ময়মনসিংহ: বিভিন্ন স্থানীয় সরকার বিভাগের জনপ্রতিনিধিদের বেশিরভাগ ক্ষমতাসীন দলের হওয়ায় বিএনপি জেলা পরিষদ নির্বাচন বর্জন করেছে। কেন্দ্রের সিদ্ধান্ত মোতাবেক নির্বাচনে দলীয় প্রার্থী না থাকায় ময়মনসিংহে অবশ্য নতুন কৌশল নিয়েছে দলটি।
আগামী জেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী অধ্যাপক ইউসুফ খান পাঠানকে তার দলীয় উপজেলা চেয়ারম্যান, মেয়র ও ইউপি চেয়ারম্যান ও ইউপি সদস্যদের মতো বিএনপি দলীয়রাও জেতাতে মরিয়া হয়ে কাজ করছেন। তাদের ভোটও আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থীর বাক্সেই যাওয়ার সম্ভাবনা মোটামুটি নিশ্চিত।
বিশেষ করে ময়মনসিংহ সদর উপজেলা পরিষদে বিএনপি দলীয় চেয়ারম্যান, দুই ভাইস চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানরা প্রকাশ্যেই আওয়ামী লীগ প্রার্থীকে সমর্থন জানানোর পর পালে নতুন করে হাওয়া লেগেছে।
সোমবার (২৬ ডিসেম্বর) তারা আওয়ামী লীগ মনোনীত চেয়ারম্যান প্রার্থীর পক্ষে মতবিনিময় সভাতেও যোগ দিয়েছেন।
এতে করে বেশ ফুরফুরে মেজাজেই রয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) সাবেক নেতা ইউসুফ খান পাঠান। অবশ্য এ সভায় বিএনপি নেতাদের সক্রিয় ভাবে অংশ নেওয়ার খবরে দলীয় পরিমন্ডলে মিশ্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে।
দলীয় একটি সূত্র বলছে, একের পর এক নির্বাচন বর্জন করে বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতাদের আবেগ-অনুভূতি ভোতা হয়ে গেলেও ময়মনসিংহ জেলার নেতারা জেলা পরিষদ নির্বাচনের মাধ্যমে উদ্দীপ্ত।
জেলার চিরাচরিত সহনশীলতার রাজনৈতিক পরিবেশেরই বহিঃপ্রকাশ বিএনপির পদধারী নেতাদের আওয়ামী লীগের প্রার্থীর পক্ষে এমন স্টাইলের প্রচারণা।
আবার দলটির কোনো কোনো নেতা-কর্মীর মন্তব্য, জাতীয় রাজনীতিতে সাপে-নেউলে সম্পর্কের সময়টাতে বিএনপি নেতাদের এভাবে আওয়ামী লীগের হয়ে কোমরবেধে নেমে পড়াটা ঠিক হয়নি। বিষয়টি কেন্দ্রের ভালোভাবে নেয়ার সুযোগ নেই।
জানা যায়, ময়মনসিংহ জেলা পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের একক প্রার্থী হিসেবে দলীয় সমর্থন পেয়েছেন জেলা যুবলীগের সাবেক সভাপতি ইউসুফ খান পাঠান।
৭৫ পরবর্তী অন্ধকার সময়ে ময়মনসিংহের গর্ব সাবেক অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলামকে হত্যার পর তার মরদেহ গ্রহণকারী যুবকদের একজন ইউসুফ খান পাঠান।
তার বিপরীতে দু’জন স্বতন্ত্র প্রার্থী ভোটে লড়লেও আওয়ামী লীগের শক্তিশালী প্রার্থী হিসেবে এ অধ্যাপকের বিজয় অনেকটাই সুনিশ্চিত বলে মনে করেন দলটির নেতাকর্মীরা।
ময়মনসিংহের প্রতিটি উপজেলায় জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি অ্যাডভোকেট জহিরুল হক খোকা, সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট মোয়াজ্জেম হোসেন বাবুল, ময়মনসিংহ-১০ (গফরগাঁও) আসনের সংসদ সদস্য ফাহমি গোলন্দাজ বাবেল, ময়মনসিংহ পৌরসভার মেয়র আওয়ামী লীগ নেতা ইকরামুল হক টিটু, ময়মনসিংহ মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মোহিত উর রহমান শান্ত, ত্রিশাল পৌরসভার মেয়র এবিএম আনিসুজ্জামানসহ দলের প্রায় সব পর্যায়ের নেতাকর্মীরা তার সঙ্গে বিরামহীন প্রচারণা চালিয়ে নিরুত্তাপ ভোটের মাঠে উত্তাপ ছড়িয়েছেন।
সূত্র জানায়, সোমবার (২৬ ডিসেম্বর) ময়মনসিংহ সদর উপজেলার বিআরডিপি পল্লী ভবনে সদর উপজেলার চেয়ারম্যান ও মেম্বারদের সঙ্গে মতবিনিময় সভা করেন আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী ইউসুফ খান পাঠান। এতে সভাপতিত্ব করেন সদর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও কোতোয়ালী বিএনপির সভাপতি কামরুল ইসলাম ওয়ালিদ।
বিএনপি দলীয় ভাইস চেয়ারম্যান আশরাফুল আলম, মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান খালেদা আতিক, ময়মনসিংহ পৌরসভার ওয়ার্ড কাউন্সিলর রোকসানা শিরিনসহ আরো কয়েক ইউপি চেয়ারম্যান ও সদস্য আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থীকে বিজয়ী করতে ঐক্যমত পোষণ করেন।
বিএনপি-আওয়ামী লীগের মিলিত এ সভার ছবি ছড়িয়ে পড়েছে ফেসবুকে। এ নিয়ে সমালোচনায় মুখর দলের কেউ কেউ।
এ বিষয়ে বিএনপি দলীয় ময়মনসিংহ সদর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান কামরুল ইসলাম ওয়ালিদ বাংলানিউজের কাছে দাবি করেন, শুধু আওয়ামী লীগ প্রার্থীই নয়, আরো প্রার্থীরা এসেছিলেন। আমাদের দল নির্বাচনে যায়নি কিন্তু ভোট দিতে তো বারণ করেনি। এ কারণে আওয়ামী লীগের হয়ে কাজ করছি কথাটি ঠিক নয়।
এসব ব্যাপারে ময়মনসিংহ দক্ষিণ জেলা বিএনপির সভাপতি এ.কে.এম.মোশাররফ হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, আওয়ামী লীগের হয়ে কাজ করতে হলে বিএনপি ছেড়ে করতে হবে। বিএনপি যদি মনে করে কোনো নেতা দলের শৃঙ্খলা ভঙ্গ করেছে তবে কেন্দ্র তাকে বহিষ্কার করতে পারে।
বাংলাদেশ সময়: ১৬০৮ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৭, ২০১৬
এমএএএম/বিএস