ময়মনসিংহ: ময়মনসিংহের ত্রিশালে ভার্গো ফিস অ্যান্ড এগ্রো প্রসেসের জমকালো উদ্বোধনী অনুষ্ঠান। মঞ্চে আসন নিয়েছেন জনপ্রশাসন মন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম, ধর্মমন্ত্রী প্রিন্সিপাল মতিউর রহমান, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নারায়ণ চন্দ্র চন্দ।
কিন্তু মঙ্গলবার (১২ এপ্রিল) দুপুরে অনুষ্ঠান চলাকালেই ঘটতে থাকে বিদ্যুতের লাগামহীন ভেলকিবাজি।
নামতা গুনে কমপক্ষে ৬ বার বিদ্যুতের এমন আসা-যাওয়া ত্যক্ত-বিরক্ত ছিলেন মন্ত্রী থেকে শুরু করে সাধারণ দর্শকরাও। বক্তব্য দেওয়ার মাঝে বিদ্যুৎ চলে যাওয়ায় মাইক ছাড়াই শেষতক বক্তব্যের দাঁড়ি টানতে হয়েছে ধর্মমন্ত্রী প্রিন্সিপাল মতিউর রহমানকে।
একই সঙ্গে অনুষ্ঠান সঞ্চালনাকারীর অতিথিদের নাম-পদবীতে বার বার ভুল করা, উচ্চারণের ত্রুটির বিষয়টিও ছিলো দৃষ্টিকটু। ফলে ধর্মমন্ত্রীর বক্তব্য শেষ থেকেই অনুষ্ঠান উপস্থাপকের বিশেষণের অপেক্ষায় না থেকে নিজেই মাইক্রোফোন হাতে নিয়ে বক্তব্য শুরু করেন জনপ্রশাসনমন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম।
ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে বসলেন উপস্থাপক। সময়কে গুরুত্ব দেওয়া এ মন্ত্রীর এমন প্রথা বিরোধী স্টাইল দৃষ্টিকাড়ে সবার। মাত্র মিনিট চারেকের বক্তৃতায় সৈয়দ আশরাফ গুণগত মান নিশ্চিত করে বিদেশে মাছ রফতানির ওপর গুরুত্বারোপ করেন।
মন্ত্রীদের উপস্থিতিতে বিদ্যুতের আসা-যাওয়ার বিষয়ে পিডিবি’র ত্রিশালের আবাসিক প্রকৌশলী ওসমান গনি দাবি করেন, পল্লী বিদ্যুতের লাইন পিডিবির লাইনে হেলে পড়ায় দু’বার লাইন ট্রিপ করছিলো। কিন্তু মিনিট তিনেক পরই আবার বিদ্যুৎ চলে আসে। ওই সময় জেনারেটর দিয়ে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হয়।
জনপ্রশাসন মন্ত্রীর ছোট ভাই মেজর জেনারেল (অব:) সাফায়েতুল ইসলাম ময়মনসিংহের ত্রিশাল উপজেলার ত্রিশাল ইউনিয়নের সতেরপাড়া গ্রামে প্রায় ৩ একর জমির উপর গড়ে তুলেছেন ভার্গো ফিস অ্যান্ড এগ্রো প্রসেস লিমিটেড।
এ প্ল্যান্ট থেকে পাঙ্গাস ও তেলাপিয়া মাছ প্রক্রিয়াজাতকরণ হয়ে রফতানি হবে বিদেশে।
এ প্ল্যান্টের চেয়ারম্যান জনপ্রশাসনমন্ত্রীর ছোট ভাইয়ের স্ত্রী সৈয়দা মাহাবুবা আক্তার। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তৃতায় তিনি বলেন, ‘ব্যক্তি জীবনে সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম আমাদের বড় ভাই। সব সময় তিনি আমাদের সামনে এগিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেন। পরিবারের অভিভাবককে এ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে পেয়ে আমরা আনন্দিত। ’
ভার্গো ফিস অ্যান্ড এগ্রো প্রসেসিং লিমিটেডের কার্যক্রম সম্পর্কে সবিস্তার বর্ণনা করে সৈয়দা মাহাবুবা আক্তার বলেন, এখানে দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে সবচেয়ে আধুনিক পদ্ধতিতে মৎস্য উৎপাদন, প্রক্রিয়াজাতকরণ ও বিপণন করা হবে।
বাংলাদেশ বিশ্বে মাছ উৎপাদনে চতুর্থ কিন্তু রফতানিতে ১০ নম্বরেও নেই এমন তথ্য তুলে ধরেন এ অঞ্চলের পাঙ্গাস মাছের অগ্রপথিক ও সফল মৎস্য খামারি সাজ্জাদ হোসেন খান।
তিনি বলেন, ‘আমরা প্রতি বছর ২৫ লাখ মেট্রিক টন পাঙ্গাস উৎপাদন করছি। কিন্তু ভিয়েতনাম পাঙ্গাস রফতানি করে ৪ বিলিয়ন ডলার আয় করছে। এ সেক্টরের উপার্জিত আয় দিয়ে আমরাও পদ্মাসেতু নির্মাণ করতে পারি। ’
মৎস্য অধিদফতর ১৯৭২ সাল থেকে বিদেশে চিংড়ি রফতানি শুরু করে জানিয়ে অধিদফতরের ভারপ্রাপ্ত মহাপরিচালক নিত্যরঞ্জন বিশ্বাস বলেন, বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন মাছ হবে দ্বিতীয় বৃহত্তম রফতানি খাত। কিন্তু গ্র্যাজুয়েলি এটি কমে যাচ্ছে।
‘ময়মনসিংহে ব্যাপকভাবে পাঙ্গাস চাষ হয়। কিন্তু বিদেশের মার্কেটে এ পাঙ্গাস নিয়ে যাওয়া সম্ভব হয় না। ভার্গো ফিস অ্যান্ড এগ্রো প্রসেসিংয়ের মাধ্যমে এখানকার পাঙ্গাস চাষ সঠিক দিক নির্দেশনা হবে। রফতানি হবে বিদেশেও। ’
মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নারায়ণ চন্দ্র চন্দ বলেন, খুলনা অঞ্চলে শুধুমাত্র চিংড়ি প্রক্রিয়াজাতকরণ করে বিদেশে পাঠানো হয়। পাঙ্গাস ও তেলাপিয়া বিদেশে পাঠানোর ক্ষেত্রে এ প্ল্যান্ট ভূমিকা রাখবে।
এর আগে জনপ্রশাসনমন্ত্রী, ধর্মমন্ত্রী, মৎস্য প্রতিমন্ত্রীসহ অন্যান্য অতিথিরা ভার্গো ফিস অ্যান্ড এগ্রো প্রসেসিং লিমিটেডের ফলক উম্মোচন করেন। এসময় তারা প্রকল্প এলাকা ঘুরে দেখেন অতিথিরা।
এ সময় ইসলামী ব্যাংকের এক্সিকিউটিভ ভাইস চেয়ারম্যান মোহন মিয়া, ময়মনসিংহ-১০ (গফরগাঁও) আসনের সংসদ সদস্য ফাহমি গোলন্দাজ বাবেল, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সহ-সম্পাদক শরীফ হাসান অনু, সাবেক সংসদ সদস্য রেজা আলী, ত্রিশাল পৌরসভার মেয়র এ বি এম আনিসুজ্জামান, কেন্দ্রীয় যুবলীগ নেতা সৈয়দ তানিম, জেলা ছাত্রলীগ সভাপতি রকিবুল ইসলাম রকিব প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
বাংলাদেশ সময়: ০৪০৯ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৩, ২০১৬
এমএ/