ঢাকা: আবারও বিভাগীয় শহরগুলো সফরে বেরোবেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। নেতাকর্মীদের চাঙ্গা করতে এবং সাংগঠনিক কার্যক্রম আরও বেগবান করতে দলের নির্বাহী কমিটি, স্থায়ী কমিটি ও উপদেষ্টা কমিটি গঠনের পরপরই এ সফরে বেরোবেন তিনি।
সম্প্রতি কাউন্সিল শেষ করার পর বিএনপির দায়িত্বশীল সূত্রগুলো এই তথ্য জানাচ্ছে। সূত্রগুলো বলছে, কাউন্সিল শেষে ঢাকা মহানগরসহ মাঠ গোছানোর দিকে মনোযোগ দিচ্ছে বিএনপি। এর অংশ হিসেবে বিএনপি প্রধানের বিভাগীয় শহর সফরের পাশাপাশি ঢাকায় মহাসমাবেশ করারও পরিকল্পনা রয়েছে।
এরমধ্যে আবার মাঠ পর্যায়ের নেতাকর্মীদের উজ্জীবিত রাখতে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখবেন খালেদা জিয়া ও দলের সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান।
এ বিষয়ে আলাপ করলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, এ ধরনের কর্মসূচির সিদ্ধান্ত নিতে একটু সময় লাগবে। কাউন্সিল কেবল হলো, এখন কমিটি ঘোষণার পালা। কমিটির পরই এ ধরনের কমর্সূচি পালনের চিন্তা আসবে।
তিনি বলেন, দলকে আরও শক্তিশালী করতে ও নেতাকর্মীদের উজ্জীবিত করতে বিএনপি প্রধান সফর তো করবেনই। মাঠপর্যায়ের নেতাকর্মীদের কাছে দলের প্রধান গেলে তাদের যেমন উৎসাহ বাড়ে, তেমনি মনোবলও আসে।
ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন স্পষ্ট করে না বললেও বিএনপির একটি দায়িত্বশীল সূত্রের খবর, খালেদা জিয়া দলের কমিটি ঘোষণার পরপরই বিভাগীয় শহর সফর করবেন। প্রতিটি শহরেই সমাবেশ হবে এবং তাতে তিনি বক্তৃতা করবেন। সফর শেষে ঢাকায় মহাসমাবেশ করারও চিন্তা রয়েছে।
এই খবরটি জানায় লন্ডনে অবস্থানরত বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের ঘনিষ্ঠ একটি সূত্রও। ওই সূত্রের খবর, বিভাগীয় শহরে সফরকালে সংশ্লিষ্ট জেলা পর্যায়ের নেতাকর্মীদের সঙ্গে আলাদা করে বৈঠকও করবেন বিএনপি প্রধান।
সূত্রটি আরও জানাচ্ছে, সফরের অপেক্ষায় থেমে থাকবে না তৃণমূলে দলের প্রধান খালেদা জিয়ার যোগাযোগ। নতুন কমিটি ঘোষণার পরই বিএনপি চেয়ারপারসন নিয়মিত জেলা ও বিভাগীয় পর্যায়ের নেতাদের সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করবেন এবং তাদের সাংগঠনিক কার্যক্রমের খবর নেবেন।
একইভাবে দলের সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানও নিয়মিত দলের থানা, জেলা ও বিভাগীয় পর্যায়ের নেতাকর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখবেন বলে জানাচ্ছে সূত্রটি। সেজন্য তারেক রহমানকে দলের দফতরের পক্ষ থেকে ৭৬টি সাংগঠনিক জেলা ও থানার নেতাকর্মীর তালিকা ও ফোন নাম্বারও পৌঁছে দেওয়া হয়েছে।
বিএনপির সূত্রগুলো বলছে, দলের কার্যক্রমে নেতাকর্মীদের পাশাপাশি সাধারণ মানুষের সম্পৃক্ততা বাড়ানোর লক্ষ্যে এ ধরনের পন্থায় তৎপরতা চালানোর চিন্তা করা হচ্ছে। আর এভাবে এগোনো হচ্ছে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের জন্য সরকারকে চাপ দিতেই।
বিগত ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের অধীন নির্বাচন বর্জন করে তা প্রতিরোধের আন্দোলন ডাকে বিএনপি। কিন্তু তাদের ওই আন্দোলন ব্যর্থ হয়। এরপর ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের প্রথম বার্ষিকী ২০১৫ সালের ৫ জানুয়ারি দ্বিতীয় দফায় আবারও আন্দোলন কর্মসূচি ডাকা হয়। এবার আরও চরমভাবে ব্যর্থ হয় বিএনপির আন্দোলন। এই ব্যর্থতায় বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে দলটি, মানসিকভাবে ভেঙে পড়ে দলের নেতাকর্মীরা।
তৃণমূলের পক্ষ থেকে অভিযোগ তোলা হয়, কেন্দ্রের ভুল সিদ্ধান্তের কারণে আন্দোলন ব্যর্থ হয়েছে। দল ছিন্ন-ভিন্ন হয়ে পড়ছে। নেতাকর্মীরা জেলে গেছেন এবং অনেকে ব্যবসা ও বাণিজ্যিকভাবেও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন।
দলের এমন নাজুক সাংগঠনিক পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের জন্য গত ১৯ মার্চ কাউন্সিল করা হয়। কাউন্সিলে বিএনপির চেয়ারপারসন ও সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান পদে আবারও নির্বাচিত হন যথাক্রমে খালেদা জিয়া ও তারেক রহমান। সম্প্রতি মহাসচিব পদে মনোনীত হন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এবং সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব পদে মনোনীত হন রুহুল কবির রিজভী আহমেদ। এখন কমিটি বিএনপির স্থায়ী কমিটি, নির্বাহী কমিটি ও চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কমিটি ঘোষণার অপেক্ষায় রয়েছেন নেতাকর্মীরা।
বাংলাদেশ সময়: ০০১০ ঘণ্টা, এপ্রিল ০৪, ২০১৬
এমএম/এইচএ/