ঢাকা, বুধবার, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ২৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

রাজনীতি

সিরাজগঞ্জ জেলা আ.লীগের ত্রি-বার্ষিক সম্মেলন

সভাপতি-সম্পাদকের দৌড়ে আলোচনায় হাসান-হেনরী

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২২৭ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৭, ২০২২
সভাপতি-সম্পাদকের দৌড়ে আলোচনায় হাসান-হেনরী

সিরাজগঞ্জ: আগামী ২৮ ফেব্রুয়ারি সিরাজগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের ত্রি-বার্ষিক সম্মেলন। ওইদিন সিরাজগঞ্জ সরকারি কলেজ মাঠে এ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে।

সম্মেলনকে ঘিরে ইতোমধ্যে রাজনৈতিক উৎসবের নগরীতে পরিণত হয়েছে পুরো জেলা। ব্যানার আর পোস্টারে ছেয়ে গেছে শহরের অলিগলি থেকে শুরু করে উপজেলাগুলোও। মূলত সভাপতি এবং সাধারণ সম্পাদক পদেই এদিন ভোট হওয়ার কথা রয়েছে। সেজন্য প্রার্থীরাও ব্যস্ত সময় পার করছেন প্রচারণায়। উপজেলাগুলোতে ঘুরে কাউন্সিলরদের মন জয় করার চেষ্টা করছেন তারা।  

এবারের ত্রি-বার্ষিক সম্মেলনে সভাপতি পদে বর্তমান ভারপ্রাপ্ত সভাপতি অ্যাডভোকেট কে এম হোসেন আলী হাসান, সাবেক মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী, জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি ও বর্তমান জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আব্দুল লতিফ বিশ্বাস, জেলা আওয়ামী লীগের বর্তমান সহ-সভাপতি সিরাজগঞ্জের জজ কোর্টের পিপি অ্যাডভোকেট আব্দুর রহমান ও বীর মুক্তিযোদ্ধা বিমল কুমার দাস প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।

এছাড়া সাধারণ সম্পাদক পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন কেন্দ্রীয় মহিলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক ও জেলা আওয়ামী লীগ সদস্য ড. জান্নাত আরা হেনরী, বর্তমান ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক আব্দুস সামাদ তালুকদার, কৃষক লীগের কেন্দ্রীয় নেতা সাখাওয়াত হোসেন সুইট, জেলা আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক শামসুজ্জামান আলো এবং জেলা আওয়ামী লীগ নেতা আনোয়ার হোসেন ফারুক।  

তবে এদের মধ্যে প্রচার-প্রচারণা থেকে শুরু করে গ্রহণযোগ্যতার দিক থেকে সভাপতি পদে আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতা কে এম হোসেন আলী হাসান এবং সাধারণ সম্পাদক পদে কেন্দ্রীয় মহিলা আওয়ামী নেত্রী ড. জান্নাত আরা হেনরী এগিয়ে রয়েছেন বলে একাধিক সূত্র জানিয়েছে।

নেতাকর্মীরা বলছেন, আওয়ামী লীগের দুঃসময়ের কাণ্ডারীদের মধ্যে অন্যতম বর্তমান ভারপ্রাপ্ত সভাপতি হোসেন আলী হাসান। এর আগেও তিনি জেলার সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। অভিজ্ঞ ও সিনিয়র রাজনীতিক হিসেবে সর্বমহলে তার গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে। সেজন্য সভাপতির দৌড়ে তিনি বেশ এগিয়ে রয়েছেন।

অন্যদিকে, নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জোটের বাইরে আওয়ামী লীগের প্রার্থী ছিলেন ড. জান্নাত আরা হেনরী। তিনি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঘনিষ্ঠ সহচর, একুশে পদকপ্রাপ্ত (মরণোত্তর) বর্ষীয়ান রাজনীতিবিদ, জেলা আওয়ামী লীগের আমৃত্যু সভাপতি ভাষাসৈনিক মোতাহার হোসেন তালুকদারের পুত্রবধূ। এছাড়া তিনি কেন্দ্রীয় মহিলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক। তিনি নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সামান্য ভোটের ব্যাবধানে হেরে গেলেও রাজনীতির মাঠে সক্রিয় ছিলেন। স্বচ্ছ ও পরিশীলিত রাজনীতিক হিসেবে তার আলাদা একটি ইমেজ তৈরি হয়েছে। সেজন্য সাধারণ সম্পাদক হওয়ার দৌড়ে সংস্কৃতিজন ড. জান্নাত আরা হেনরী এগিয়ে রয়েছেন। এই মুহূর্তে জেলা আওয়ামী লীগের গুরুত্বপূর্ণ এই পদে হেনরীর বিকল্প কেউ নেই বলেই মনে করছেন নেতাকর্মীরা।

আসছে ত্রি-বার্ষিক সম্মেলনে সভাপতি পদপ্রার্থী কে এম হোসেন আলী হাসান জানান, ২৮ ফেব্রুয়ারি সিরাজগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলন ঘিরে সব প্রস্তুতি শেষের দিকে। সম্মেলন প্রস্তুতির পাশাপাশি কাউন্সিলরদের কাছেও ভোট প্রার্থনা করছেন তিনি। বর্ষীয়ান এই নেতা বলেন, ‘২০২১ সালের ২২ নভেম্বর বঙ্গবন্ধুকন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা আমাকে ভারপ্রাপ্ত সভাপতির দায়িত্ব দেন। দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে আমি নেতাকর্মীদের পার্টি অফিসমুখী করেছি। দলের মধ্যে যে বিভেদ ছিল তা দূর করে আওয়ামী লীগকে ঐক্যবদ্ধ করেছি। সিরাজগঞ্জ আওয়ামী লীগ এখন ঐক্যবদ্ধ। ২০২৩ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে এবারের কাউন্সিল বেশ গুরুত্বপূর্ণ। দলীয় সভাপতি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জেলার সভাপতি-সম্পাদক হিসেবে যাদেরই নির্ধারণ করবেন আমরা তাদেরই মেনে নেব। আমি বিশ্বাস করি, এবারের সম্মেলনে তৃণমূলের ত্যাগী নেতাকর্মীদের মূল্যায়ন করা হবে। ’

সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী জান্নাত আরা হেনরী বলেন, ‘বর্তমানে সারা বাংলাদেশে আওয়ামী লীগের জেলা সাধারণ সম্পাদক পদে আমি একাই নারী প্রার্থী। প্রচারণায় যেখানে গেছি সেখানেই সকলের সাড়া পেয়েছি। আমার শশুর মোতাহার হোসেন তালুকদার ছিলেন সাবেক এমএলএ ও মহকুমা গভর্নর এবং সিরাজগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের আমৃত্যু সভাপতি। তার অনুপ্রেরণায় আমিও ছাত্রজীবন থেকে আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আওয়ামী লীগ সভাপতি জননেত্রী শেখ হাসিনা আমাকে নৌকা প্রতীক দিয়েছিলেন। সিরাজগঞ্জের মানুষ আমাকে প্রাণ উজার করে ভোটও দিয়েছিল। কিন্তু দলীয় কোন্দলের কারণে আমি ওই সময় সামান্য ভোটের ব্যবধানে হেরে যাই। তারপরও আমি রাজনীতির মাঠ ছাড়িনি। ’

কেন্দ্রীয় মহিলা আওয়ামী লীগের এই নেতা বলেন, ‘এবারের সম্মেলনের জন্য সব উপজেলার নেতারা আমাকে দোয়া করেছেন। আমি বিশ্বাস করি, নির্বাচন হলে শত ভাগ ভোটে জয়ী হব। তারপরেও মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যাকে মনোনীত করবেন আমরা তাকেই মেনে নেব। আমি যদি জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হই তাহলে দলকে সু-সংগঠিত করে তৃণমূলের ত্যাগী নেতাদের মূল্যায়ন করে একটি সুগঠিত আওয়ামী লীগ উপহার দেব। আমি রাজনীতির পাশাপাশি সামাজিক, শিক্ষা ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে অবদান রেখে চলেছি। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী যদি জেলায় নারী নেতৃত্বকে প্রাধান্য দেন সেক্ষেত্রে আমি এই পদের জন্য আশাবাদী। ’

আরেক সভাপতি প্রার্থী সাবেক মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী সিরাজগঞ্জ জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল লতিফ বিশ্বাস বলেন, ‘নেত্রী আমাকে সভাপতি বানিয়েছিলেন। আমি তিন বছর নিষ্ঠার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করেছি। তারপরও দল আমাকে কেন যে সভাপতি পদ থেকে অব্যাহতি দিল সেটা আমি জানি না। আমাকে কোনো কারণ দর্শানোর নোটিশ পর্যন্তও দেওয়া হয়নি। তাই আমি আমার সাংগঠনিক দক্ষতার প্রমাণ রাখতে পারিনি। তবে এবার যদি সভাপতি হতে পারি তাহলে সাংগঠনিকভাবে জেলা আওয়ামী লীগকে সু-সংগঠিত করব। ’

বীর মুক্তিযোদ্ধা অ্যাডভোকেট বিমল কুমার দাস বলেন, ‘ছাত্রজীবন থেকে আওয়ামী রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। স্বাধীনতার আগে সিরাজগঞ্জ সরকারি কলেজে ছাত্রলীগের মনোনীত প্যানেল থেকে জিএস নির্বাচিত হয়েছিলাম। স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় সিরাজগঞ্জের বেসরকারি সাব সেক্টর পলাশ ডাঙ্গা যুব শিবিরের যুদ্ধকালীন সহকারী কমান্ডার ছিলাম। দীর্ঘদিন জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছি। এবার সম্মেলনে সভাপতি প্রার্থী হয়ে দলীয় কাউন্সিলরদের কাছে যাচ্ছি। তারা যদি আমাকে যোগ্য মনে করেন অবশ্যই আমি সভাপতি নির্বাচিত হব। তবে দলীয় সভাপতি বঙ্গবন্ধুকন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা যে নির্দেশনা দেবেন আমি সেটাই মেনে নেব। ’

সম্মেলন নিয়ে সিরাজগঞ্জ জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক জিহাদ আল ইসলাম বলেন, ‘এবারের সম্মেলন নানা কারণে গুরুত্বপূর্ণ। এবারের সম্মেলন নিয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যেও সৃষ্টি হয়েছে বাড়তি আগ্রহ ও উত্তেজনা। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ও দলের সভাপতি জননেত্রী শেখ হাসিনার সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় আছি আমরা। দলের ত্যাগী, পরীক্ষিত, দরদী ও সৎ নেতৃত্বকেই তিনি সিরাজগঞ্জের নৌকার মাঝির দায়িত্ব দেবেন বলে আমাদের বিশ্বাস। দলীয় প্রধানের বিচক্ষণ সিদ্ধান্তে সিরাজগঞ্জের রাজনীতি আরও বেগবান ও শক্তিশালী হবে। ’

উল্লেখ্য, ২০১৫ সালের ৮ জানুয়ারি সিরাজগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সর্বশেষ ত্রি-বার্ষিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সম্মেলনে সভাপতি নির্বাচিত হন আব্দুল লতিফ বিশ্বাস এবং সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন আবু মোহাম্মদ গোলাম কিবরিয়া। ২০১৬ সালের ১৮ মার্চ চিকিৎসাধীন অবস্থায় গোলাম কিবরিয়ার মৃত্যু হলে সিরাজগঞ্জ-২ আসনের জাতীয় সংসদ সদস্য জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ন-সম্পাদক ডা. হাবিবে মিল্লাত মুন্নাকে ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব দেওয়া হয়।  

কিন্তু ২০২১ সালের ২২ নভেম্বর দলের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সভাপতি শেখ হাসিনার নির্দেশক্রমে সংগঠনের গঠনতন্ত্রের বিধি মোতাবেক সিরাজগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্দুল লতিফ বিশ্বাস এবং ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক হাবিবে মিল্লাত মুন্নাকে দলীয় পদ থেকে অব্যহতি দিয়ে অ্যাডভোকেট কে এম হোসেন আলী হাসানকে ভারপ্রাপ্ত সভাপতি এবং আব্দুস সামাদ তালুকদারকে ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক করা হয়।

বাংলাদেশ সময়: ১২২৩ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৭, ২০২২
নিউজ ডেস্ক

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।