ঢাকা, শনিবার, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ২৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

রাজনীতি

শর্টকাট কোনও পথ নেই দলটির সামনে?

পলিটিক্যাল ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩২৪ ঘণ্টা, মে ২৬, ২০১৭
শর্টকাট কোনও পথ নেই দলটির সামনে?

ঢাকা: একবার ক্ষমতা থেকে বিদায় নিয়ে দশ বছর পর ক্ষমতা ফিরে পেয়েছিল বিএনপি। এবার ক্ষমতা থেকে ছিটকে দলটি প্রায় ১২ বছর সময় কাটিয়ে দিচ্ছে। আবার কবে ক্ষমতায় যেতে পারবে, সে লক্ষণও স্পষ্ট নয়।

সাংগঠনিক পুনর্গঠন, কোন্দল, গ্রুপিং দূর করা, সন্দেহ-অবিশ্বাসের অবসান ঘটানো, নেতা-কর্মীদের মধ্যকার ঐক্য ও যোগাযোগ দৃঢ় করা, পেশাজীবী-বুদ্ধিজীবীদের সম্মানজনক স্থানে বসিয়ে দেশের এই অন্যতম বৃহত্তর দলটিকে আবার ক্ষমতায় নিয়ে যাওয়া পরিকল্পিত উদ্যোগের অভাব সুস্পষ্ট।  

খালেদা জিয়া নিজ যোগ্যতায় জিয়া-পরবর্তী বিএনপিকে রক্ষা করেছিলেন এবং একাধিক বার ক্ষমতায় নিয়ে গিয়েছিলেন।

উন্নয়নশীল দেশের জন্য এটি নিঃসন্দেহে একটি উল্লেখযোগ্য উদাহরণ। কিন্তু বিএনপির দ্বিতীয় প্রজন্মের নেতৃত্বের জন্য এবং দলে নতুন প্রাণাবেগ আনতে তারেক রহমানের কথা বার বার উচ্চারিত হলেও তার রাজনৈতিক পথ কণ্টকাকীর্ণ। অথচ দলের এই স্থবিরতা ও বন্ধ্যাত্ব ঘোচানোর জন্য নবউদ্যোগের বিকল্প নেই। বর্তমানে অধিষ্ঠিত গতানুগতিক নেতৃত্ব কাঠামোর চিন্তা ও তৎপরতায় সামনের বিরাট চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করা প্রায় অসম্ভব ব্যাপার।

আগের কিস্তি পড়ুন
** দিশেহারা বিএনপি- ৯: উপেক্ষিত হয়েও সরব পেশাজীবী-বুদ্ধিজীবীরা
** দিশেহারা বিএনপি-৮: এখনও মশগুল অতি-আত্মবিশ্বাসের তৃপ্তিতে
** দিশেহারা বিএনপি-৭: অগোছালো অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের বেহাল দশা
** দিশেহারা বিএনপি-৬: নেতা বহু সংগঠক নেই, রুটিনে আবদ্ধ মহাসচিব​
** দিশেহারা বিএনপি-৫: সর্বত্র ক্রনিক কোন্দলের ছায়া
** দিশেহারা বিএনপি-৪: কৌশলের চক্কর ও সমন্বয়হীন আন্দোলন
** দিশেহারা বিএনপি-৩: নির্ভরশীলতায় হ্রাস নিজস্ব সামর্থ্য
** দিশেহারা বিএনপি-২ : দুর্নীতি-সুবিধাবাদে গ্রাস নেতৃত্ব
** 
দিশেহারা বিএনপি-১: দলের ভেতরে-বাইরে হতাশার বিষবাষ্প

কেবল দলগত বিবেচনায় বিএনপির শক্তিশালী অবস্থান জরুরি নয়, বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার বিকাশ ও নানা বিপদ কাটানোর জন্যও দল হিসাবে বিএনপির প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। কারণ বাংলাদেশের গণতন্ত্রের ইতিহাসে বিএনপির অবদান মোটেই কম নয়। ভবিষ্যতেও বিএনপির পক্ষে গণতন্ত্রের স্বার্থে অবদান রাখার যথেষ্ট সুযোগ রয়েছে। দেশের স্বার্থ, জাতির স্বার্থ, গণতন্ত্রের স্বার্থ রক্ষায় বিএনপির বিপুল কর্মী-সমর্থকরা পালন করতে পারেন ইতিবাচক ভূমিকা। কিন্তু রাজনীতির মাঠে বিএনপির সেই ভূমিকা অনুপস্থিত।

এটাও ঠিক যে, বাংলাদেশে বিভিন্নমুখী রাজনৈতিক ধারা বিকাশ লাভ করলেও দেশ এখনও পর্যন্ত দ্বি-দলীয় ব্যবস্থাকেই প্রাধান্য দিচ্ছে। অচীরেই তৃতীয় কোনও রাজনৈতিক শক্তির উত্থানের সম্ভাবনাও তত উজ্জ্বল নয়। ফলে বিএনপির সামনে ঐতিহাসিকভাবেই বাংলাদেশের রাজনীতিতে ভূমিকা পালন ও অবদান রাখার সুযোগ রয়েছে। এ সুযোগ যেমন ঐতিহাসিক, তেমনি বাস্তবতায় পূর্ণ। আজকের বাংলাদেশের রাজনৈতিক বাস্তবতায় দেশের ভালো বা মন্দ, যা কিছুরই দায়ভার বিএনপিকেও বহন করতে হবে। বিএনপি তার বিশাল অবস্থানের কারণেই রাজনৈতিক ছোট বা বড় ইস্যুকে এড়িয়ে থাকতে পারে না। বাংলাদেশে গণতন্ত্রের বিজয় হলে তার পেছনে বিএনপির প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ অবদান যেমন থাকে, পরাজয় হলেও তার ভাগ বহন করতে হয়।  

বাংলাদেশের রাজনীতিতে নিরপেক্ষ বা নিরব থাকার অবস্থা বিএনপির নেই। ফলে ক্ষমতায় পুনঃপ্রতিষ্ঠা প্রশ্নে এবং বাংলাদেশের রাজনৈতিক উন্নয়ন ও গণতন্ত্রের স্বার্থে বিএনপি এমন একটি যুগ-সন্ধিক্ষণে রয়েছে যে, যেখান থেকে পিছু হটা বিএনপি ও খালেদা জিয়ার পক্ষে একেবারেই সম্ভব নয়। বরং বিদ্যমান সংকটের সময় বিএনপির যোগ্য ভূমিকা ও তৎপরতা বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক ইতিহাসে বিএনপিকে এনে দিতে পারে স্মরণীয় অবস্থান।  

বিএনপি জিয়াউর রহমানের নেতৃত্বে একদলীয় শাসন থেকে বহুদলীয় গণতন্ত্র ও সংবাদপত্রের স্বাধীনতা ফিরিয়ে দেওয়ার ঐতিহাসিক দায়িত্ব পালন করে। খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে সামরিক স্বৈরাচারের পতন ঘটিয়ে সংসদীয় গণতন্ত্রের পুনপ্রবর্তন করে। যদিও সে সময় ক্ষমতায় থেকে বিএনপি গণতন্ত্রের প্রাতিষ্ঠানিকীকরণ, স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা, দুর্নীতি প্রতিরোধে সর্বাংশে সফল হয় নি।  

এমন কি, দলীয় সমীবদ্ধতা ও কৌশলগত ব্যর্থতা সেনা-সমর্থিত সরকারের কাছে ক্ষমতা ছেড়ে দিতে বাধ্য হয়। গণতন্ত্রের নৈব্যক্তিক শাসনের পথ উন্মুক্ত করলে এবং সিদ্ধান্ত গ্রহণে কৌশলী হয়ে ছাড় দিলে সেদিনের সঙ্কট কাটিয়ে ওঠা হয়ত সম্ভব হতো। যে কারণেই হোক, বিএনপি সেটা করতে পারে নি। ফলে নিজেই শুধু ক্ষমতা হারায়নি, দেশের গণতন্ত্রের অবক্ষয়ের পথও প্রশস্ত করে দেয়। সেই ভুলের মাসুল বিএনপি এখনও দিচ্ছে।  

শুধু দিচ্ছে না, চরমভাবে দিচ্ছে।  

দলের নেতা-কর্মী-সংগঠন বিপর্যস্ত, হতাশ, দিকভ্রান্ত। বিশেষ করে, বিএনপির ভবিষ্যত রাজনীতির মূল কাণ্ডারি তারেক রহমান চরমভাবে আক্রান্ত। তারেকের সঙ্গে সঙ্গে জিয়া পরিবারের রাজনীতিও রাহুগ্রস্থ।  

এমতাবস্থায় তারেকের স্ত্রী বা আরাফাতের স্ত্রীকে রাজনীতিতে নামিয়ে দলের পুনর্গঠন, সাংগঠনিক শক্তি বৃদ্ধি ও ক্ষমতায় যাওয়ার পথ সন্ধানের জন্য কেউ কেউ পরামর্শ দিয়েছেন।  

রাজনীতিতে কোন সিদ্ধান্ত কখন কিভাবে সফল বা ব্যর্থ হবে, সেটা আগাম বলা যায় না। তবে এটা বলা যায় যে, বিএনপির সুযোগ, সম্ভাবনা ও শক্তির প্রেক্ষিতে হাত গুটিয়ে বসে থাকার সুযোগ দলটির নেই। দল ও নেতৃত্বকে রক্ষার জন্যই তাকে তৎপর হতে হবে; কার্যকর কৌশল বের করতে হবেই। বাংলাদেশের গণতন্ত্রের জন্যই বিএনপিকে সরব হতে হবে। এটা দলটির জাতীয় দায়িত্বেরই অংশ এবং নিজের রাজনৈতিক অস্তিত্ব বজায় রাখার জন্যেই জরুরি।

রাজনীতিতে সব সময় অনিশ্চয়তা ও ঝুঁকি থাকেই। একজন গৃহবধু হিসাবে রাজনীতিতে একেবারেই অভিজ্ঞতাহীন খালেদা জিয়া ঘোরতর অনিশ্চয়তার মধ্যে বিরাট ঝুঁকি নিয়ে রাজনীতিতে এসেছিলেন। তিনি জিয়ার রাজনৈতিক উত্তরাধিকার যেমন রক্ষা করেছিলেন, তেমনিভাবে নিজের দল ও দলীয় রাজনীতিকে বাঁচিয়ে ছিলেন।  

খালেদা জিয়ার সে ঝুঁকি ঐতিহাসিক সাফল্য নিয়ে ইতিহাসের গৌরবময় অংশে পরিণত হয়েছে। বিএনপি বর্তমান চ্যালেঞ্জের মুখে এবং সমস্যাসঙ্কুল পরিস্থিতিতে অনিশ্চয়তার অন্ধকারে হারিয়ে যাবে, নাকি সাহসিকভাবে প্রয়োজনীয় ঝুঁকি নিয়ে সংকট মোকাবেলা করবে, সেটা বিএনপিকেই ঠিক করতে হবে।  

তবে এ কথাও সত্য যে, গা-বাঁচিয়ে বিএনপি সামনের বিপদ কাটাতে পারবে না। গা-বাঁচাতে গেলে বিএনপি ও এর নেতা-কর্মীরা বিরূপ পরিস্থিতির আবর্তেই নিঃশেষ হয়ে যাবে।  

গণতন্ত্রের আদর্শ রক্ষায় বিএনপিকে রাজনৈতিক পদক্ষেপ নেয়া ছাড়া গত্যন্তর নেই। রাজনীতির পথেই বিএনপিকে রক্ষা করা যাবে। অন্য কোনো শর্ট-কাট পথে চলে বিএনপির মৌলিক কোনো লাভ হবে বলে মনে করেন না বিশেষজ্ঞরা।

(প্রিয় পাঠক দশ পর্বের ধারাবাহিক বিশ্লেষণটি এখানেই শেষ হলো। )

বাংলাদেশ সময় ১৯২১ ঘণ্টা, মে ২৬, ২০১৭

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।