ঢাকা, মঙ্গলবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

রাজনীতি

করোনাকে ‘জাতীয় দুর্যোগ’ ঘোষণার দাবি বাম গণতান্ত্রিক জোটের

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১০৭ ঘণ্টা, মার্চ ২২, ২০২০
করোনাকে ‘জাতীয় দুর্যোগ’ ঘোষণার দাবি বাম গণতান্ত্রিক জোটের

ঢাকা: বিশ্বব্যাপী দ্রুত ছড়িয়ে পড়া করোনা ভাইরাসের পরিস্থিতিকে জাতীয় দুর্যোগ ঘোষণার দাবি জানিয়েছে বাম গণতান্ত্রিক জোট। একইসঙ্গে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণরোধে সমন্বিত উদ্যোগ গ্রহণ করে পাঁচ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ এবং আট দফা দাবি পেশ করেছেন জোটের নেতারা।

রোববার (২২ মার্চ) দুপুরে রাজধানীর পুরানা পল্টনে মুক্তিভবনের মৈত্রী মিলনায়তনে এক সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি জানানো হয়।

এতে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন বাম গণতান্ত্রিক জোটের সমন্বয়ক ও বাসদ কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য বজলুর রশিদ ফিরোজ।

এসময় সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি) সভাপতি কমরেড মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম, বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দলের (বাসদ) কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক কমরেড খালেকুজ্জামান ও কমিউনিস্ট লীগ নেতা নজরুল ইসলাম।

এসময় আরও উপস্থিত ছিলেন সিপিবি সাধারণ সম্পাদক মো. শাহ আলম, বাসদ (মার্কসবাদী) নেতা মানস নন্দী, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির নেতা আকবর খান, গণসংহতি আন্দোলনের নেতা বাচ্চু ভুইয়া, বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক আন্দোলনের হামিদুল হক, গণতান্ত্রিক বিপ্লবী পার্টির নেতা শহীদুল ইসলাম সবুজ প্রমুখ।

সংবাদ সম্মেলনে করোনা ভাইরাসের বিস্তার এবং মোকাবিলায় সরকারের বেহাল প্রস্তুতিতে গভীর উদ্বেগ ও ক্ষোভ প্রকাশ করে বাম গণতান্ত্রিক জোট নেতারা বলেন, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা করোনা ভাইরাস সংক্রমণকে বিশ্বব্যাপী মহামারি ঘোষণা করলেও বাংলাদেশের সরকার গত ৩ মাসেও যথাযথ প্রস্তুতি না নিয়ে উদাসীনতা, দায়িত্বহীনতা ও অযোগ্যতার পরিচয় দিয়েছে।

বর্তমান দুর্যোগ পরিস্থিতি নিয়ে কমরেড মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম বলেন, এ মহামারির হাত থেকে কেউ একা বাঁচতে পারবেন না, সেই জন্য সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে মহামারি মোকাবিলা করতে হবে। এসময় গার্মেন্টস, হকারসহ শ্রমজীবী মানুষের জীবন-জীবিকা নিশ্চিতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।

এসময় সংবাদ সম্মেলন থেকে বর্তমান সংকট মোকাবিলায় সরকারে কাছে আট দফা দাবি পেশ করা হয়। দাবিগুলো হলো:
১. করোনা সংক্রমণের ভয়াবহতাকে ‘জাতীয় দুর্যোগ’ ঘোষণা করে সর্বাত্মক প্রস্তুতি ও সতর্কতা গ্রহণ করতে হবে। সব গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দল এবং চিকিৎসক ও ভাইরোলজি বিশেষজ্ঞদের মতামত নিয়ে সমন্বিত উদ্যোগ নিতে হবে।

২. করোনা মোকাবিলায় অবিলম্বে বাজেট পুনর্বিন্যাস করে তাৎক্ষণিকভাবে কমপক্ষে ৫ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ করতে হবে। এ টাকায় পর্যাপ্ত করোনা কিট, পিপিই, কমপক্ষে ১ লাখ স্বাস্থ্য সেচ্ছাসেবী প্রশিক্ষণ ও চিকিৎসা সরঞ্জাম সরবরাহ করতে হবে। সংকটের বিস্তৃতি ও প্রতিরোধ বিবেচনায় দীর্ঘমেয়াদী লক্ষ্যে ২০ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ করতে হবে।

৩. কিছু হাসপাতালকে বিশেষায়িত হাসপাতাল হিসেবে গড়ে তুলতে হবে। যেখানে কোয়ারেন্টিন, আইসোলেশন ও চিকিৎসা একই হাসপাতালে হবে। ঢাকার আর্মি স্টেডিয়ামসহ প্রতিটি জেলা-উপজেলায় স্টেডিয়ামগুলোকে ফিল্ড হাসপাতালে পরিণত করতে হবে, প্রয়োজনে সেনাবাহিনীর নিয়ন্ত্রণাধীন এলাকায় সাময়িক হাসপাতাল এবং সেনাবাহিনীর চিকিৎসকদের নিয়োগ দিতে হবে। প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিনের জায়গা বৃদ্ধি করতে হবে। প্রয়োজনে তারকা হোটেলগুলো এবং জেলার ভালো হোটেলগুলোকে এ কাজে ব্যবহার করতে হবে।

৪. করোনা পরীক্ষার জন্য জেলা-উপজেলায় পর্যাপ্ত বিশেষায়িত প্যাথলজিকাল ল্যাবরেটরি স্থাপন করা এবং স্থাপিত ল্যাবগুলোর মধ্যে নির্দিষ্ট কয়েকটিকে করোনা পরীক্ষার জন্য নির্বাচিত করা। যাতে সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়তে না পারে। প্রয়োজনে বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক সাময়িক রাষ্ট্রীয় নিয়ন্ত্রণে নিয়ে এ দুর্যোগে কাজে লাগাতে হবে।

৫. ভর্তুকি মূল্যে শ্রমজীবী ও সাধারণ মানুষের জন্য চাল, ডালসহ স্যানিটাইজার ও সাবান সরবরাহ করতে হবে। দ্রব্যের দাম নিয়ন্ত্রণ ও দাম বৃদ্ধির সিন্ডিকেটের হোতাদের শাস্তি দিতে হবে। স্যানিটাইজারের উপকরণের দাম বৃদ্ধিরোধ এবং সহজে প্রাপ্যতা নিশ্চত করতে হবে।

৬. ঘনবসতি পূর্ণ এলাকা যেমন বস্তি, স্বল্প আয়ের মানুষের আবাসস্থল, ভাসমান মানুষদের জন্য সুরক্ষা, সচেতনতা, পুষ্টিকর খাদ্য সরবরাহ করার ব্যবস্থা নিতে হবে। কারণ গৃহকর্মী, গাড়িচালক, অফিস সহকারীসহ স্বল্প আয়ের মানুষেরা যাতে সংক্রমিত হতে না পারে।

৭. গার্মেন্টসসহ শিল্প কারখানার শ্রমিকদের স্বাস্থ্য সুরক্ষা, প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ, কর্মক্ষেত্রে পরিচ্ছন্নতার ব্যবস্থা করতে হবে। করোনার অজুহাতে শ্রমিক ছাঁটাই চলবে না। কর্মক্ষেত্রে শ্রমিক আক্রান্ত হলে চিকিৎসার দায়িত্ব রাষ্ট্রকে নিতে হবে।

৮. চিকিৎসক, চিকিৎসাসেবাকর্মী, সংবাদকর্মী, পরিবহনকর্মী, পুলিশসহ জন সম্পৃক্ত কাজে যারা যুক্ত আছেন তাদের জন্য প্রয়োজনীয় সুরক্ষার ব্যবস্থা নিতে হবে।

বাংলাদেশ সময়: ২০২২ ঘণ্টা, মার্চ ২২, ২০২০
আরকেআর/ওএইচ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।