ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

রাজনীতি

‘পাটকল বেসরকারিকরণ মুক্তিযুদ্ধের সঙ্গে বিশ্বাস ঘাতকতা’

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১৪৫ ঘণ্টা, জুন ৩০, ২০২০
‘পাটকল বেসরকারিকরণ মুক্তিযুদ্ধের সঙ্গে বিশ্বাস ঘাতকতা’

ঢাকা: দেশের রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকলগুলো বেসরকারিকরণ করা মুক্তিযুদ্ধের অঙ্গীকারের প্রতি বিশ্বাস ঘাতকতা বলে উল্লেখ করেছেন বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি)।

মঙ্গলবার (৩০ জুন) সিপিবি সভাপতি কমরেড মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম ও সাধারণ সম্পাদক মোহম্মদ শাহ আলম এক বিবৃতিতে এ কথা উল্লেখ করেন।

বিবৃতিতে সিপিবি নেতারা বলেন, মহান মুক্তিযুদ্ধের পর দেশের প্রধান শিল্প পাটকলগুলো রাষ্ট্রায়ত্তকরণ করা ছিল ১১ দফার অন্যতম অঙ্গীকারের বাস্তবায়ন।

গত ৪০ বছর ধরে ক্ষমতাসীন সরকারগুলো এশিয়ার বৃহত্তম পাটকল আদমজীসহ পঞ্চাশের অধিক পাটকল বন্ধ এবং বেসরকারিকরণ করে আমাদের মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের প্রতি বিশ্বাসঘাতকতা করেছে।

পাটকল বন্ধের গণবিরোধী ও হটকারী সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারের আহবান জানিয়ে সিপিবি নেতারা বলেন, পাকিস্তান আমলে বাংলাদেশের পাট চাষিদের উৎপাদিত পাট ব্যবহার করে পশ্চিম পাকিস্তানি আদমজী-বাওয়ানিদের এ দেশের মানুষকে শোষণের বিরোধীতা করেই পাটকলগুলো জাতীয়করণের দাবি উত্থাপিত হয়েছিল। মুক্তিসংগ্রামের অঙ্গীকার হিসেবে ১৯৭২ সালে ৭৭টি পাটকল রাষ্ট্রায়ত্ত করা হয়। ১৯৮২ সালে এরশাদ আমলে বিশ্ব ব্যাংক-আইএমএফ এর প্রেসক্রিপশান স্ট্রাকচারাল অ্যাডজাস্টমেন্টের নামে পাটকলগুলো বেসরকারিকরণের শুরু হয়। ১৯৯২ সালে শিল্পমন্ত্রী রাজাকার নিজামীর হাত দিয়ে দেশের বৃহত্তম আদমজী পাটকল বন্ধ করে দেওয়া হয়। মুক্তিযুদ্ধের চেতনার দাবিদার বর্তমান আওয়ামী সরকার অবশিষ্ট ২৫টি রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকল বন্ধের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে। পাটকল বন্ধের এ পুরো প্রক্রিয়াটাই জাতির সঙ্গে বিশ্বাস ঘাতকতা।

নেতারা আরো বলেন, সরকার লোকসানের কথা বলে পাটকলগুলো বন্ধ করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। লোকসানের জন্য শ্রমিকরা দায়ী নয়। দায়ী সরকারের ভুল নীতি, দুর্নীতি ও কর্মকর্তাদের লুটপাট। পাট ক্রয়, পাট পণ্য বহুমুখীকরণের ব্যর্থতা ও আন্তর্জাতিক বাজারে পাট পণ্য বিক্রির ব্যর্থতার দায় শ্রমিকদের ওপর চাপিয়ে দেওয়া যাবে না। দেশের রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকলগুলো ৬০ থেকে ৭০ বছর পুরনো যন্ত্রপাতির কারণে উৎপাদনশীলতা কমে গেছে। এর দায়ও শ্রমিকদের নয়। আধুনিকায়নের মাধ্যমে উৎপাদনশীলতা বাড়ানোর মাধ্যমে মুনাফা করা সম্ভব।

পাটকল বন্ধের সমালোচনা করে সিপিবি নেতা বলেন, সরকার ২৫ হাজার স্থায়ী পাট শ্রমিকদের গোল্ডেন হ্যান্ডশেকের জন্য ছয় হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ দিতে চায় কিন্তু মাত্র ১২০০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করে কারখানাগুলোকে আধুনিকায়ন করতে আগ্রহী নয়। এ থেকে সরকারের দুরভিসন্ধি বোঝা যায়। এর আগেও পিপিপি’র মাধ্যমে বেসরকারিকরণের করা শিল্প কারখানাগুলো পরিণতি সবাই জানে। অবশিষ্ট যে ২৫টি কারখানা বন্ধ করার সিদ্ধান্ত সরকার গ্রহণ করেছে তার পরিণতিও একই হবে। দেশের লাখ লাখ কৃষক পাট চাষের সঙ্গে সম্পৃক্ত। এসব কৃষককে বেসরকারি পাটকল মালিকদের হাতে ছেড়ে দেওয়া হবে। পাটের দাম নিয়ন্ত্রণ করার একছত্র ক্ষমতা পেয়ে যাবে বেসরকারি পাটকল মালিকরা।  

রাষ্ট্রায়াত্ত পাটকলগুলো বেসরকারিকরণ করে পাটচাষ ও পাটশিল্পকে ধ্বংস করার পাঁয়তারা না করে মাত্র ১২০০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করে আধুনিকায়ন করার মাধ্যমে দেশীয় পাট শিল্প টিকিয়ে রাখতে সরকারের প্রতি আহবান জানান সিপিবি নেতারা।

আগামী ২ জুলাই পাটকল বন্ধের প্রতিবাদসহ অন্যান্য দাবিতে বাম গণতান্ত্রিক জোটের উদ্যোগে ঢাকায় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় অভিমুখে বিক্ষোভ মিছিল ও সারাদেশে জেলায় জেলায় রাজপথে অবস্থান ও অবরোধ কর্মসূচি সফল করতে দেশবাসীর প্রতি আহবান জানানো হয় বিবৃতির মাধ্যমে।

বাংলাদেশ সময়: ২১৪০ ঘণ্টা, জুন ৩০, ২০২০
আরকেআর/আরআইএস/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।