ঢাকা: জাতীয় নির্বাচন বর্জন এবং জ্বালাও-পোড়াওয়ের মতো নেতিবাচক রাজনীতির কারণে বিএনপি জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে এবং দলটির ওপর থেকে মানুষ মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে বলে মনে করছে আওয়ামী লীগ। ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনের ফলাফলের মধ্য দিয়ে এটা স্পষ্ট হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন ক্ষমতাসীন দলের নেতারা।
আওয়ামী লীগ নেতারা বলছেন, প্রথম ধাপে অনুষ্ঠিত ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ কাঙ্খিত বিজয় অর্জনে সক্ষম হয়েছে। এ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপির অনেকটাই ভরাডুবি হয়েছে।
গত মঙ্গলবার (২২ মার্চ) ইউনিয়ন পরিষদের(ইউপি) প্রথম ধাপের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এ ধাপে ৭১২টি ইউপির মধ্যে এ পর্যন্ত নির্বাচন কমিশন (ইসি) ঘোষিত ৫২২টির ফলাফলে ৩৯৪টিতে আওয়ামী লীগের চেয়ারম্যান প্রার্থী বিজয়ী হয়েছেন। বিএনপি পেয়েছে ৩৫টি চেয়ারম্যান পদ।
এ ফলাফলের কারণ হিসেবে আওয়ামী লীগ নেতারা মনে করছেন, একদিকে রয়েছে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন সরকারের ধারাবাহিক উন্নয়ন। সরকারের এ উন্নয়ন কার্যক্রম তৃণমূল পর্যায় পর্যন্ত পৌঁছেছে। তৃণমূলের মানুষ সরকারের উন্নয়নের সুফলও পাচ্ছে। এর ফলে আওয়ামী লীগের প্রতি তাদের আস্থা ও সমর্থন রয়েছে।
অন্যদিকে বিএনপির ধারাবাহিক নেতিবাচক রাজনীতি মানুষ ভালোভাবে গ্রহণ করেনি বলে মন্তব্য করে আওয়ামী লীগ নেতারা বলেন, বিশেষ করে ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির জাতীয় সংসদ নির্বাচন বর্জন। শুধু বর্জনই নয়, ওই নির্বাচন প্রতিহত করতে বিএনপি-জামায়াত ধ্বাংসাত্মক কর্মকাণ্ড চালিয়েছে। এর আগে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার ঠেকাতে জামায়াতের সঙ্গে আন্দোলনের নামে ধ্বাংসাত্মক কর্মকাণ্ড চালিয়েছে। সর্বশেষ ২০১৫ সালের ০৫ জানুয়ারি থেকে ৯২ দিন লাগাতার ব্যর্থ আন্দোলন চালিয়েছে। এসব আন্দোলন ও কর্মকাণ্ডে প্রাণ হারিয়েছেন কয়েক শ’ মানুষ।
আওয়ামী লীগ নেতাদের মতে, বিএনপির এ ধরনের কর্মকাণ্ড ও আচরণে সর্বস্তরের মানুষের মধ্যে দলটির নেতিবাচক মনোভাব ও এক ধরনের ক্ষোভও তৈরি হয়েছে। বিএনপি জনগণ থেকে একরকম বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। যার বহির্প্রকাশ ঘটেছে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে। এছাড়া ৫ জানুয়ারির জাতীয় নির্বাচন বর্জন এবং আন্দোলনে চরমভাবে ব্যর্থ হওয়ায় বিএনপির তৃণমূল নেতাকর্মীদের মধ্যে হতাশা তৈরি হয়েছে। এর নেতিবাচক প্রভাবও ইউপি নির্বাচনে পড়েছে বলে আওয়ামী লীগ নেতারা মন্তব্য করেন।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কাজী জাফরউল্লাহ বাংলানিউজকে বলেন, বিগত নির্বাচনে বিএনপির অংশ না নেওয়া মানুষ ভালোভাবে নেয়নি। শুধু তাই নয়, তারা দীর্ঘদিন ব্যর্থ আন্দোলন করেছে, চলন্ত বাসে পেট্রোল বোমা ছুড়ে মানুষ পুড়িয়ে মেরেছে। এটা মানুষেরে মনে বিএনপির প্রতি নেতিবাচক ভাবমূর্তি তৈরি করেছে। নির্বাচন বর্জন করে নেতিবাচক রাজনীতি করায় বিএনপির তৃণমূল নেতাকর্মীরাও ঝিমিয়ে পড়েছেন। ফলে ইউপি নির্বাচনে বিএনপি যে কাঙ্খিত ফলাফল পায়নি এটাই স্বাভাবিক।
আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ বাংলানিউজকে বলেন, সরকারের অব্যাহত উন্নয়নের ধারার প্রতি জনগণ আস্থা স্থাপন করেছেন। পাশাপাশি বিএনপির সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের পক্ষে অবস্থান, যুদ্ধাপরাধীদের রক্ষার চেষ্টা এবং জাতীয় নির্বাচন বর্জন ও সেই নির্বাচন ঠেকাতে মানুষ পুড়িয়ে মেরেছে। এসব করতে গিয়ে তারা জনগণের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করেছিলো। বিএনপি যে জনগণের বিরুদ্ধে অবস্থান নেয় সেটা সর্বশেষ ২০১৫ সালের আন্দোলনে স্পষ্ট হয়। ফলে জনগণও তাদের নেতিবাচক রাজনীতির বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে। ইউপি নির্বাচনের প্রথম ধাপেই তার প্রতিফন ঘটেছে।
আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম বিএনপির কর্মকাণ্ডের কথা উল্লেখ করে বাংলানিউজকে বলেন, বিএনপি তাদের অতীত কর্মকাণ্ডের কারণে জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। জাতীয় নির্বাচন বর্জন করে নেতিবাচক রাজনীতির পথ বেছে নেয়। এতে জনগণ বিএনপি থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে। তাদের জনসমর্থন মাইনাসের দিকে চলে যাচ্ছে। ইউপি নির্বাচনে তারই প্রভাব পড়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ২১০৯ ঘণ্টা, মার্চ ২৪, ২০১৬
এসকে/এএসআর