ঢাকা: ষষ্ঠ জাতীয় কাউন্সিলের ১১ দিন পর বুধবার (৩০ মার্চ) বিএনপির ৭ম মহাসচিব হিসেবে আনুষ্ঠানিক নিয়োগ পেয়েছেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব হিসেবে টানা ৫ বছর দায়িত্ব পালন শেষে এ পদে নিয়োগ পেলেন তিনি।
বিএনপির ৩৭ বছরের ইতিহাসে আরো ৬ জন মহাসচিবের দায়িত্ব পালন করেছেন। ১৯৭৯ সালে বিএনপি প্রতিষ্ঠার সময় মহাসচিবের দায়িত্ব পান অধ্যাপক ড. একিউএম বদরুদ্দোজা চৌধুরী।
এরপর পর্যায়ক্রমে বিএনপির মহাসচিব হন কর্নেল (অব.) মোস্তাফিজুর রহমান, কেএম ওবায়দুর রহমান, ব্যারিস্টার আবদুস সালাম তালুকদার, আবদুল মান্নান ভূঁইয়া ও খন্দকার দেলোয়ার হোসেন। এদের মধ্যে পাঁচজন মহাসচিবই মারা গেছেন।
প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক জিয়াউর রহমান ১৯৭৯ সালের পহেলা সেপ্টেম্বর বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) গঠন করলে অধ্যাপক ড. একিউএম বদরুদ্দোজা চৌধুরী দলটির মহাসচিব হিসেবে দায়িত্ব পান।
বিএনপির এই প্রতিষ্ঠাতা মহাসচিব বদরুদ্দোজা চৌধুরী ২০০১ সালের নির্বাচনে চার দলীয় জোট ক্ষমতায় এলে বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি হন। কিন্তু তার বিদায় সুখকর হয়নি।
সাত মাস দায়িত্ব পালনের পর ২০০২ সালের ৩০ মে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের মৃত্যুবার্ষিকীতে তার সমাধিতে শ্রদ্ধা না জানানোয় বিএনপি নেতাকর্মীদের মধ্যে ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। বিএনপির অনেক নেতা তার বিরুদ্ধে বিশ্বাসঘাতকতার অভিযোগ আনেন। সংসদে তার বিরুদ্ধে অভিশংসন প্রস্তাবেরও পরিকল্পনা হয়।
নিজ দলের মধ্যে বিরাজমান ক্ষোভ ও ক্রমবর্ধমান চাপের মুখে ২০০২ সালের ২১ জুন বিএনপি সভানেত্রী খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেখা করে পদত্যাগের সিদ্ধান্ত নেন তিনি। প্রেসিডেন্ট পদ থেকে পদত্যাগের পর বি. চৌধুরী বিএনপি থেকেও পদত্যাগ করেন।
বি. চৌধুরীর পর বিএনপির মহাসচিব হন কর্নেল (অব.) মোস্তাফিজুর রহমান। তিনি ছিলেন বিএনপির দ্বিতীয় মহাসচিব।
বিএনপির তৃতীয় মহাসচিব ছিলেন কে এম ওবায়দুর রহমান। ১৯৮৬ সাল থেকে ১৯৮৮ সাল পর্যন্ত তিনি দলটির মহাসচিবের দায়িত্ব পালন করেন। ২০০৭ সালের ২১ মার্চ মৃত্যুর আগ মুহূর্ত পর্যন্ত বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ছিলেন কে এম ওবায়দুর রহমান।
তার মৃত্যুর পর বিএনপির চতুর্থ মহাসচিব হন ব্যারিস্টার আব্দুস সালাম তালুকদার। ১৯৯৬ সালের ২৫ জুন পর্যন্ত তিনি দলটির মহাসচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৯৯ সালের ২০ আগস্ট তিনি মৃত্যুবরণ করেন।
বিএনপির পঞ্চম মহাসচিব ছিলেন আব্দুল মান্নান ভূঁইয়া। ১৯৯৬ সালের ২৬ জুন তাকে মহাসচিবের দায়িত্ব দেন দলটির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। কিন্তু ১/১১ এর রাজনৈতিক পট পরিবর্তনে দলের অভ্যন্তরে সংস্কার প্রস্তাব উত্থাপন করলে ২০০৭ সালের ৩ সেপ্টেম্বর মহাসচিব পদ ও বিএনপি থেকে তাকে বহিষ্কার করা হয়। ২০১০ সালের ২৮ জুলাই তিনি মৃত্যুবরণ করেন।
এক/এগারো পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে মান্নান ভূঁইয়াকে সরিয়ে দলের ষষ্ঠ মহাসচিব হিসেবে খন্দকার দেলোয়ার হোসেনকে নিয়োগ দেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। দলের দুঃসময়ে দায়িত্বপালন করে বিএনপি প্রধানের আস্থাভাজন হয়ে ওঠেন তিনি। এরপর ২০০৯ সালের ৮ ডিসেম্বর বিএনপির পঞ্চম জাতীয় কাউন্সিলের পর ফের তাকেই মহাসচিবের দায়িত্ব দেন খালেদা জিয়া।
বার্ধক্যজনিত নানা রোগে আক্রান্ত হলেও ২০১১ সালের ১৬ মার্চ মৃত্যুবরণ করার আগ মুহূর্ত পর্যন্ত তিনি বিএনপির মহাসচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তার মৃত্যুর পর ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব করা হয় তৎকালীন সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, মির্জা ফখরুল ইসলামকে নিয়ে সুদূর প্রসারী চিন্তা-ভাবনা থেকেই খন্দকার দেলোয়ার হোসেনের অবর্তমানে তাকে দায়িত্ব দেন খালেদা জিয়া।
কিন্তু ষষ্ঠ জাতীয় কাউন্সিলের তারিখ নির্ধারণ হওয়ার পর থেকেই বিএনপির ভেতরে সক্রিয় প্রভাবশালী একটি অংশ মির্জা ফখরুলকে যেন মহাসচিব বানানো না হয়, সে জন্য আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়েছেন। শেষ পর্যন্ত সব জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটিয়ে বুধবার (৩০ মার্চ) বিএনপির সপ্তম মহাসচিব হিসেবে দায়িত্ব পেলেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বিএনপির বিদায়ী স্থায়ী কমিটির অন্যতম সদস্য লে. জেনারেল (অব.) মাহবুবুর রহমান বলেন, দীর্ঘ ৫ বছর ভারপ্রাপ্ত মহাসচিবের দায়িত্ব পালন করে সাংগঠনিক কর্মকাণ্ডের অভিজ্ঞতা অর্জন করতে সক্ষম হয়েছেন মির্জা ফখরুল। ম্যাডাম তাকে যোগ্য হিসেবে তৈরি করেই পূর্ণ দায়িত্ব অর্পণ করেছেন বলে আমি মনে করি।
বাংলাদেশ সময়: ২০৩৬ ঘণ্টা, মার্চ ৩০, ২০১৬
এজেড/এটি