ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

রাজনীতি

কর্মীদের রোষ থেকে বাঁচতেই বিএনপি নেতাদের দুদকে মহড়া: কাদের

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫৩৪ ঘণ্টা, এপ্রিল ১২, ২০২২
কর্মীদের রোষ থেকে বাঁচতেই বিএনপি নেতাদের দুদকে মহড়া: কাদের ফাইল ছবি

ঢাকা: বিএনপি নেতারা দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) গিয়ে যে মহড়া দিয়েছেন তা নিজেদের দুর্নীতি ও ব্যর্থতা আড়ালের অপচেষ্টা মাত্র। কর্মী-সমর্থকদের রোষানল থেকে বাঁচতেই তারা এই নাটকীয়তার আশ্রয় নিচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।

মঙ্গলবার (১২ এপ্রিল) নিজ বাসভবনে ব্রিফিংকালে এ মন্তব্য করেন ওবায়দুল কাদের।

তিনি বলেন, বিএনপি’র কথিত আন্দোলন আর অভ্যুত্থানের রঙিন খোয়াব ভেঙে গেছে। তারা এখন জনগণের নজর ভিন্ন দিকে নিতে চায়। তাই কর্মী-সমর্থকদের রোষানল থেকে বাঁচতে তাদের নেতারা দুর্নীতির তথ্য দেওয়ার নামে নাটকীয়তার আশ্রয় নিচ্ছেন।

বিএনপি নেতাদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, অনেক তথ্যই সরকারের কাছে আছে। কে কোথায় সভা করছে, কাকে টাকা দিচ্ছে, এমনকি সরকারের বিরোধিতার নামে রাষ্ট্রবিরোধী কাজে উসকানির জন্য দুর্নীতিলব্ধ অর্থ বিনিয়োগ করা হচ্ছে। কারা কর ফাঁকি দিয়ে ব্যবসা করে, আবার দুর্নীতিবাজ নেতৃত্বের জন্য অবৈধ উপায়ে অর্থ প্রেরণ করছে, সব খবরই সরকারের কাছে আছে। এসব অপরাধীরা কেউই ছাড় পাবে না।

বিএনপি মহাসচিবের কাছে প্রশ্ন রেখে কাদের বলেন, নিজ দলের অপরাধী, দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে আপনাদের অবস্থান কী? সাহস থাকলে তাদের তালিকা দিন। বিদেশে বিলাসী জীবনের রসদ কোথা থেকে আসছে তার হিসাব জমা দিন। সর্ষের মধ্যে ভূত রেখে ভূত তাড়ানোর লোক দেখানো অপপ্রয়াস অপরাজনীতির ধারাবাহিকতা মাত্র।

তিনি আরো বলেন, যে দলের চেয়ারপারসন দুর্নীতির দায়ে দণ্ডপ্রাপ্ত, দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান দণ্ডপ্রাপ্ত পলাতক আসামি এবং দলীয় গঠনতন্ত্র থেকে যে দল দুর্নীতিবিরোধী ৭ ধারা অপসারণ করে, যারা আত্মস্বীকৃত দুর্নীতিবাজ দল হিসেবে নিজেদের পরিচিত করেছে, যাদের শাসনামলে দেশকে পরপর ৫ বার দুর্নীতিতে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হওয়ার কলঙ্কতিলক পরতে হয়েছিল, সেই আপাদমস্তক দুর্নীতিগ্রস্ত বিএনপি যখন দুর্নীতি নিয়ে কথা বলে তখন মানুষের হাসি পায়। আত্মস্বীকৃত দুর্নীতিবাজ দলের এমন মুখরোচক কথার নৈতিক মানদণ্ড নিয়েও মানুষ পরিহাস করে।

ওবায়দুল কাদের বিভিন্ন গণমাধ্যমের প্রতিবেদনে প্রকাশিত তথ্য তুলে ধরে বলেন, তারেক রহমানের পাচার করা ১২ কোটি টাকা আটক করেছিল যুক্তরাষ্ট্রের ডিপার্টমেন্ট অব জাস্টিস। আওয়ামী লীগ সরকার ২০১২ সালে সে টাকা দেশে ফেরত আনে। বাংলাদেশ কোর্টের রায়ের প্রেক্ষিতে ২০১৩ সালে সিঙ্গাপুর সরকার পাচার করা ৮ কোটি টাকা ফেরত দেয়। তারেক রহমান ও তার ব্যবসায়িক পার্টনার গিয়াসউদ্দিন আল মামুন সিটিএনএ ব্যাংকে ২১ কোটি টাকা পাচার করে। এফবিআই এ ব্যাপারে তদন্ত করেছে এবং বাংলাদেশের আদালতে সাক্ষ্য দিয়েছে। শুধু তাই নয়, লন্ডনের একটি ব্যাংকে তার হিসাবে প্রায় ৬ কোটি টাকা পাওয়া যায়।

তিনি বলেন, বেলজিয়ামে ৭৫০ মিলিয়ন ডলার, মালয়েশিয়ায় ২৫০ মিলিয়ন ডলার পাচার করেছেন, দুবাইয়ের এমিরিটাস হিলস-এ স্প্রিং - ১৪ নামের কয়েক মিলিয়ন ডলার মূল্যের বাড়ির মালিক হয়েছিল জিয়া পরিবার। ভাঙা সুটকেসের গল্প ততদিনে লঞ্চ, টেক্সটাইল মিল, বিদেশে বাড়ি আর ব্যাংক ব্যালেন্সের নিচে চাপা পড়ে গেছে। আর তারাই এখন দুর্নীতির বিরুদ্ধে বড় বড় কথা বলে! দেশবাসী জানে অনিয়ম ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে শেখ হাসিনা জিরো টলারেন্স নীতিতে অটল। শুদ্ধি অভিযানের মাধ্যমে জনগণ এর প্রমাণ ইতিমধ্যে দেখেছে।

তিনি বলেন, যে যত বড় নেতাই হোক, অনিয়মের অভিযোগ পেলে কাউকে ছাড় দেওয়া হয়নি। সরকারি দলের অনেক নেতা, এমপি এমনকি মন্ত্রী পর্যন্ত ছাড় পায়নি। দুদক স্বাধীনভাবে কাজ করছে। সরকারি দলের বিরুদ্ধেও দুদকের কাজ করতে কোনো বাধা ছিল না এবং এখনো নেই। বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যানসহ তাদের অনেক নেতার বিরুদ্ধে দুদকে যে তথ্য বা অভিযোগ আছে সে ব্যাপারেও দুদক তদন্ত করে ব্যবস্থা নেবে বলে আশা করি।

ওবায়দুল কাদের বিএনপির চেয়ারপারসনের বিরুদ্ধে অন্য যে অভিযোগ আছে সেগুলোরও তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হোক বলে জানান।

সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী বলেন, আজ যারা বড় বড় কথা বলছেন, লোক দেখানো নাটক করছেন, তাদের শাসনামলে নিজ দলের এমপি,মন্ত্রী কিংবা দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের একটি প্রমাণ তারা দেখাতে পারবেন না। বিএনপির নীতি ছিল দুর্নীতি তোষণ আর দলীয়ভাবেই করা দুর্নীতিবাজদের পৃষ্ঠপোষকতা। বিএনপির শাসনামল আর দুর্নীতি সমর্থক হয়ে গিয়েছিল।

বিএনপির বিরুদ্ধে জনগণের সবচেয়ে বড় অভিযোগ দুর্নীতি। সাহস থাকলে আপনাদের গঠনতন্ত্রে দুর্নীতি বিরোধী ৭ ধারা ফিরিয়ে আনুন। তাহলে বোঝা যাবে আপনারা দুর্নীতির বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছেন। একদিকে দুর্নীতিকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিয়ে, আবার অন্যদিকে কল্পিত অভিযোগ করাকে জনগণ নৈতিকতা বিরোধী বলেই মনে করে।

বাংলা‌দেশ সময়: ১৫৩৪ ঘণ্টা, এপ্রিল ১২, ২০২২
এসকে/এনএসআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।