ঢাকা: দুর্নীতির পৃথক মামলায় খালাসের রায় বাতিল ও হাইকোর্টে পুনঃশুনানির রায়ের পুনর্বিবেচনা (রিভিউ) চেয়ে চারদলীয় জোট সরকারের সাবেক তিন মন্ত্রীসহ আটজনের করা আবেদন খারিজ ও নিষ্পত্তি করে দিয়েছেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ।
বুধবার (১৩ এপ্রিল) প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নেতৃত্বে আপিল বিভাগ এ রায় দেন।
রিভিউ আবেদনকারীরা হলেন- চারদলীয় জোট সরকারের যোগাযোগমন্ত্রী ও সাবেক বিএনপি নেতা ব্যারিস্টার নাজমুল হুদা ও তার স্ত্রী সিগমা হুদা, বিএনপি নেতা সাবেক বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব আমানউল্লাহ আমান ও তার স্ত্রী সাবেরা আমান, বিএনপির সাবেক সংসদ সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মঞ্জুরুল আহসান মুন্সী, সাবেক প্রতিমন্ত্রী মীর নাসিরউদ্দিন ও তার ছেলে ব্যারিস্টার মীর হেলাল।
রিভিউ আবেদন খারিজের পর এখন এ আটজনের দুর্নীতির মামলা হাইকোর্টে পুনঃশুনানি করতে হবে।
দুদকের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী মো. খুরশিদ আলম খান।
নাজমুল হুদা ও তার স্ত্রী সিগমা হুদা
২০০৭ সালের ২১ মার্চ দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) উপ-পরিচালক মো. শরিফুল ইসলাম ধানমণ্ডি থানায় মামলাটি দায়ের করেন।
মামলায় অভিযোগ করা হয়, সাপ্তাহিক পত্রিকা ‘খবরের অন্তরালে’র জন্য মীর জাহের হোসেন নামে এক ব্যক্তির কাছ থেকে ২ কোটি ৪০ লাখ টাকা ঘুষ নেন নাজমুল হুদা ও তার স্ত্রী সিগমা হুদা।
২০০৭ সালের ২৭ আগস্ট বিশেষ জজ আদালত দুর্নীতির অভিযোগে নাজমুল হুদাকে সাত বছরের কারাদণ্ড এবং আড়াই কোটি টাকা জরিমানা করেন। পাশাপাশি তার স্ত্রী সিগমা হুদাকে তিন বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়।
এ রায়ের বিরুদ্ধে নাজমুল হুদা ও সিগমা হুদা আপিল করলে ২০১১ সালের ২০ মার্চ হাইকোর্ট তাদের খালাস দেন।
পরে দুদক আপিল করলে ২০১৪ সালের ০১ ডিসেম্বর খালাসের রায় বাতিল করে হাইকোর্টে পুনঃশুনানির নির্দেশ দেন আপিল বিভাগ।
আমানউল্লাহ আমান ও সাবেরা আমান
সম্পদের তথ্য গোপন ও জ্ঞাত আয়বহির্ভুত সম্পদ অর্জনের অভিযোগে আমান দম্পতির বিরুদ্ধে ২০০৭ সালের ০৬ মার্চ রাজধানীর কাফরুল থানায় মামলা করে দুদক। ওই বছরের ২১ জুন বিশেষ জজ আদালতের রায়ে আমানকে ১৩ বছরের কারাদণ্ড ও সাবেরাকে তিন বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়। এ রায়ের বিরুদ্ধে তারা হাইকোর্টে আপিল করেন। ২০১০ সালের ১৬ আগস্ট হাইকোর্ট আপিল মঞ্জুর করে তাদের খালাস দেন।
পরে দুদক আপিল করলে ২০১৪ সালের ২৬ মে হাইকোর্টের দেওয়া রায় বাতিল ঘোষণা করেন আপিল বিভাগ। একই সঙ্গে হাইকোর্টে পুনঃশুনানির নির্দেশ দেওয়া হয়।
ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু
৪ কোটি ৯৬ লাখ ১১ হাজার ৯১৬ টাকার সম্পত্তির হিসাব ও আয়ের উৎস গোপন করার অভিযোগে দুদকের উপ-পরিচালক শাহরিয়ার চৌধুরী ২০০৭ সালের মার্চে সাবেক বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী টুকুর বিরুদ্ধে মোহাম্মদপুর থানায় এ মামলা দায়ের করেন।
কমিশনের উপ-পরিচালক এসএমএম আখতার হামিদ ভূঞা ওই বছরের ২৮ জুন মহানগর হাকিম আদালতে এ মামলায় অভিযোগপত্র দেন।
২০০৭ সালের ১৫ নভেম্বর বিচারিক আদালত এ মামলার রায়ে টুকুকে নয় বছরের কারাদণ্ড দেন।
তিনি ওই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করলে হাইকোর্ট ২০১১ সালের ১৫ জুন তাকে খালাস দেন।
হাইকোর্টের ওই রায়ের বিরুদ্ধে দুদক আপিল করলে ২০১৪ সালের ২১ জানুয়ারি খালাসের রায় বাতিল করে পুনঃশুনানির আদেশ দেন আপিল বিভাগ।
মীর নাসির ও হেলাল
অবৈধ সম্পদ অর্জন ও সম্পদের তথ্য গোপনের মামলায় ২০০৭ সালের ৪ জুলাই মীর নাসিরকে ১৩ বছরের কারাদণ্ড দেন বিশেষ আদালত। এ কাজে বাবাকে সহযোগিতা করার দায়ে ছেলে মীর হেলালকে তিন বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়।
পরে ২০১০ সালের আগস্টে হাইকোর্ট এই পিতা-পুত্রকে খালাস দেন। ওই রায়ের বিরুদ্ধে দুদক পৃথক পৃথক আপিল করলে ২০১৪ সালের ৪ জুলাই খালাসের রায় বাতিল করে পুনঃশুনানির আদেশ দেন আপিল বিভাগ।
মঞ্জুরুল আহসান মুন্সী
২০০৭ সালে কুমিল্লার দেবিদ্বারের বিএনপি দলীয় সাবেক সংসদ সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মঞ্জুরুল আহসান মুন্সীকে বিশেষ জজ আদালত ১৩ বছরের কারাদণ্ড, ৬৫ লাখ টাকা জরিমানা, অনাদায়ে আরও ১ বছরের কারাদণ্ড দেন।
মঞ্জুরুল আহসান মুন্সী, তার স্ত্রী মাজেদা আহসান, ছেলে রিজওয়ানুল আহসান ও রিজভিউল আহসানের বিরুদ্ধে ৬ কোটি ৫৫ লাখ ৩৩ হাজার ৪৭৯ টাকার সম্পদ অসাধু উপায়ে অর্জনে দুর্নীতির অভিযোগ আনা হয় মামলাটিতে।
পরে হাইকোর্টে আপিলের পর খালাস পান মুন্সী। দুদক এ খালাসের বিরুদ্ধে আপিল করলে আপিল বিভাগ হাইকোর্টের রায় বাতিল করে পুনরায় শুনানির আদেশ দেন।
এ আটজনই আপিল বিভাগের রায় রিভিউ চেয়ে আবেদন করেন। বুধবার আপিল বিভাগ টুকুর আবেদনের নিষ্পত্তি এবং বাকিদের রিভিউ আবেদন খারিজ করে দেন। ফলে তাদের মামলা নতুন করে হাইকোর্টে শুনানি করতে হবে।
বাংলাদেশ সময়: ১২৪৫ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৩, ২০১৬
ইএস/এএসআর