ময়মনসিংহ : ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে তারা বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে ভোটে দাঁড়িয়েছিলেন। ময়মনসিংহের চার পৌরসভায় দলীয় প্রার্থীর বিরুদ্ধে লড়াই করে একজন বিজয়মাল্য পরলেও তিনজনই পরাজিত হয়েছেন।
কিন্তু নির্বাচনের চার মাসের মাথায়ও নামকাওয়াস্তে তাদের সাময়িক বহিষ্কারের কারণে ময়মনসিংহের ফুলপুর, গৌরীপুর ও তারাকান্দা উপজেলার অনুষ্ঠিত ৩০টি ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে বিদ্রোহী প্রার্থীর সংখ্যাও হু হু করে বেড়ে যায়। বাদ বাকী উপজেলার ইউপি নির্বাচনেও বিদ্রোহীদের দমনে রীতিমতো হিমশিম খেতে হচ্ছে দলটির দায়িত্বশীল নেতাদের।
দলের সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করা এসব প্রার্থীর বহিষ্কারাদেশ এখনো কার্যকর না হওয়ায় নৌকা প্রতীক নিয়ে পরাজিত প্রার্থীদের কেউ কেউ এ বিষয়টিকে ‘কাজীর গরু কেতাবে আছে গোয়ালে নেই’র সঙ্গে তুলনা করেছেন। ইউপিতে বিদ্রোহী ঠেকাতে দ্রুতই পৌর নির্বাচনে সাময়িক বহিষ্কৃতদের চূড়ান্ত বহিষ্কারেরও দাবি জানিয়েছেন দলীয় পরাজিত মেয়র প্রার্থীরা।
অবশ্য এ বিষয়ে ময়মনসিংহ জেলা আ’লীগের দপ্তর সম্পাদক হোসাইন জাহাঙ্গীর বাবু বাংলানিউজকে বলেন, মেয়র পদে দলের বিদ্রোহী হয়ে যারা নির্বাচন করেছিল তারা এখনো দলেই আছেন। কেন্দ্র থেকে আমাদের কাছে নির্দেশনা আসেনি যে তারা বহিষ্কৃত।
এ সংক্রান্ত কোন চিঠিও আমরা পাইনি। আমরা মনে করেছিলাম নির্বাচনের পরে তাদের বহিষ্কার করা হবে। সেই নির্দেশনা হয়তো ঝুলে আছে। ’ তারা এখনো আ’লীগের পদ-পদবী ব্যবহার করছেন কী না এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, দলের হয়েই তো তারা কাজ করছেন।
জানা যায়, গত বছরের ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত পৌরসভা নির্বাচনে ময়মনসিংহের ত্রিশাল পৌরসভায় এ.বি.এম.আনিসুজ্জামান, ফুলপুর পৌরসভায় মো: শাহজাহান, মুক্তাগাছা পৌরসভায় দেবাশীষ ঘোষ বাপ্পি ও গৌরীপুর পৌরসভায় শফিকুল ইসলাম হবি দলের সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করে মেয়র পদে নির্বাচন করেন।
এর মধ্যে শুধু ত্রিশাল উপজেলা যুবলীগের সাবেক সভাপতি ও উপজেলা আ’লীগের সদস্য আনিসুজ্জামান মেয়র পদে নির্বাচিত হন। বাদ বাকী তিন প্রার্থী পরাজিত হন। পরাজিত ফুলপুরের শাহজাহান উপজেলা আ’লীগের সাবেক সদস্য।
মুক্তাগাছার বাপ্পি ছিলেন উপজেলা আ’লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক পদে। গৌরীপুরের শফিকুল ইসলাম হবি এখনো উপজেলা আ’লীগের কার্যকর কমিটির সদস্য।
সূত্র জানায়, ত্রিশালে আনিস মেয়র পদে নির্বাচিত হয়ে জেলায় ও স্থানীয়ভাবে দলীয় বিভিন্ন কর্মসূচিতে সক্রিয়ভাবে অংশ নিচ্ছেন। তার কারণে হেরে যাওয়া নৌকা প্রতীকের প্রার্থী জুয়েল সরকারের অনুসারীরা এখনো তাকে মানতে নারাজ।
কেন্দ্রীয় নেতাদের মন গলাতে আনিস প্রতি সপ্তাহেই নিয়ম করে তাদের দুয়ারে ধর্ণা দিচ্ছেন। এ নিয়ে ক্ষোভের অন্ত নেই দলীয় নেতা-কর্মীদের মাঝে।
ফুলপুরের পৌরসভা নির্বাচনে আওয়ামী লীগ দলীয় প্রার্থী শশধর সেন দলীয় বিদ্রোহী প্রার্থী ওই সময়কার মেয়র শাহাজাহানের কারণে ভোটযুদ্ধে বিএনপি’র প্রার্থীর কাছে ধরাশায়ী হন। এ বিষয়ে উপজেলা যুবলীগ সভাপতি শশধর সেন বাংলানিউজকে বলেন, শাহাজাহানকে এখনো দল থেকে চূড়ান্তভাবে বহিষ্কার করা হয়নি। কেন্দ্র থেকে তাকে বহিষ্কার করতে বললেও সেই নির্দেশনা কার্যকর হয়নি।
বহিষ্কারাদেশের বিষয়টি কাজের গরু কেতাবে আছে গোয়ালে নেই’র মতো উল্লেখ করে মুক্তাগাছা পৌরসভা নির্বাচনে নৌকা প্রতীকের প্রার্থী ও সাবেক মেয়র আব্দুল হাই আকন্দ বাংলানিউজকে বলেন, দেবাশীষ বাপ্পিকে বিদ্রোহী হবার কারণে শুধু শোকজ নোটিশ দেয়া হয়েছে। এখনো তার বহিষ্কারাদেশ কার্যকর হয়নি। দলের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতাকারীর চূড়ান্ত বহিষ্কার দরকার।
দলে শক্তিশালী বিদ্রোহী প্রার্থী থাকা সত্ত্বেও দ্বিতীয়বারের মতো মেয়র নির্বাচিত হয়েছেন গৌরীপুরের রফিকুল ইসলাম। তিনি বলেন, আমার সঙ্গে পরাজিত বিদ্রোহী প্রার্থীকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে। বিদ্রোহীদের নেত্রী ক্ষমা করবেন না। নেত্রী তাদের চূড়ান্তভাবে বহিষ্কারের আশ্বাস দিয়েছেন। আশা করি দ্রুতই এটা কার্যকর হবে।
পৌর নির্বাচনে দলীয় সিদ্ধান্ত ভঙ্গকারীদের বিষয়ে চূড়ান্ত ব্যবস্থা না নেয়ায় ইউপি নির্বাচনে বিদ্রোহী প্রার্থীর সংখ্যা বেড়েছে বলেও মনে করেন মেয়র রফিকুল ইসলাম।
এসব বিষয়ে ময়মনসিংহ জেলা আওয়ামী লীগের অব্যাহতিপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মতিন সরকার বাংলানিউজকে বলেন, পৌর নির্বাচনে বিদ্রোহীদের সাময়িকভাবে বহিষ্কার করে শোকজ করা হয়েছে। কেন্দ্রীয় আ’লীগের কার্যকরী কমিটির সামনের সভায় তাদের চূড়ান্ত সাজা হবে।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন বাংলানিউজকে জানান, পৌর নির্বাচনে বিদ্রোহী মেয়র প্রার্থীদের বিষয়ে কেন্দ্র কঠোর সিদ্ধান্তেই অনড় রয়েছে। তাদের শোকজ করা হয়েছে। তবে তাদের বিরুদ্ধে চূড়ান্ত কোন সাংগঠনিক ব্যবস্থা এখনো নেয়া হয়নি।
বাংলাদেশ সময়: ০৩২৫ ঘণ্টা, এপ্রিল ৩, ২০১৬
জেডএম