ঢাকা, শুক্রবার, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৯ নভেম্বর ২০২৪, ২৭ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

রাজনীতি

ইউপি নির্বাচন

স্থায়ীভাবে বহিষ্কার হচ্ছেন আ’লীগের বিদ্রোহীরা

শামীম খান, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০০০৮ ঘণ্টা, এপ্রিল ৯, ২০১৬
স্থায়ীভাবে বহিষ্কার হচ্ছেন আ’লীগের বিদ্রোহীরা

ঢাকা : ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে দলের বিদ্রোহী প্রার্থীদের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিয়েছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। নির্বাচনের পর এদেরকে দল থেকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করা হবে।

শুধু বিদ্রোহী প্রার্থীই নয়,এই বিদ্রোহীদের সহযোগিতায় যারা রয়েছেন তাদের ব্যাপারেও কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

আওয়ামী লীগের নেতারা জানান, দলের শৃঙ্খলা রক্ষার জন্যই এই ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া হবে। যারা দলের সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে দলীয় চেয়ারম্যান প্রার্থীকে চ্যালেঞ্জ করে বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছেন, তারা দলের শৃঙ্খলা ভঙ্গ করেছেন। দলের হাই কমান্ডের সিদ্ধান্ত মানেননি। এটা দল ও সংগঠনের শৃঙ্খলা বিরোধী।

নেতারা আরও জানান, দলের নীতিনির্ধারকরা মনে করছেন যারা দলের সিদ্ধান্ত অমান্য করছেন, তারা দলের জন্য ক্ষতিকর। এদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া না হলে ভবিষ্যতে এরা দলের জন্য আরও ক্ষতিকর হয়ে দাঁড়াবে।

বিদ্রোহী প্রার্থীর কারণেই নির্বাচনকে কেন্দ্র করে দলের তৃণমূলের নেতাকর্মীরা দ্বন্দ্ব-সংঘাতে জড়িয়ে পড়ছে। প্রথম ও দ্বিতীয় ধাপের নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ৩২ জনের প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনাগুলো ঘটেছে অধিকাংশ ইউনিয়নে বিদ্রোহী প্রার্থী থাকার কারণে।

আর এ কারণেই বিদ্রোহী প্রার্থীদের ব্যাপারে কঠোর অবস্থান নিয়েছে দলের নীতিনির্ধারকরা। ইতোমধ্যেই যারা বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছেন তাদেরকে দল থেকে প্রাথমিকভাবে বহিষ্কার করা হয়েছে। নির্বাচনের পর দলের কার্যনির্বাহী সংসদের সভায় এদেরকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করা হবে।

এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল-আলম হানিফ বাংলানিউজকে জানান, যারা বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছেন তারা দলের শৃঙ্খলা ভঙ্গ করেছেন। শৃঙ্খলা ভঙ্গের দায়ে দলের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী তাদের বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। দল থেকে চূড়ান্তভাবে বহিষ্কার হবেন তারা।

এদিকে, বিদ্রোহী প্রার্থীর পাশাপাশি যারা বিদ্রোহী প্রার্থীদের সহযোগিতা ও সমর্থন দিচ্ছেন তাদের তালিকা তৈরি করা হচ্ছে। বিদ্রোহী প্রার্থীদের এই সহযোগিতাকারীদের মধ্যে দলের স্থানীয় নেতা থেকে শুরু করে স্থানীয় জাতীয় সংসদ সদস্যও রয়েছেন বলে অভিযোগ আছে।

তৃণমূলের প্রার্থী মনোনয়ন প্রক্রিয়ায় সংসদ সদস্যদের না রাখা হলেও অনেক জায়গায় তারা প্রার্থী মনোনয়ন প্রক্রিয়াকে নানাভাব প্রভাবিত করছেন। প্রভাব খাটিয়ে তারা নিজেদের পছন্দের লোকর নাম প্রস্তাব করিয়ে কেন্দ্রে পাঠাচ্ছেন। এতে কোথাও কোথাও যোগ্য প্রার্থী মনোনীত হতে পারছেন না। বিদ্রোহী প্রার্থী হওয়ার পেছনে এটাও বড় কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।   এসব ব্যাপারেও খোঁজ খবর নেওয়া হচ্ছে।

যেসব সংসদ সদস্যের বিরুদ্ধে এই সব অভিযোগের প্রমাণ পাওয়া যাবে আগামীতে সংসদ নির্বাচনে তাদের দলের মনোনয়ন পাওয়া কঠিন হবে পড়বে বলে জানা গেছে।

গত ২২ মার্চ প্রথম ধাপে ৭২৩টি ইউনিয়নে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এই নির্বাচনে আওয়ামী লীগের দলীয় চেয়ারম্যান প্রার্থীদের বিপরীতে প্রায় সাড়ে ৪শ’ বিদ্রোহী প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। গত ৩১ মার্চ দ্বিতীয় ধাপে ৬৪৩টিতে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এই দ্বিতীয় ধাপেও ৫ শতাধিক বিদ্রোহী চেয়ারম্যান প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন।

আগামী ২৩ এপ্রিল তৃতীয় ধাপ এবং ৭ মে চতুর্থ ধাপের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। তৃতীয় ধাপেও প্রায় ৩শ’র মতো বিদ্রোহী প্রার্থী রয়েছে বলে জানা গেছে। চতুর্থ ধাপের নির্বাচনেরও বিপুল সংখ্যক বিদ্রোহী প্রার্থী থাকবে।

আওয়ামী লীগের নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, প্রায় প্রতিটি ইউনিয়নেই ওয়ার্ড পর্যায়ে দলের শক্তিশালী সংগঠন রয়েছে। ওয়ার্ড, ইউনিয়ন পর্যায়ের সংগঠনই তৃণমূলে আওয়ামী লীগের প্রধান রাজনৈতিক ভিত্তি। তৃণমূলে সংগঠন শক্তিশালী হওয়ার কারণে এই নির্বাচনের প্রথম ও দ্বিতীয় ধাপে আওয়ামী লীগ খুবই ভালো করেছে।

কিন্তু ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে দলের তৃণমূল পর্যায়ের নেতাকর্মী সমর্থকরা যেভাবে দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়ছে, তাতে এই ভিত দুর্বল হয়ে পড়ার আশঙ্কা করছেন দলের নীতিনির্ধারকরা। আর এই দ্বন্দ্বের মূল কারণই হচ্ছে বিদ্রোহী প্রার্থী ও তাদের সহযোগিতাকারীরা। বিদ্রোহী প্রার্থীর কারণে দলের নেতাকর্মী সমর্থকরা দ্বিধা বিভক্ত হয়ে পড়েছে। তৃণমূলের ঐক্য নিয়ে আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।

এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বাংলানিউজকে বলেন, দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের দায়ে বিদ্রোহী প্রার্থীদের দল থেকে বহিষ্কার করা হবে। এদেরকে প্রাথমিকভাবে বহিষ্কার করা হচ্ছে। নির্বাচনের পর কার্যনির্বাহী সংসদের সভায় চূড়ান্তভাবে বহিষ্কার করা হবে। শুধু বিদ্রোহী প্রার্থীই নয়, বিদ্রোহী প্রার্থীদের যারা সহযোগিতা করছেন তাদের বিরুদ্ধেও তদন্ত করে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

বাংলাদেশ সময়: ০০০৬ ঘণ্টা, এপ্রিল ০৯, ২০১৬
এসকে/পিসি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।