত্যাকার বিষয়ে কঠিন কথা সহজ করে বলেন বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিশ্বস্ত এ ছায়াসঙ্গী।
সরকারের নীতি নির্ধারক এ নেতার নরম-গরম উচ্চারণে বিষ্ময়মুগ্ধ হয়ে শোনেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। রাজনৈতিক পরিমণ্ডলেও সূত্রপাত করে গভীর আলোচনার। জনপ্রিয় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকেও চলে ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া।
রাজনীতিতে ইদানিং হঠাৎ রাজনীতিকের আধিক্য বেড়েছে। মূল দলে বা অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনে কোনো পদ-পদবী না থাকলেও বিলবোর্ড আর প্যানাফ্যাক্সের বদৌলতে অনেকেই নামের পাশে যোগ করেছেন ‘নেতা’ শব্দটি। লড়াই, সংগ্রাম ও জেল-জুলুমের সিঁড়ি পথ না মাড়িয়েই এখন সবাই নেতা।
রাজনীতির এমন প্রবণতায় যারপরেনাই বিরক্ত মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। নেতার হিড়িক পড়ে যাওয়াকে তিনি অভিহিত করেছেন নেতা উৎপাদনের কারখানা হিসেবে। কঠোর সমালোচনা করে বলেছেন, ‘এখন বিলবোর্ডে নেতা আর নেতা।
আতি নেতা, পাতি নেতা, বড় নেতা, ছোট নেতা, সিকি নেতা। এরকম অসংখ্য নেতা। বাংলাদেশে এখন পোস্টার লাগাতে কর্মী পাওয়া যায় না। এটা নেতা উৎপাদনের বিরাট কারখানা। ’
নেতৃত্বের গুণাবলীর মধ্যে বাগ্মিতা গুরুত্বপূর্ণ। ভাষণ একজন রাজনীতিকের অন্যতম প্রধান গুণ। এ গুণের কারণেই রাজনীতিক জনগণের কাছে জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন। কিন্তু এখনকার নেতারা ভাষণ দিতে পারেন না। বক্তৃতাবাজিতে নষ্ট হয় সমঘণ্টার।
কী বলবেন, কী বলতে হবে এ সম্পর্কেই তাদের স্বচ্ছ জ্ঞান নেই। আর এর মূল কারণ তারা পরিশ্রম করে পড়াশোনা করেন না।
অথচ বঙ্গবন্ধুর ভাষণ সাধারণ মানুষকে উজ্জীবিত করতো। কাছে টানতো। বঙ্গবন্ধু বলতেন গভীর আত্মবিশ্বাস থেকে। তার বক্তব্য জনগণের কাছে সরাসরি আবেদন রাখতো। বঙ্গবন্ধুর পর এ গুণ রয়েছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার।
সড়ক পরিবহনমন্ত্রী মনে করেন এমনই। বলেন, ‘ভাষণ একটি শিল্প। এ শিল্প শেখাবে, কখনো হাসাবে, কখনো কাঁদাবে, কখনো আবেগাপ্লুত করবে।
কখনো কাজের অনুপ্রেরণা দেবে, শক্তি যোগাবে। ভাষণ নেতৃত্ব দিয়েছিলেন একজন। তিনি হলেন বঙ্গবন্ধু। এখন ভাষণে নেতৃত্ব দেন একজন, তিনি হলেন বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা। ’
‘ওবায়দুল কাদের একজন প্রথাবিরোধী রাজনীতিক। যা বিশ্বাস করেন সেটাই করেন। আর যা করেন তার পেছনে থাকে গভীর পর্যবেক্ষণ। মন্ত্রিত্বের সংজ্ঞাই তিনি বদলে দিয়েছেন।
চলমান রাজনীতিকদের দৈন্যতা মন্ত্রী চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছেন। তার বক্তব্য থেকে সবার শেখার অনেক কিছুই আছে’ অভিমত জানাতে গিয়ে বলছিলেন জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনিয়র শিক্ষক ড.ইমদাদুল হুদা।
‘ওবায়দুল কাদের কথা বলেন নিজস্ব স্টাইলে’ এমন মন্তব্য করে প্রেসক্লাব ময়মনসিংহের সাধারণ সম্পাদক মো. শামসুল আলম খান বলেন, ‘মন্ত্রী যখন যা বলেন তা আত্মপ্রত্যয় নিয়েই বলেন।
তার কথা অনেকের কাছেই রুঢ় হলেও জনস্বার্থ সংরক্ষিত হয়। রাজনীতির গুণগত পরিবর্তনের জন্য তার প্রতিবাদী উচ্চারণ ময়মনসিংহবাসীকে মুগ্ধ করেছে। ’
‘বাংলাদেশ নেতা উৎপাদনের বিরাট কারখানা’ বাংলানিউজে প্রকাশিত সড়ক মন্ত্রীর হুবুহু বক্তৃতারও উচ্ছ্বসিত প্রশংসা চলছে ফেসবুকেও।
মাহফুজা মুন্না নামে একজন লিখেছেন, ‘মুগ্ধ হওয়ার মতো বক্তৃতা। উনি যা বলেন তা মন থেকে এবং বিশ্বাস থেকে বলেন আর সহজ বাক্যে বলেন তাই এত প্রাঞ্জল এত শ্রুতি মধুর। ’
হাসান খান নামে একজন লিখেছেন, ‘মাননীয় মন্ত্রী সাহেব সবসময় সত্যি কথাই বলেন। আমাদের দেশে এক পরিবারে ৪ জন সদস্য থাকলে ৪ জনই নেতা। সাধারণ জনগণ এখন চিন্তায় পরে গেলো। কারণ-একসময় দেশে সাধারণ জনগণ থাকবে না, সবাই নেতা হয়ে যাবে। ’
অমিত ঢাকুয়া নামে আইডি থেকে একজন লিখেছেন, ‘স্যালুট অ্যান্ড আমরা গর্বিত আপনাকে নিয়ে। কারণ, আপনি বাংলাদেশি রাজনীতিক। ’
বাংলাদেশ সময়: ০৯৪৭ ঘণ্টা, মার্চ ১৯, ২০১৬
পিসি/