ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

রাজনীতি

দেশে এখন হাইব্রিড রেজিমের ক্ষমতায় থাকার নির্বাচন হয়: ফখরুল

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫১৭ ঘণ্টা, মার্চ ২০, ২০২২
দেশে এখন হাইব্রিড রেজিমের ক্ষমতায় থাকার নির্বাচন হয়: ফখরুল

ঢাকা: দেশে এখন ‘হাইব্রিড রেজিমের ক্ষমতায় থাকার নির্বাচন’ হয় বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।  

তিনি বলেন, এখন নির্বাচনও হয় আবার জনগণ ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারে না।

এটা থেকে বেড়িয়ে আসতে হলে গণঅভ্যুত্থানের সৃষ্টি করতে হবে।

রোববার (২০মার্চ) দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাব মিলনায়তনে বিএনপির সাবেক মহাসচিব কেএম ওবায়দুর রহমানের ১৫তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে ‘কেএম ওবায়দুর রহমান স্মৃতি সংসদ’ আয়োজিত স্মরণসভায় তিনি এসব কথা বলেন।

বিএনপির মহাসচিব ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘আজকে বাংলাদেশের মানুষ একটা ভয়াবহ ফ্যাসিবাদের মধ্যে বাস করছে। মানুষের অধিকারগুলোকে সম্পূর্ণ ছিনিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। ভোটের অধিকার কেড়ে নেওয়া হয়েছে, বেঁচে থাকার অধিকার কেড়ে নেওয়া হয়েছে। প্রতিদিন নতুন নতুন আইন তৈরি করা হচ্ছে। ভিন্নমত প্রকাশ করার পুরো স্বাধীনতাকে খর্ব করে দেওয়া হয়েছে। গণতন্ত্রের লেবাস লাগিয়ে দিয়ে ভিন্ন মোড়কে একদলীয় শাসন ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করেছে। তারা নির্বাচনও করে, যে নির্বাচনকে বলা হচ্ছে হাইব্রিড রেজিমের ক্ষমতায় থাকার নির্বাচন। নির্বাচনও করবে আবার দেখা যাবে জনগণ সেই নির্বাচনে ভোটাধিকার থেকে বঞ্চিত হবে। ’

তিনি বলেন, ‘আজকে আমাদের সামনে কঠিন সময়। এই সময়ে গণতন্ত্রের নেত্রী, দেশনেত্রী খালেদা জিয়াকে সম্পূর্ণ মিথ্যা মামলায় জড়িয়ে অন্যায়ভাবে গৃহবন্দি করে রাখা হয়েছে। তিনি অত্যন্ত অসুস্থ তাকে চিকিৎসা করতে দেওয়া হচ্ছে না। আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান সাহেবকে মিথ্যা মামলায় সাজা দিয়ে বিদেশে নির্বাসিত করে রাখা হয়েছে। তাকে দেশে আসতে দেওয়া হচ্ছে না। আজকে আমাদের ৩৫ লাখ নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা। আমাদের শাহ মোয়াজ্জেম সাহেবের বিরুদ্ধে মামলা, মোশাররফ সাহেবের বিরুদ্ধেতো আছেই, এই ঘরের মধ্যে এমন কোনো মানুষ নেই যার বিরুদ্ধে মামলা নেই। এইযে একটা ভয়াবহ দমবন্ধ করা শ্বাসরুদ্ধকর পরিস্থিতি। আমরা কথা বলতে পারি না নিশ্বাস নিতে পারি না। এই পরিস্থিতি থেকে আমরা বেরিয়ে আসার জন্য চেষ্টা করছি, লড়াই করছি। আমরা প্রায় ১৪ বছর ধরে গণতন্ত্রকে ফিরিয়ে আনার জন্য চেষ্টা করছি। এই লড়াই তখনই সফল হবে যদি আমরা ঐক্যবদ্ধ হতে পারি। লড়াই তখনই সফল হবে যদি আমরা মানুষকে জাগিয়ে তুলতে পারি। লড়াই তখনই সফল হবে যদি মানুষকে জাগিয়ে তুলে রাস্তায় নিয়ে এসে একটি গণঅভ্যুত্থান সৃষ্টি করতে পারে। আমাদের সে দিকে এগুতে হবে। এই ভয়াবহ সরকার এই গণবিরোধী সরকার স্বাধীনতাবিরোধী সরকার রাষ্ট্রবিরোধী সরকার যদি আর কিছু দিন ক্ষমতায় রাখা হয় তাহলে এই দেশের যা কিছু আছে কিছুই থাকবে না। আসুন আমরা সবাই ঐক্যবদ্ধ হয়ে সেই গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের আন্দোলনকে সফল করি। ’

তিনি বলেন,  ওবায়দুর রহমান সাহেব-শাহ মোয়াজ্জেম হোসেন সাহেব ছিলেন অনলবর্ষী বক্তা। শাহ মোয়াজ্জেম হোসেন সাহেবের বয়স হয়ে গেছে তিনি ঘণ্টার পর ঘণ্টা বক্তৃতা করতে পারতেন। তার বক্তৃতার মধ্যে আগুন জ্বলে উঠত। একইভাবে ওবায়দুর রহমান সাহেবও সেইভাবে বক্তৃতা করতেন। উদার গণতান্ত্রিক রাজনীতির যে কয়জন সামনের সারিতে ছিলেন তার মধ্যে অবশ্যই কেএম ওবায়দুর রহমান এবং শাহ মোয়াজ্জেম হোসেন সাহেব ছিলেন। তাদের যুগটা ছিল অন্যরকম। তারা গণতন্ত্রের জন্য সংগ্রাম করেছেন এবং তাদের সংগ্রামের মূল্য ছিল অনেক বেশি।  আজকের সময়টা হচ্ছে সম্পূর্ণ ভিন্ন। তখনও সামরিক শাসন ছিল। কিন্তু সামরিক শাসন থাকলেও...  গতকাল সিরাজুল ইসলাম সাহেব একটা কথা বলেছেন যে, ব্রিটিশ আমলে আমরা খারাপ ছিলাম।  পাকিস্তান আমলে আমরা আরও খারাপ ছিলাম। আর এখন অনেক বেশি খারাপ আছি।  অর্থাৎ আমি যে কথা বলতে চাচ্ছি যে, পাকিস্তান আমলে সামরিক শাসন ছিল,  একনায়কতন্ত্র ছিল কিন্তু তার পরেও রাজনীতি যারা করতেন, সমাজের কথা যারা চিন্তা করতেন, সমাজকে বদলে দেওয়ার জন্য যারা কাজ করতেন, রাষ্ট্রে গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনার জন্য যারা কাজ করতেন তারা ন্যূনতম সম্মান মূল্যায়ন টুকু পেতেন। এখন সেটাও নেই।

তিনি বলেন,  কে এম ওবায়দুর রহমান-শাহ মোয়াজ্জেম সাহেবরা বড় সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। শেখ মুজিবুর রহমান যখন সমস্ত রাজনৈতিক দল বাতিল করে বাকশাল কায়েমের সিদ্ধান্ত নিলেন তখন যে কয়েকজন মানুষ গণতন্ত্রের প্রতি শ্রদ্ধা দেখিয়ে ভিন্ন মত পোষণ করে তারা ভিন্ন অবস্থান নিয়েছিলেন এই দুজনও তাদের মধ্যে ছিলেন।

প্রধানমন্ত্রীর কাছে অনুরোধ জানিয়ে অনুষ্ঠানের প্রধান বক্তা ও বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শাহ মোয়াজ্জেম হোসেন বলেন, আপনি নিজেকে প্রধানমন্ত্রী দাবি করেন ঠিক আছে, আপনি প্রধানমন্ত্রী। এই দেশে আরও একজন প্রধানমন্ত্রী ছিলেন খালেদা জিয়া, তিনি অসুস্থ আপনি জানেন। আপনি তাকে বাড়িতে প্যারোল দিয়ে রেখেছেন। কি হয় খালেদা জিয়াকে ছেড়ে দিলে? একটা উত্তম নজির সৃষ্টি হয়। আপনিও প্রধানমন্ত্রী তিনিও প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। তার কোনো অবদান নেই?  তার স্বামী জিয়াউর রহমানকে আপনারা বলেন, রাজাকার। এটা বলে আপনারা স্বাধীনতাকে অবমাননা করছেন।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেনের সভাপতিত্বে ও ওবায়দুর রহমান স্মৃতি সংসদের সাধারণ সম্পাদক শাহজাহান মিয়া সম্রাটের পরিচালনায় স্মরণসভায় আরও বক্তব্য দেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শাহ মোয়াজ্জেম হোসেন, ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির আহ্বায়ক ডাকসুর সাবেক ভিপি আমান উল্লাহ আমান, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির আহ্বায়ক বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুস সালাম, বিএনপির যুগ্ম-মহাসচিব ডাকসুর সাবেক জিএস খায়রুল কবির খোকন, বিএনপির ফরিদপুর বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ও কেএম ওবায়দুর রহমানের কন্যা শামা ওবায়েদ, বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য সাবেক ছাত্র নেতা নাজিম উদ্দিন আলম, সমাজকল্যাণ বিষয়ক সম্পাদক কামরুজ্জামান রতন, যুবদলের সভাপতি সাইফুল আলম নীরব, বিএনপির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক খন্দকার মাশুকুর রহমান মাশুক, সেলিমুজ্জামান সেলিম, সহ-গণশিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক আনিসুর রহমান তালুকদার খোকন, তাঁতী দলের আহ্বায়ক আবুল কালাম আজাদ, যুবদলের সহ-সভাপতি আলী আকবর চুন্নু, যুবদল উত্তরের আহ্বায়ক শফিকুল ইসলাম মিল্টন, মুক্তিযুদ্ধের প্রজন্ম নেতা সাইফুল ইসলাম প্রমুখ।

বাংলাদেশ সময়: ১৫১৬ ঘণ্টা, মার্চ ২০, ২০২২
এমএইচ/আরআইএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।