ঢাকা: সাংবাদিক শফিক রেহমানকে গ্রেফতার প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, অপরাধীকে গ্রেফতার করলেও অপরাধ হয় এখন। যদি অপরাধীকে গ্রেফতার করলেই অপরাধ হয়, তাহলে এদেশে বিচার কী করে হবে? তাহলে দেশে কোনো হত্যার বিচার কী করে হবে? তারা সাংবাদিক দেখলো, দেখলো না অপরাধী।
সোমবার (১৮ এপ্রিল) বিকেলে রাজধানীর খামারবাড়ির কৃষিবিদ ইনস্টিটিউটে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় তিনি এ কথা বলেন। ১৭ এপ্রিল মুজিবনগর দিবস উপলক্ষে এ সভার আয়োজন করে আওয়ামী লীগ। এতে সভাপতিত্ব করেন দলের জ্যেষ্ঠ প্রেসিডিয়াম সদস্য সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, অপরাধীকে ধরায় এখন যেমন সমালোচনা হচ্ছে ঠিক একই কাজ হয়েছিল ৭৫ সালে। বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ জারি করে, খুনিদের বিচারের পথ রুদ্ধ করে।
বিএনপি-জামায়াত ক্ষমতায় এলে তাদের মূল লক্ষ্য থাকে অর্থ লোপাট। আর সে অর্থ তাদের এত পরিমাণে রয়েছে যে, তা দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে এফবিআইকে ঘুষ দিয়ে ভাড়া করে ফেলেছে। যুক্তরাষ্ট্রের তদন্তেই সেটা ধরা পড়েছে। সেখানে যাদের সাজা হয়েছে, আদালতে তাদের দেওয়া বয়ান থেকেই এসেছে শফিক রেহমান ও মাহমুদুর রহমানের নাম।
শেখ হাসিনা এসময় দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের আদালতে প্রমাণিত একটি বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে গিয়েও আমাদের সমালোচনার মুখে পড়তে হচ্ছে। ষড়যন্ত্রও হচ্ছে আমাদের বিরুদ্ধে, আর সমালোচনারও শিকার আমরা।
তাহলে আমাদের কি কোনও অধিকার নেই? আওয়ামী লীগের কেউ কি মারা গেলে তার বিচারের অধিকার নেই? ষড়যন্ত্র করলে তাদের কিছু করা যাবে না? সবার মানবাধিকার আছে, আমাদের কোনো মানবাধিকার নেই। শুধু আওয়ামী লীগের মানবাধিকার নেই, আক্ষেপের সুরে বলেন প্রধানমন্ত্রী।
অন্যায় ও ষড়যন্ত্রকারীদের জন্য সাংবাদিকদের মায়াকান্না দেখছি, যারা মায়াকান্না করছেন, তাদের তাহলে যুক্তরাষ্ট্রের আদালতকে জিজ্ঞাসা করতে হবে, বলেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা যেখানে অন্যায় দেখি সেখানেই বিচার করি। আমাদের লক্ষ্য ন্যায়নীতি প্রতিষ্ঠা করা। আমাদের কাজ হচ্ছে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া।
যারা এখন বড় বড় কথা বলছে, তারা কীভাবে তাজা মানুষকে আগুনে পুড়িয়ে মারলো। এখন যারা মানবাধিকারের কথা বলে, তারা তাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেইবা কী করে? প্রশ্ন তোলেন শেখ হাসিনা।
বক্তব্যে মুজিবনগর সরকারের তাৎপর্য তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, দীর্ঘ আন্দোলন সংগ্রামের মধ্য দিয়ে বঙ্গবন্ধু বাঙালি জাতিকে স্বাধীনতা অর্জনে ঐক্যবদ্ধ করেছিলেন। মুজিবনগর সরকার এক দিনের নয়, ২৩ বছরের আন্দোলন সংগ্রামের ফসল যার পরিণতি পেতে শুরু করে ১৯৭১ সালের শুরু থেকেই। ৭ মার্চ তিনি ঐতিহাসিক ভাষণ দেন বঙ্গবন্ধু। সেখানে তিনি বলেন, ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম’। তারপর ২৫ মার্চ নিরস্ত্র বাঙালি জাতির ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে হানাদাররা, গ্রেফতার করে বঙ্গবন্ধুকে, তার আগে তিনি স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়ে যান।
শেখ হাসিনা বলেন, বঙ্গবন্ধু গ্রেফতার হলেও তার ভাষণের ওপর ভিত্তি করে এবং তার পূর্বপরিকল্পনা ও নির্দেশনা মতো এপ্রিলের ১০ তারিখে মুজিবনগর সরকার গঠিত হয়। এরপর ১৭ এপ্রিল সে সরকার শপথ নেয়। এই সরকার গঠনের মধ্য দিয়েই বিশ্বে স্বাধীন জাতি হিসেবে প্রতিষ্ঠা লাভ করে বাঙালি। সেই শপথ গ্রহণ ছিলো একটি স্বাধীন ভূখণ্ডেই।
আওয়ামী লীগের শীর্ষ পর্যায়ের নেতা-নেত্রীরা সভায় বক্তব্য রাখেন। এদের মধ্যে ছিলেন সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম, প্রেসিডিয়াম সদস্য মোহাম্মদ নাসিম, সাহারা খাতুন, উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আমির হোসেন আমু, তোফায়েল আহমেদ, যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ, জাহাঙ্গীর কবির নানক, ডা. দীপু মনি, সাংগঠনিক সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাসিম, মহানগর আওয়ামী লীগ নেতা কামরুল ইসলাম, এ কে এম রহমত উল্লাহ, আবুল হাসনাত, শাহে আলম মুরাদ, সাদেক খান প্রমুখ। সভায় সঞ্চালনা করেন আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা বিষয়ক সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ।
বাংলাদেশ সময়: ১৭৫০ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৮, ২০১৬/আপডেট ১৮১৪ ঘণ্টা
আইএ/এইচএ/
**নোংরামি-পর্ন চিন্তা মুক্তচিন্তা নয়
**৭ মার্চের ভাষণের ওপর মুজিবনগর সরকার গঠিত হয়