ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

রাজনীতি

রাজনীতিতে একজন শাহজাহান সিরাজ

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯০১ ঘণ্টা, জুলাই ১৪, ২০২০
রাজনীতিতে একজন শাহজাহান সিরাজ

ঢাকা: দেশের স্বাধীনতা সংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক শাহজাহান সিরাজ। মুক্তিযুদ্ধের সময় যাদের ‘চার খলিফা’ বলা হতো শাহজাহান সিরাজ ছিলেন তাদেরই একজন। মঙ্গলবার (১৪ জুলাই) বিকেলে তিনি চলে গেছেন না ফেরার দেশে।

১৯৭১ সালের ১ মার্চ সিরাজুল আলম খান, শেখ ফজলুল হক, আব্দুর রাজ্জাক, তোফায়েল আহমেদ, আবদুল কুদ্দুস মাখন, নূরে আলম সিদ্দিকী, আ স ম আবদুর রব প্রভৃতি ছাত্রনেতাদের পাশাপাশি স্বাধীন বাংলা ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ গঠনে অগ্রণী ভূমিকা রেখেছিলেন শাহজাহান সিরাজ। ১৯৭১ সালের ২ মার্চ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলায় স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন করেন আ স ম আবদুর রব।

সেখান থেকেই পরবর্তী দিনে স্বাধীনতার ইশতেহার পাঠের পরিকল্পনা করা হয়।

সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ৩ মার্চ ১৯৭১ পল্টন ময়দানে বিশাল এক ছাত্র জনসভায় বঙ্গবন্ধুর সামনে স্বাধীনতার ইশতেহার পাঠ করেছিলেন শাহজাহান সিরাজ। এরপর সশস্ত্র যুদ্ধ শুরু হলে তিনি বাংলাদেশ লিবারেশন ফোর্স (বিএলএফ) বা মুজিব বাহিনীর কমান্ডার হিসেবেও দায়ত্ব নেন।

শাহজাহান সিরাজের জন্ম ১৯৪৩ সালের ১ মার্চ টাঙ্গাইলের কালিহাতি থানায়। তার পিতার নাম আব্দুল গণি ও মাতা রহিমা বেগম। শাহজাহান সিরাজ মুক্তিযুদ্ধকালীন অন্যতম ছাত্রনেতা ছিলেন। স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি তিনবার জাসদের মনোনয়নে এবং এক বার বিএনপির মনোনয়নে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। এছাড়া ২০০১ সালের নির্বাচনের পর খালেদা জিয়ার সরকারে বন ও পরিবেশ মন্ত্রী ছিলেন শাহজাহান সিরাজ। বার্ধক্যজনিত কারণে দীর্ঘদিন তাকে রাজনীতির মাঠে দেখা যায়নি।

১৯৬২ সালে হামিদুর রহমান শিক্ষা কমিশন বিরোধী আন্দোলনে সম্পৃক্ত হওয়ার মধ্য দিয়ে শাহজাহান সিরাজ ছাত্ররাজনীতিতে প্রবেশ করেন। সেই সময় তিনি টাঙ্গাইলের করটিয়া সাদত কলেজের ছাত্র ছিলেন। এরপর তিনি ছাত্রলীগের মাধ্যমে ছাত্ররাজনীতিতে উঠে আসেন। ১৯৬৪-৬৫ এবং ১৯৬৬-৬৭ দুই মেয়াদে তিনি দুইবার করটিয়া সাদত কলেজের ছাত্র সংসদের ভিপি নির্বাচিত হয়েছিলেন। একজন সক্রিয় ছাত্রনেতা হিসেবে তিনি ১১ দফা আন্দোলন এবং ১৯৬৯ সালের গণ-অভ্যুত্থানে অংশগ্রহণ করেন। এরপর তিনি ১৯৭০-৭২ মেয়াদে অবিভক্ত ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি ছিলেন স্বাধীন বাংলা বিপ্লবী পরিষদের (যার অন্য নাম নিউক্লিয়াস) সক্রিয় কর্মী ও ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের নেতা।

মুক্তিযুদ্ধের পর সর্বদলীয় সমাজতান্ত্রিক সরকার গঠনের পক্ষে অবস্থান নিয়ে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ) গঠনে ভূমিকা পালন করেন। যা ছিল স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম বিরোধী দল। জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের প্রতিষ্ঠাতা সহকারী সাধারণ সম্পাদক হয়েছিলেন শাহজাহান সিরাজ। পরবর্তীতে জাসদের সভাপতি নির্বাচিত হয়েছিলেন। জাসদের মনোনয়নে তিন বার তিনি জাতীয় সংসদের টাঙ্গাইল-৪ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন।

১৯৯২ সালের জুন মাসে ড. কামাল হোসেন গণতান্ত্রিক ফোরামের আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু করেন। ১৯৯৩ সালে আওয়ামী লীগের কাউন্সিলে সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য পদ থেকে বাদ যান ড. কামাল হোসেন। তারপরে ড. কামাল হোসেনের গণতান্ত্রিক ফোরাম, সাইফুদ্দিন আহমেদ মানিকের নেতৃত্বে সিপিবি'র একাংশ, পঙ্কজ ভট্টাচার্য়ের নেতৃত্বে ন্যাপের একাংশ ও শাহজাহান সিরাজের নেতৃত্বাধীন জাসদের সমন্বয়ে প্রতিষ্ঠিত হয় গণফোরাম। ওই সময় গণফোরাম প্রতিষ্ঠার পেছনেও শাহজাহান সিরাজ গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করেছিলেন। ১৯৯৫ সালে ড. কামাল হোসেনের সাথে মতবিরোধের জের ধরেই তিনি গণফোরাম ত্যাগ করে তার অনুসারীদের নিয়ে বিএনপিতে যোগ দেন।

শাহজাহান সিরাজ ১৯৯৫ সালে খালেদা জিয়ার নেতৃত্বাধীন বিএনপিতে যোগ দেন। তিনি বিএনপির মনোনয়নেও একবার একই আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। খালেদা জিয়া সরকারের শেষপর্যায়ের প্রথমে বন ও পরিবেশ মন্ত্রী ও শেষ দিকে নৌপরিবহন মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

ব্যক্তি জীবনে এক সময়ের রাজনৈতিক সহকর্মী, সাবেক ছাত্রনেত্রী রাবেয়া সিরাজের সঙ্গে ১৯৭২ সালে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন শাহজাহান সিরাজ। তাদের একটি ছেলে ও একটি মেয়ে আছে। তার স্ত্রী রাবেয়া সিরাজ একজন শিক্ষিকা এবং রাজনীতিবিদ।

বাংলাদেশ সময়: ১৯০০ ঘণ্টা, জুলাই ১৪, ২০২০
এমএইচ/টিএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।