ঢাকা, শুক্রবার, ১৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৯ নভেম্বর ২০২৪, ২৭ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

রাজনীতি

তৃণমূলের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বে শঙ্কিত আ’লীগ

শামীম খান, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০২১৯ ঘণ্টা, এপ্রিল ২২, ২০১৬
তৃণমূলের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বে শঙ্কিত আ’লীগ

ঢাকা: ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনকে কেন্দ্র করে দলের তৃণমূলে অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব নিয়ে শঙ্কিত ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। প্রতিটি ধাপের নির্বাচনেই দ্বন্দ্বে তৃণমূল পর্যায়ের নেতাকর্মীরা দ্বিধাবিভক্ত হয়ে পড়ছেন, সেই সঙ্গে হতাহতের ঘটনাও ঘটছে।

 

সবশেষ নির্বাচনে অধিকাংশ ইউনিয়নেই দলের মনোনীত চেয়ারম্যান প্রার্থী ও বিদ্রোহী প্রার্থীর পক্ষে তৃণমূল নেতাকর্মীরা দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়েন। কোথাও কোথাও কর্মী-সমর্থকরা প্রকাশ্য দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়েন। এ দ্বন্দ্ব নিরসনে এই মুহুর্তে কোনো উপায় খুঁজে পাচ্ছেন না দলের নীতিনির্ধারকরা।

 

আওয়ামী লীগ নেতারা জানান, যে বিদ্রোহী প্রার্থীর কারণে দ্বন্দ্ব তৈরি হচ্ছে সেই বিদ্রোহী ঠেকানোই দুরূহ হয়ে পড়েছে। ইতোমধ্যে বিদ্রোহী ও তাদের সহযোগীদের দল থেকে চূড়ান্ত বহিষ্কারের ঘোষণা দিয়েও কোনো কাজ হচ্ছে না। প্রতিটি ধাপের নির্বাচনেই অধিকাংশ ইউপিতে বিদ্রোহী প্রার্থী দাঁড়িয়ে যাচ্ছেন। আর যেখানে বিদ্রোহী প্রার্থী, সেখানেই অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব তৈরি হচ্ছে। এ দ্বন্দ্ব থেকে দলের সাংগঠনিক শৃঙ্খলা ভেঙে পড়ছে।

নির্বাচনকে কেন্দ্র করে তৃণমূলে এক ধরনের বিশৃঙ্খলা তৈরি হয়েছে বলেও তারা মন্তব্য করেন।

এদিকে দলের সিদ্ধান্ত অমান্য করে যারা বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছেন এবং যারা বিদ্রোহীদের সহযোগিতা করছেন বা সমর্থন দিচ্ছেন তাদের বহিষ্কারের বিষয়টিও দলের জন্য হিতে-বিপরীত হতে পারে বলে দলের নীতিনির্ধারকরা মনে করছেন। যারা দলের মনোনীত প্রার্থীর বিরুদ্ধে প্রার্থী হয়েছেন বা অবস্থান নিয়েছেন তারা দলের সাংগঠনিক শৃঙ্খলা ভঙ্গ করেছেন। দলের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী তাদের সাংগঠনিক শাস্তি হবে দল থেকে বহিষ্কার। ইতোমধ্যে দল থেকে এ ঘোষণাও দেওয়া হয়েছে।

এ ঘোষণা বাস্তবায়ন করতে গেলে তৃণমূল পর্যায়ের একটা বড় সংখ্যক নেতাকর্মীকে বহিষ্কার করতে হবে।

এতে তৃণমূলের সংগঠন ক্ষতিগ্রস্ত ও দুর্বল হয়ে পড়তে পারে বলেও তারা আশঙ্কা করছেন। এ পরিস্থিতিতে দলের নীতিনির্ধারকরা উভয় সংকটে রয়েছেন।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে আওয়ামী লীগের সিনিয়র পর্যায়ের এক নেতা বাংলানিউজকে বলেন, বিদ্রোহী প্রার্থী ও তার সহযোগীরা দলের শৃঙ্খলা ভঙ্গ করছেন। কিন্তু কতোজনকে বহিষ্কার করা যায়? একজন বিদ্রোহী প্রার্থী শুধু নয়, তার সঙ্গে যদি ১০ জন নেতাকর্মী থাকেন তাহলে প্রত্যেককে বহিষ্কার করলে সংগঠনের অবস্থা কী দাঁড়াবে! অধিকাংশ ইউনিয়নেই তো আওয়ামী লীগের এই অবস্থা।

আওয়ামী লীগের একাধিক নেতা জানান, অতীতে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে দল সমর্থিত চেয়ারম্যান প্রার্থীর বিরুদ্ধে বিদ্রোহী প্রার্থী থাকতে দেখা গেছে। তবে এবার পরিস্থিতি প্রকট আকার ধারণ করেছে। তাছাড়া অতীতে ছিল নির্দলীয় নির্বাচন। দল একজনকে সমর্থন দিতো। তার বিপরীতে কোনো প্রার্থী থাকলে বা কর্মী-সমর্থকরা বিভক্ত হয়ে পড়লেও সেটি সংগঠনের জন্য কোনো বিষয় ছিল না। কিন্তু এবারের বাস্তবতা আলাদা। এবার ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান পদে নির্বাচন হচ্ছে দলীয়ভাবে এবং দলীয় প্রতীকে। এ কারণেই দলের প্রার্থী হওয়ার প্রতিযোগিতা বেড়েছে। দলীয় মনোনয়ন না পেয়ে ক্ষুব্ধ হয়ে বিদ্রোহী প্রার্থী হচ্ছেন। আর দলীয়ভাবে নির্বাচন হওয়ার কারণে বিদ্রোহী প্রার্থীর অবস্থান দলের বিরুদ্ধে চলে যাচ্ছে। ফলে প্রার্থীদের কর্মী-সমর্থকদের দ্বন্দ্ব-সংঘাত দলের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ছে।

গত ২২ মার্চ প্রথম ধাপে ৭২৩টি ইউপির নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের দলীয় চেয়ারম্যান প্রার্থীদের বিপরীতে প্রায় সাড়ে ৪শ’ বিদ্রোহী প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। গত ৩১ মার্চ দ্বিতীয় ধাপে ৬৪৩টিতে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এ ধাপেও পাঁচ শতাধিক বিদ্রোহী চেয়ারম্যান প্রার্থী ছিলেন। আগামী ২৩ এপ্রিল তৃতীয় ধাপ এবং ৭ মে চতুর্থ ধাপের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এ দুই ধাপের নির্বাচনেও বিপুল সংখ্যক বিদ্রোহী প্রার্থী রয়েছেন।

মোট ছয় ধাপে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। গত দুই ধাপের নির্বাচনে বেশ কিছু প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে। এই ঘটনাগুলোর প্রায় অধিকাংশই ঘটেছে আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বের জেরে। প্রথম ধাপের নির্বাচনে নিহত হয়েছেন ২৪ জন। দ্বিতীয় ধাপের নির্বাচনে নিহত হন ৯ জন। আর এ দুই ধাপের নির্বাচনকে কেন্দ্র করে আগে ও পরে আরও কয়েকজন প্রাণ হারিয়েছেন। সব মিলিয়ে ইতোমধ্যে অর্ধশতাধিক নিহত হয়েছেন।

বাংলাদেশ সময়: ০২১৬ ঘণ্টা, এপ্রিল ২২, ২০১৬
এসকে/আইএ/এএসআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।