ঢাকা, সোমবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

রাজনীতি

অবশ্যই এটা কালো আইন: মির্জা ফখরুল

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৩১৩ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ৭, ২০২০
অবশ্যই এটা কালো আইন: মির্জা ফখরুল

ঢাকা: বিভিন্ন স্বায়ত্তশাসিত সংস্থার উদ্বৃত্ত অর্থ সরকারি কোষাগারে জমা রাখার জন্য সংসদে যে আইন পাস হয়েছে তাকে ‘কালো আইন’ বলেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

বৃহস্পতিবার (৬ ফেব্রুয়ারি) রাতে গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে সাংবাদিকদের কাছে তিনি এ কথা বলেন।

তিনি বলেন, ‘অবশ্যই এটি একটি কালো আইন।

এই আইন করে তাদের (সরকার) যে দুরভিসন্ধি, এটাকে বৈধ করছে। দুরভিসন্ধিটা হচ্ছে- তারা তো অর্থনীতিকে একেবারে ব্যানক্রাফট করে ফেলেছে। গত কয়েকদিনের পত্র-পত্রিকায় আমরা দেখতে পাবো যে, ব্যাংকের খাত থেকে সরকার ঋণ নিচ্ছে প্রায় ৪৯ হাজার কোটি টাকা এবং পত্র-পত্রিকায় যা বেরিয়েছে তাতে করে অর্থনীতির নেগেটিভ চিত্র ছাড়া পজেটিভ চিত্র কোথাও দেখা যায়নি। ’

‘এই আইন থেকে এটাই প্রমাণিত হলো সরকার সব জায়গা থেকে টাকা নেয়া শুরু করেছে। এটা দুর্নীতির একটা অংশ বলতে পারেন। কারণ এই অর্থগুলো ব্যবহার করবে কুইক রেন্টাল পাওয়ার প্ল্যান্টের ক্ষেত্রে, মেগা প্রজেক্টের ক্ষেত্রে যেখানে মেগা দুর্নীতি হচ্ছে। ’ যোগ করেন তিনি।  

সরকারের ব্যাংক ঋণের ভার অনেক বেড়ে যাওয়ার প্রেক্ষাপটে রাষ্ট্রের স্বশাসিত সংস্থাগুলোর স্থিতিতে থাকা ২ লাখ ১২ হাজার ১০০ কোটি টাকা উন্নয়নের কাজে লাগানোর পরিকল্পনা থেকে ওই অর্থ রাষ্ট্রীয় কোষাগারে আনতেই এই আইনটি করার উদ্যোগ নেয় সরকার।

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘সরকারের কতটা ব্যানক্রাফসি হয়ে গেছে, এই যে, স্বায়ত্বশাসিত প্রতিষ্ঠানগুলো আছে, অতীতে ওইসব প্রতিষ্ঠান থেকে সরকার কখনোই টাকা নেয়নি। প্রত্যেক অটোনমাস বডিজ তার নিজস্ব ফান্ড তৈরি হয়েছে, সেই ফান্ডের আরো উন্নতি হয়েছে। ওইসব সংস্থার বিভিন্ন প্রজেক্টগুলো তারা বাস্তবায়িত করার চেষ্টা করেছে এবং একই সঙ্গে আরো বিস্তার লাভ করেছে। আজকে যেসব স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানগুলো তারা কিছুটা প্রফিট করে অর্থ জমা করেছে, সেখান থেকে যদি সরকারি কোষাগারে নিয়ে যাওয়া হয় এবং সেখান থেকে মেগা প্রজেক্টে খরচ করা হয়, সেখানে দুর্নীতিকে আরো প্রশস্ত করা হচ্ছে। ’

দেশের অর্থনীতির দুরাবস্থা তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘একমাত্র প্রবাসীদের আয় রেমিটেন্স ডলারের হিসাবে কিছুটা পজেটিভনেস দেখা গেছে। তাছাড়া বাকি সবগুলো খাতের সূচকগুলো নেগেটিভ। বিশেষ করে সবচেয়ে বড় সমস্যা রপ্তানি আয় কমে গেছে। দুর্ভাগ্যজনকভাবে যে গার্মেন্টস খাতের ওপর আমাদের সবচেয়ে বেশি নির্ভর করতে হয়, সেখানকার অবস্থা খুব খারাপ। ’

তিনি বলেন, ‘গতকাল একজন বেশ বড় গার্মেন্টস উদ্যোক্তার সঙ্গে কথা হচ্ছিল, তিনি বললেন যে, তারা খুব কষ্টের মধ্যে, আতংকের মধ্যে শিল্প পরিচালনা করছেন। বিদ্যুতের দাম, গ্যাসের দাম যেভাবে বাড়ানো হয়েছে, সেই সঙ্গে আন্তর্জাতিক যে নেগেটিভ অবস্থা তৈরি হয়েছে, সেই অবস্থায় ইন্ডাস্ট্রিগুলো বাঁচিয়ে রাখাই হচ্ছে তাদের বড় সমস্যা। এটা আস্তে আস্তে নিচের দিকেই নামছে। এটা অর্থনীতির জন্য বড় অশনি সংকেত। অর্থনীতিতে একটা আশংকা আছে, যে কোনো সময়ে ধস নেমে যেতে পারে। ’

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘ভোট তো তারা চুরি করে নিয়ে গেছে, ডাকাতি করে নিয়ে গেছে ইভিএম দিয়ে। এর প্রমাণ আমরা একেবারে মেশিন দেখিয়ে দিয়ে দিয়েছি। এখন আপনি দেখবেন যে, নির্বাচনী কেন্দ্রগুলো থেকে যে রিসিপ্ট পেপার পাওয়ার কথা সেই রিসিপ্ট পেপার এখনো কেউ পায়নি। দেখবেন যে সেগুলোতে এতো গরমিল যে এটা ইভিএমে চিন্তাই করা যায় না। ’

তিনি বলেন, ‘ভোটের গণণার ফলাফল দিতে লাগলো ৮ ঘণ্টা। অথচ নির্বাচন কমিশন তার পরিপত্রে বলেছে একঘণ্টার মধ্যে ফলাফল হয়ে যাওয়ার কথা। পরিপত্র বলা আছে, সন্ধ্যা ৬টার মধ্যে ফলাফল দেয়ার কথা। যেহেতু মিলাতে পারেনি, বহু জায়গায় গরমিল রয়েছে, সেজন্য ৮ ঘণ্টা সময় নিয়ে ফলাফল বিকৃত করেছে। ’

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের বক্তব্যের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তিনি বলেন, ‘উনিতো যা ইচ্ছা বলতেই পারেন। উনাকে কিছুটা বলার মধ্যে আমরা আনন্দ লাভ করি, উনি সুন্দরভাবেই কথাগুলো বলেন। বিষয়টা সেটা নয়। বিষয়গুলো ছেলে খেলা নয়, ছেলেমানুষী না। আপনি একটা প্রতিষ্ঠানকে ধবংস করে দিচ্ছেন, আপনি একটা জাতির সমস্ত আশা-আকাংখা গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে ধবংস করছেন। সেই ক্ষেত্রে আপনি মামার বাড়ির আবদার এসব বলে তো কোনো লাভ নেই। এটা জনগণের দাবি। জনগণ যুদ্ধ করে, লড়াই করে দেশ স্বাধীন করেছে। একটা অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচনে প্রতিনিধি নির্বাচিত করা তাদের অধিকার। তারা আজকে ভোট চুরি করেছে। এজন্য আমাদের ওপর তারা দোষ চাপাচ্ছে। কারণ আমরা তাদের প্রধান প্রতিপক্ষ। তারা যে চুরি করেছে এখানে তো বোঝা যায়। এজন্য কথা আছে চোরের মায়ের বড় গলা। ’

বাংলাদেশ সময়: ২২০৬ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০৬, ২০২০
এমএইচ/এজে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।