ঢাকা, শুক্রবার, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৯ নভেম্বর ২০২৪, ২৭ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

রাজনীতি

ঈদ তো হলো, বিএনপির আন্দোলন কবে!

মহসিন হোসেন, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১০৯ ঘণ্টা, মে ৯, ২০২২
ঈদ তো হলো, বিএনপির আন্দোলন কবে!

ঢাকা: জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি সরকারের বাইরে আছে প্রায় ১৫ বছর। এই সময়ের মধ্যে বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকারের বিরুদ্ধে নানা ইস্যুতে আন্দোলন সংগ্রামে থাকলেও কোনো সুফল পায়নি দলটি।

২০১৪ ও ২০১৮ সালের নির্বাচনী কৌশলে পরাজিত হয়েছে। এরই মধ্যে ঈদের পরে আন্দোলন হবে বলে দলের অনেকে হুমকিও দিয়েছেন। তবে ঈদের পরে কবে আন্দোলন হবে সে বিষয়ে কেউ কিছু বলতে পারছেন না। তাদের বক্তব্য আন্দোলন চলমান। কখন চূড়ান্ত পর্যায়ে যাবে সেটা সময়ই বলে দেবে।  

২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি দুর্নীতির মামলায় সাজাপ্রাপ্ত হয়ে কারাগারে যান খালেদা জিয়া। এরপর থেকে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হিসেবে দল চালাচ্ছেন তারেক রহমান। নিয়মিত স্থায়ী কমিটির সঙ্গে ভারচ্যুয়াল বৈঠক করেন তিনি। একইসঙ্গে দলের সকল পর্যায়ের নেতাকর্মীদের সঙ্গে স্কাইপি বৈঠক ও ফোনে কথা বলেই সিদ্ধান্ত নেন।

এরই মধ্যে বিএনপি, যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল, ছাত্রদলসহ সবগুলো অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের বিভিন্ন পর্যায়ের কমিটি গঠন করা হয়েছে। দলকে অনেকটা সংগঠিতও করা হয়েছে। এখন সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন কর্মসূচি দিলে সবাই মাঠে নামবে এমনই বলছেন তৃণমুলের নেতাকর্মীরা।

এদিকে ২০দলীয় জোট ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা দিয়ে বিলুপ্ত করা না হলেও অনেকটা নিষ্ক্রিয়। এ অবস্থায় বৃহত্তর জাতীয় ঐক্যের মাধ্যমে সরকার পতনের আন্দোলন করতে চায় বিএনপি। এ অবস্থায় জোটগত নাকি যুগপৎ আন্দোলন হবে এমন প্রশ্নের জবাবে মাহমুদুর রহমান মান্না বাংলানিউজকে বলেন, জোটগতভাবে হোক আর যুগপৎ হোক, আন্দোলন হবেই। আমরা সরকার পতন আন্দোলনের দিকে যাচ্ছি। তবে দিনক্ষণ ঠিক করে কখনও আন্দোলন হয় না। আমরা চাই আজই শুরু হোক।  

সূত্র জানায়, আন্দোলনের মূল কেন্দ্রবিন্দু রাজধানী ঢাকা ধরে সাজানো হচ্ছে বিভিন্ন পরিকল্পনা। পাশাপাশি দলকে গতিশীল করতে মিডিয়া সেল, প্রযুক্তি ও গবেষণা সেল, প্রচার সেল, আইনি সহায়তা সেল গঠন করা হয়েছে। যেকোনো সময় যেকোনো প্রয়োজনে রাজপথে নামার জন্য তৃণমূল বিএনপির একটি বড় অংশকে প্রস্তুত রাখতে প্রতিনিয়ত তাদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন দলের হাইকমান্ড। ঝুঁকি যত বড়ই হোক, দল তার পাশে থাকবে- এমন মনোভাব গড়ে তোলা হচ্ছে প্রতিটি নেতাকর্মীর মধ্যে। এ লক্ষ্যে মহানগর বিএনপির কমিটি পুনর্গঠন চলছে। প্রতিটি ওয়ার্ড ও থানায় নতুন করে কমিটি করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে মহানগর উত্তরে ছয় শতাধিক ইউনিট কমিটি করা হয়েছে।  সারাদেশের ৮০টি সাংগঠনিক জেলা কমিটিও পুনর্গঠন করা হচ্ছে। অধিকাংশ জেলায় নতুন কমিটি দেওয়া হয়েছে।

জানা গেছে, শিগগিরই রাজপথে দৃশ্যমান কর্মসূচিতে ফেরার জন্য দলের নেতাকর্মীদের প্রতি এক ধরনের বার্তা রয়েছে। এসবের পাশাপাশি সরকারবিরোধী বৃহৎ প্লাটফর্ম তৈরির কাজও অনেকটা এগিয়ে আনা হয়েছে। এই প্লাটফর্মে ডান-বাম সব মতাদর্শকে এক কাতারে, এক মঞ্চে নিয়ে আসা হচ্ছে। প্রাথমিকভাবে প্রায় সব রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনা করা হয়েছে। ঈদের ছুটি কাটিয়ে ২/১ দিনের মধ্যে নতুন করে আলোচনা শুরু হবে।

জানতে চাইলে স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বাংলানিউজকে বলেন, এখনতো ঈদের ছুটির মধ্যে আছি। ছুটিটা কাটাই তারপরে বলা যাবে। বিএনপির আন্দোলন কবে শুরু হবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, কর্মসূচির বিষয়ে মহাসচিব সাহেব জানাবেন। আর আমার ব্যক্তিগত বক্তব্য হলো-মুভমেন্টতো হবেই, হতেই হবে। মুভমেন্ট ছাড়াতো কোনো পথ নেই। তবে কবে কখন হবে সেটা এখন বলা যাচ্ছে না। আন্দোলন সংগ্রামেরতো কোনো বিকল্প নেই। এটাকে জোরদার করার জন্য নানা প্রক্রিয়ায় কাজ চলছে। দেখা যাক কী হয়।

‘বিএনপি গত ১৩বছরে ২৬বার আন্দোলনের ঘোষণা দিয়েও কিছু করতে পারেনি’। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের এই বক্তব্যের বিষয়ে নজরুল ইসলাম বলেন, ওনাকে কেউ জিজ্ঞাসা করে না কেন যে ওনারাতো ২১ বছর পরে ক্ষমতায় এসেছিলেন। কাজেই একুশের আগে অন্যের সমালোচনা করার যোগ্যতা কি তার আছে? তিনি বলেন, যারা ক্ষমতা হারানোর পরে আবার ক্ষমতায় আসতে ২১ বছর লেগেছে তাদেরতো আমাদের সমালোচনা করার এখনও যোগ্যতা হয়নি।

বিএনপির যুগ্ম-মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল বাংলানিউজকে বলেন, জাতীয় পর্যায়ের যে ঘোষণা নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন, সংসদ বাতিল, পরবর্তীতে জাতীয় সরকার এ প্রসঙ্গে আমাদের সমমনা যে রাজনৈতিক দলগুলো যারা গণতন্ত্রের লড়াইয়ে আছেন তাদের সঙ্গে আলাপ আলোচনা একটা পর্যায়ে এসেছে। যেটা আগামী ২/১ দিনের মধ্যে শুরু হবে। এই আলোচনা শেষ হলেই আপনাদের মাধ্যমে জাতিকে পরবর্তী কর্মসূচি জানানো হবে।

মন্ত্রীরা আপনাদের আন্দোলন নিয়ে নানা রকমের মন্তব্য করছেন। ১৩ বছরে আপনারা কোনো আন্দোলন করতে পারেননি। জবাবে আলাল বলেন, তারা ঠিকই বলেছেন বিএনপি কিছু করতে পারেনি। তবে আওয়ামী লীগ কিন্তু করতে পেরেছে। কারণ গত ১৩বছরে আওয়ামী লীগ নিজেরা মারামারি করে কমপক্ষে ১৩০জন মারা গেছে। সেটা তারা সফলভাবে করতে পেরেছে। ওখানেতো বিএনপির প্রয়োজন হয়নি। আগে তারা নিজেদের ঘরের আগুন সামাল দিক, তারপরে যেন বিএনপির দিকে খেয়াল করুক।

তিনি বলেন, আন্দোলন শুরু হলে আওয়ামী লীগের বহুলোক নিজেদের পরিচয় গোপন রেখে বিএনপির মিছিলে যোগ দেবেন। কারণ তাদের নেতাদের কর্তৃক তারা অনেকে অত্যাচারিত হচ্ছেন। দিন তারিখ দিয়ে আন্দোলন হয় না জানিয়ে তিনি বলেন, তবে কর্মসূচি আসবে, আন্দোলন খুব শিগগিরই হবে। ধাপে ধাপে আন্দোলন হবে। এক পর্যায়ে পরিস্থিতি কোন দিকে রূপ নেবে সেটা তখন বোঝা যাবে। সরকার সহনশীল থাকে না আগের মতো উগ্র আচরণ করে সেটার ওপরেও আন্দোলন নির্ভর করবে।

বাংলাদেশ জাতীয় দলের চেয়ারম্যান ও ২০দলীয় জোটের নেতা অ্যাডভোকেট সৈয়দ এহসানুল হুদা বাংলানিউজকে বলেন, আমি মনে করি আন্দোলন চলমান আছে। ঈদের আগে বা পরে বিবেচ্য বিষয় না। আমরা বৃহত্তর ঐক্য প্রক্রিয়া বাস্তবায়নের মধ্যে আছি। সেখানে বেশ অগ্রগতি হয়েছে। এক মঞ্চে না হলেও দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি সরকার পতন আন্দোলন ইস্যুতে সবাই একমত। আমরা একদফা কর্মসূচি নিয়ে একটা যুগপৎ আন্দোলনের দিকে ধাবিত হচ্ছি।

একদফা কর্মসূচি বলতে কী বোঝাতে চেয়েছেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, সরকার পতনের কর্মসূচি। আমি মনে করি সরকার পতন মানেই নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকার প্রতিষ্ঠা এবং অবাধ ও গ্রহণযোগ্য একটা নির্বাচন। সেই আন্দোলন কবে নাগাদ হবে জবাবে এহসানুল হুদা বলেন, সামনে বর্ষাকাল সেজন্য কিছুটা বাধাগ্রস্ত হতে পারে। তবে আন্দোলন শুরুর প্রক্রিয়া চলছে।

বাংলাদেশ সময়: ১১০৬ ঘণ্টা, মে ০৯, ২০২২
এমএইচ/এসআইএস 
 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।