দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন জাসদ নেত্রী শিরিন আখতার। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও তাকে নৌকা প্রতীকে বিজয়ী করতে একাট্টা হয়ে মাঠে নেমেছে আওয়ামী লীগ।
সর্বশেষ নির্বাচনী মাঠ থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন শক্তিশালী স্বতন্ত্র প্রার্থী ঢাকাস্থ ফেনী সমিতির সভাপতি ও ফেনী জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য শেখ আবদুল্লাহ (আপেল)। তার আগে সরে দাঁড়িয়েছিলেন ২০১৪ সালের দলের মনোনয়ন পাওয়া ফেনী জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি খায়রুল বাশার মজুমদার তপনও।
শুধু বিদ্রোহী কিংবা স্বতন্ত্র নয়, হাইকমান্ডের নির্দেশে দলের যেসব নেতারা মনোনয়ন চেয়ে পাননি তারাও শিরিনকে জেতাতে মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন। এর মধ্যে অন্যতম প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাবেক প্রটোকল অফিসার ও ফেনী ইউনিভার্সিটির ট্রাস্টি বোর্ডের সভাপতি আলাউদ্দিন আহমেদ চৌধুরী নাসিমও।
নাসিমকে বলা হয় ফেনীর রাজনীতির নিয়ন্ত্রক। নির্বাচন যতই ঘনিয়ে আসছেন ততই শিরিনের জন্য মাঠে-ময়দানে ভোট চাইছেন তিনি। তার সাথে রয়েছেন ফেনী-২ আসনের আওয়ামী লীগ প্রার্থী নিজাম উদ্দিন হাজারীও।
মঙ্গলবার (২৫ ডিসেম্বর) বিকেলে পরশুরাম উপজেলা চত্বরে আয়োজিত এক নির্বাচনী জনসভায় আলাউদ্দিন চৌধুরী নাসিম বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, এ আসনে শিরিন আখতার জেতা মানে তিনি নিজেই জেতা। আসনটিতে শিরিন আখতারকে জেতানোর জন্য দলের সবাইকে সর্বোচ্চ আন্তরিকতা দিয়ে কাজ করতে হবে।
এদিকে শেষ মুহূর্তে এসে নাটকীয়ভাবে স্বতন্ত্র প্রার্থী জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য ও ঢাকাস্থ ফেনী সমিতির সভাপতি শেখ আবদুল্লাহ সরে যাওয়ার ফলে নৌকায় ভিড়ছেন আওয়ামী লীগের সব পর্যায়ের নেতাকর্মীরা। আর সে কারণেই ভোটের মাঠে আরো একাধিক প্রার্থী থাকলেও নৌকা-ধানের শীষে মূল লড়াই হবে বলে মনে করছেন স্থানীয় রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।
ঘনিষ্ঠ সূত্রে জানা যায়, পরশুরাম-ফুলগাজী ও ছাগলনাইয়া উপজেলা নিয়ে গঠিত এ আসনে দলীয় প্রার্থিতা চেয়েছেন প্রধানমন্ত্রীর সাবেক প্রটোকল অফিসার আলাউদ্দিন আহমেদ চৌধুরী নাসিমসহ কয়েকজন। শেষ পর্যন্ত জাসদ সাধারণ সম্পাদক বর্তমান সংসদ সদস্য শিরীন আখতারকেই মহাজোটের সমর্থন দেয়া হয়।
একপর্যায়ে বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েও দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের এমপির অনুরোধে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করেন জেলা সহ-সভাপতি গতবারের নৌকার প্রার্থী খায়রুল বাশার মজুমদার তপন। অপর বিদ্রোহী প্রার্থী শেখ আবদুল্লাহর আপেল প্রতীকের প্রচারণায় একাকার হয়ে উঠেছিল সবপর্যায়ের নেতাকর্মীরা।
ক’দিন আগেও বিভিন্ন ইউনিয়নে নির্বাচনী এলাকার দুই উপজেলা চেয়ারম্যানকে নিয়ে আপেলের নির্বাচনী ক্যাম্প উদ্বোধন করা হয়। নেতাকর্মীরাও দ্বিধাবিভক্ত হয়ে নৌকা-আপেলের সমর্থনে সমানতালে প্রচার-প্রচারণা চালিয়ে আসছিলেন। একপর্যায়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ফোনালাপের পর নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন শেখ আবদুল্লাহ।
এর পর থেকেই তিন উপজেলার সকল আ’লীগ নেতারা নিজেদের মধ্যে বিভেদ ভুলে নৌকা প্রতীকের প্রার্থীকে জেতাতে একাট্টা হয়ে কাজ করছেন। শিরিন আখতারের পক্ষে প্রচারণা করতে মাঠে ছুটে গিয়েছেন জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আজিজ আহম্মদ চৌধুরী, আলাউদ্দিন চৌধুরী নাসিম এবং ফেনী-২ আসনের প্রার্থী নিজাম হাজারী নিজেও।
এদিকে আওয়ামী লীগ ও মহাজোট এক হওয়ায় এ আসনের নির্বাচনী মাঠে সমীকরণ পাল্টে গেছে অনেকটাই। বিএনপি তাদের পুরোনো আসনটি পুনরুদ্ধার করা কঠিন হয়ে পড়বে মনে করছেন স্থানীয় রাজনীতি বিশ্লেষকরা।
অন্যদিকে খালেদার সাবেক এ আসনটি ফিরে পাওয়ার জন্য বিএনপিও মাঠে মরিয়া হয়ে কাজ করছেন। আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দুটি মামলায় দণ্ড থাকায় খালেদা জিয়া নির্বাচনে অংশ নিতে পারছেন না। তার স্থলাভিষিক্ত হয়েছেন ঢাকা মহানগর (দক্ষিণ) যুবদলের সাধারণ সম্পাদক রফিকুল আলম মজনু।
মঙ্গলবার ফুলগাজী উপজেলার মুন্সীর হাটের একটি জনসভায় মজনু বলেছেন, নির্বাচনী প্রচারে হামলা-মামলা করে কোনো লাভ হবে না। দেশপ্রেমিক জনগণ ঐক্যবদ্ধ হয়ে দেশকে দুঃশাসনমুক্ত করবে। সরকারের কাছে এই বার্তা থাকায় তারা বেপরোয়া হয়ে উঠেছে।
আসনটিতে বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট ফ্রন্টের (বিএনএফ) শাহরিয়ার ইকবাল (টেলিভিশন), ইসলামী আন্দোলনের কাজী গোলাম কিবরিয়া (হাতপাখা), খেলাফত আন্দোলন আনোয়ার উল্লাহ ভূঁঞা (বটগাছ), জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের এটিএম গোলাম মাওলা চৌধুরী (উদীয়মান সূর্য), ইসলামী ফ্রন্টের কাজী মাওলানা নুরুল আলম (মোমবাতি), মুসলিম লীগের তারেকুল ইসলাম (হারিকেন) নির্বাচনী মাঠে রয়েছেন।
ফেনী-১ আসনে ভোটকেন্দ্র রয়েছে ১০৬টি। মোট ভোটার ৩ লাখ ৫ হাজার ৫৫ জন। এর মধ্যে নারী ভোটার ১ লাখ ৪৯ হাজার ৯৩৩ জন, পুরুষ ভোটার ১ লাখ ৫৫ হাজার ১২২ জন।
বাংলাদেশ সময়: ১১০৯ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৬, ২০০১৮
এসএইচডি/এমজেএফ